![]() রোহিঙ্গা-কেএনএফ সমস্যা : কড়িডোর : সঙ্কটের আবর্তে বাংলাদেশ
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া:
|
![]() মিয়ানমারের রাখাইন বা ওই অঞ্চলে এমনকি বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলেরও কিছু জায়গা নিয়ে একটি আলাদা খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গড়ে তোলার কথা অনেক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথাও শোনা যায়। কিন্তু রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র, এমনকি তাদের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে কোনো আলোচনা নাই একবারেই। আর থাকলেও তাতে পশ্চিমাদের সমর্থনের কথা শোনা যায় না। ০২. বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে এবং পুরো রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে, মানাং দ্বীপ এবং গুরুত্বপূর্ণ চকপিউ বন্দরের নিয়ন্ত্রণ এখনো জান্তার হাতে। মিয়ানমারের নৌবাহিনীও সেসব এলাকায় তাদের অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছে। চলমান তীব্র সংঘর্ষের কারণে রাখাইনের জনগণের জীবন বিপর্যস্ত। এ ভোগান্তি আরও বাড়াতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনের সরবরাহ পথ বন্ধ করে রেখেছে। রাখাইনের জনগণ তীব্র খাদ্য ও ওষুধ সংকটে ভুগছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারাও নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে দেশের অভ্যন্তরে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে আরসা, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামী মাহাজ, জমিওয়াতুল মুজাহিদানসহ আরো কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠনের অবস্থান রয়েছে বলে দেশের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট প্রমান রয়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় নাগরিকগন নিরাপত্তার হুমকিতে রয়েছে। মাদক, অস্ত্র চোরাচালান, মানবপাচার, ডাকাতি, ছিনতাইসহ সব ধরনের অপরাধে রোহিঙ্গারা জড়িত। এ ছাড়া পান থেকে চুন খসলেই তারা সংঘবদ্ধ হয়ে স্থানীয় লোকজনের ওপর হামলা চালায়। তাদের বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ করলেও কোনো কাজ হয় না। অপরাধ করার পরেও পার পেয়ে যাওয়ার কারণে দিন দিন তারা নিয়ন্ত্রনহীন আগ্রাসী হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে স্থানীয় লোকজনের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে বলে অনেকেই মনে করেন। পালিয়ে আশা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ আজ মহাবিপদে পড়েছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ঘোদের উপর বিষ ফোর। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়, রোহিঙ্গা সমস্যার সাথে বাংলাদেশ ১৯৭৮ সাল থেকেই জড়িয়ে পড়েছে। ২০১৭ সালের ঘটনার আগে থেকে মিয়ানমারের প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা সম্পূর্ণ অবৈধ, নিয়ন্ত্রণহীন ও হিসাবহীনভাবে কক্সবাজারে অবস্থান করছিল। তখন এই রোহিঙ্গা শিবিরের মধ্যে কী হতো তার খবর কেউ হয়তো খবরই রাখত না। তবে তখনো পত্রিকায় অনেক সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে এবং তার মাধ্যমে যা জানা গেছে, সেটি কিছুতেই বাংলাদেশের জন্য শুভ কিছূ ছিল না। ২০১৭ সালের পর সবার টনক নড়লেও এর আগ পর্যন্ত এটিকে কেউ গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করতো না। কিন্তু আজকের বাস্তবতা প্রমাণ হয়েছে ২০১৭ সালের পূর্বে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ যতটা সহজ ছিল, এখন সেটা ঠিক ততটাই কঠিন হয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেতে পারে। যদিও এই ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর কিছু চাপ প্রয়োগ করা হলেও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন ও নৃশংসতা বন্ধ হয়নি। সম্ভবত এখানে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতি এবং সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের ধর্মীয় পরিচয় অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। ০৩. ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি ফিরে এসিছিল বা পাহাড় যে একবারে শান্ত হয়ে গিয়েছিল তা বলা যাবে না। পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সাথে ইউপিডিএফসহ নানা সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে মাঝে মাঝেই এই জনপদ রক্তাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছিল। এর মধ্যে প্রকাশ্যে জনপদে কেএনএফের উপস্থিতি জানান দেওয়া কোন স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিনের এমন বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে পার্বত্য অঞ্চলের জনজীবনে নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি এসব সংগঠন দেশের সার্বভৌমত্বের জন্যও চরম হুমকি স্বরুপ। পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কুকি-চিন আসলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। পাহাড়ি-বাঙালিসহ সকলের মনে প্রশ্ন, সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ দেশে ব্যাংক লুটসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হবার সাহস পায় কোথায় ? এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ থেকে পার্বত্যাঞ্চলকে পৃথক করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই কুকি-চিন সহ সকল সন্ত্রাসী সংগঠন ঐক্যবদ্ধ। পার্বত্যঅঞ্চল থেকে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সেনা ক্যাম্প সরিয়ে ফেলার সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই আজ তারা দুঃসাহস দেখাচ্ছে ? এ কারণে তাদের সঙ্গে কোন ধরনের আপোষ হওয়া উচিত নয়। যারা দেশবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত তারাই হুমকি। বহিঃবিশ্বের কোন কোন দেশ তাদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে। তাদের নির্মূল করতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। অভিযোগ রয়েছে, কুকি চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের কতিপয় রাজনৈতিক নেতার সখ্যতা রয়েছে। এছাড়া একাধিক সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও নাকি তাদের গভীর গসাজস রয়েছে। কারণ তারা নিয়মিত কুকি চিনের কাছ থেকে চাঁদাবাজির টাকার ভাগ পান। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কুকি চিনকে সুযোগ দেওয়া উচিত হয়নি। সুযোগ নিয়ে তারা গহীন অরণ্যে বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প করেছে। এখন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা আইন শৃংখলা বাহিনীর জন্য কষ্টদায়ক হবে। কারণ তারা যেখানে আস্থানা গেড়েছে, সেখানে যাতায়াত করা কঠিন। তারা সব চেনে। ওই সব এলাকায় যেতে এক দুই দিন লেগে যায়। আগে পুরো পাহাড় নিয়ন্ত্রণে ছিল। কুকি চিনের সঙ্গে জেএসএস (মূল), জেএসএস (সংস্কার) ইউপিডিএফ (মূল), ইউপিডিএফ (সংস্কার)ও ইন্ধন যোগায়। শুধু বাংলাদেশই নয়, দীর্ঘদিন ধরেই অশান্তির আগুনে পুড়ছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের মনিপুর অঙ্গরাজ্য। সেখানে স্থানীয় প্রশাসন ও ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে স্থানীয় কুকি, নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো। বান্দরবানের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের চিন প্রদেশেও সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে আসছে স্থানীয় কুকি চিন জনগোষ্ঠী। এ ছাড়া ভারতের মিজোরাম, নাগাল্যান্ডেও সংখ্যাগরিষ্ঠ এ জনগোষ্ঠী। কুকি চিন নামধারী সশস্ত্র গোষ্ঠীর এসব বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে পার্বত্য অঞ্চলের জনজীবনে নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি এসব সংগঠন দেশের সার্বভৌমত্বের জন্যও হুমকি বলেই মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া কুকি চিনের পেছনে আন্তর্জাতিক কোনো মদদ রয়েছে কি না, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ফের এ অঞ্চলের আইনশৃ্ঙ্খলা পরিস্থিতির দায়িত্ব সামরিক বাহিনীর ওপর ন্যস্ত করারও পরামর্শ তাদের। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর ওই অঞ্চলে সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম বর্তমানে অনেকটাই সীমিত। ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মূলত দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ-বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এ অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফের সামরিক বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া উচিত বলেই মনে হচ্ছে। তিন দেশের সীমান্তের মতো স্পর্শকাতর অঞ্চল হিসেবে বান্দরবানের এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। শুধু পুলিশের ওপর নির্ভর করে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এখানে ফের সেনাবাহিনীকে দায়িত্বে আনতে হবে। এ ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে সেবামূলক কর্মকাণ্ডের আড়ালে বিভিন্ন বিদেশি সংগঠনের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে নজরদারি প্রয়োজন। এ অঞ্চলের কুকি জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত জনগোষ্ঠীর লোকজন মূলত খ্রিষ্টান। ভারত ও মিয়ানমারের কুকি চিন জনগোষ্ঠীও খ্রিষ্টান। এ অঞ্চলের খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে বিভিন্ন এনজিওর কার্যক্রম ও তাদের উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ যার সংক্ষিপ্ত নাম- কেএনএফ। দেশের পার্বত্য অঞ্চলে হঠাৎ মাথাচাড়া দেওয়া সংগঠনটি এখন ভয়ংকররূপে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করছে বলেই এই ধরনের ডাকাতির সাথে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন করার নীলনকশাও বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। শুরুর দিকে শান্তিপ্রিয় সংগঠন হিসেবে কাজ করলেও বর্তমানে বিষধর সাপের মতো ফণা তুলতে শুরু করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী আঞ্চলিক এ সংগঠন। ইতোমধ্যেই কেএনএফ বানিয়েছে নিজস্ব পতাকা। তৈরি করেছে মনগড়া মানচিত্র। আর এসব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তথা আলাদা রাজ্য বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গড়েছে প্রশিক্ষিত নিজস্ব ‘বাহিনী’। যাদেরকে দেওয়া হয়েছে সামরিক বাহিনীর আদলে কমান্ডো প্রশিক্ষণ। সরকারের উচিত হবে দেশের স্বাধিনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে দ্রুততম সময়ে এসকল সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা এবং পার্বত্য অঞ্চলে দ্রুত সেনাবাহিনীর ক্যাম্প বৃদ্ধি করা। ০৪. এই সকল সমস্যা মধ্যেই যখন মায়ানমারকে মানবিক কড়িডোর দেবার আলোচনা উঠে তখন দেশবাসী আতংকিত হয়ে উঠে। মনে রাখতে হবে আরাকানকে করিডোর দেওয়া বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্থিতিশীলতা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আত্মঘাতি’। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মানবিক করিডোরের প্রস্তাব জাতিসংঘ থেকে আসুক অথবা আমেরিকা থেকে আসুক, তা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। ইতিহাস বলে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কঙ্গো অথবা সিরিয়া, কোথাও মানবিক করিডোরের বাস্তবায়ন সফল হয় নাই। ইউক্রেন-রাশিয়াতে জাতিসংঘ প্রস্তাবিত মানবিক করিডোরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। মায়ানমারের সামরিক জান্তাদের পাশ কাটিয়ে আরাকানের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে রাখাইনে মানবিক করিডোর দিলে তাতে বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে বাধ্য এবং তা হবে বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু হয়ে গোলামির নবতর সংস্করণ। যা খুবই বিপজ্জনক এবং দেশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি। এই ধরনের সিদ্ধান্ত শান্তির সহাবস্থান ও জোট নিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থী। বস্তুত করিডোরের মাধ্যমে আরাকান আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে নিরাপত্তার কৌশলগত ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদকে ব্যবহারের সুযোগ দিতে চায়। এর ফলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দীতায় জটিলতার মধ্যে জড়িয়ে পঢ়বে। বিশ্বের খুব কম মানবিক করিডরই নিরাপত্তাঝুঁকির বাইরে থেকেছে। এ ধরনের করিডর চালু হলে সেই অঞ্চলে থাকা বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ অপরাধীরা সেটাকে নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহারের বহু নজির রয়েছে। বাংলাদেশ হয়ে যে ত্রাণ যাবে, তা রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকদের কাছে পৌঁছাবে, নাকি আরাকান আর্মি সেগুলোকে দখলে নেবে, তার নিশ্চয়তা জাতিসংঘ কিভাবে দিবে, তা পরিস্কার নয়। মিয়ানমারের এ অঞ্চলটি মাদক, অস্ত্র এবং নারী ও শিশু পাচার কেন্দ্র্র হিসেবে পরিচিত। করিডোর দিলে মাদক বা অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশের শঙ্কা থাকবে। এ ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে বর্তমানে কোনো স্বীকৃত প্রশাসন নেই। ফলে সেখানকার অস্বীকৃতদের সঙ্গে কোনো ধরনের দরকষাকষির আলাদা ঝুঁকি রয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তো রয়েছেই। বিগত স্বৈরাচার সরকার একক সিদ্ধান্তে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে এবং বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। যার কারণে নিরাপত্তাসহ সামাজিক নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে আরও ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা শোনা যাচ্ছে। এতে করে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে সকলেই আশঙ্কা করছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আর কোন সমস্যা সৃষ্টি করা উচিত হবে না। আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না’ বাংলাদেশকে কোন যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না। আমাদের দেশে এস কেউ সমস্যা সৃষ্টি করুক সেটিও আমাদের কাম্য হতে পারে না। একে তো আমাদের দেশ রোহিঙ্গা নিয়ে বড় সমস্যায় রয়েছে, তার ওপর প্যাসেজ দেওয়া নিয়ে যাতে সমস্যার সৃষ্টি না হয় এ জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। ‘মানবিক করিডোর’ পেতে শুধু বাংলাদেশের ওপর নির্ভর না করে প্রতিবেশী অন্য দেশেও চেষ্টা করা উচিত জাতিসংঘের। ০৫. আমাদের দেশের স্বার্থকে আগে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য যেসব বন্ধুরাষ্ট্র আমাদের সহায়তা দিতে চায়, তাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে যেতে হবে। প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের দেশের জন্য কী গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ আট বছর ধরে রোহিঙ্গাদের এ বোঝা বহন করে আসছে, এ সংকট সমাধানে তেমন কোনো সহায়তা এত বছর ধরে বাংলাদেশ পায়নি এবং একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারেনি। বর্তমান সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। কিন্তু, কতটা সফল হবে তা সময়ই বরৈ দিবে। অবস্থা দৃষ্টে সফলতা নিয়ে শংসয় রয়েছে। মনে রাখতে হবে রোহিঙ্গা সমস্যা, পার্বত্য চট্টগ্রামের কেএনএফ সমস্যা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকট। এ সংকট সমাধানে যারা বাংলাদেশকে কঠোড় পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের স্বার্থের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বাংলাদেশ তার নিজস্ব স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বাংলাদেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য সব পক্ষ একত্রে দেশের স্বার্থসংরক্ষণে সচেষ্ট হবে বলেই জনগন বিশ্বাস করে। বাংলাদেশকে ভাবতে হবে দেশের জন্য ভালো কোনটি এবং তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো রাখাইনে তাদের স্বার্থসংরক্ষণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশকেও নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় এবং সংকট সমাধানে নিরাপত্তা নিশ্চিতপূর্বক কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া: কলাম লেখক, রাজনীতিক কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক |