![]() দশম প্রয়ান দিবসে গান, কবিতা, স্মৃতিকথায়:সব্যসাচী লেখক কবি আশীষ কুমারকে স্মরণ
দশম প্রয়াণ দিবসে সব্যসাচী কবি আশীষ কুমারকে শ্রদ্ধায় স্মরণ
খালেদ হোসেন টাপু, রামু::
|
![]() স্মরণ অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রামু পাবলিক লাইব্রেরীর সভাপতি মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, কবি আশীষ কুমার বহু প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তার বই পড়ে, কবির সুহৃদদের কথা শুনে জেনেছি। একজন কবি জানতে পড়তে হবে তাঁর বই। বই পড়া চর্চায় গুণী মানুষগুলোর কথা আমরা জানবো। বই পড়ে মনের আবেগ ভালোবাসাকে অমলিন রাখতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে রুচির দূর্ভিক্ষ চলছে। সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে ধারণ করতে হবে। আবেগ দিয়ে, গুণগত তাৎপর্য দিয়ে চর্চার মধ্যে আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের হৃদয়ে খোরাক আছে। কিন্তু আর্থিক প্রাচুর্য্য নেই। সংস্কৃতি চর্চায় আমাদের জ্ঞান আস্বাদন করতে হবে। গুণীর কদর করতে হবে। তা না হলে গুণী জন্মাবে না। দুঃখজনক হলেও সত্যিই যে, বর্তমানে গুণীর কদর কমে গেছে। যারা সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় অবদান রেখেছেন এবং রাখছেন, তাদের সম্মান জানাতে হবে। গুণের কদর করতে হবে। স্মরণ অনুষ্ঠানের কবি আশীষ কুমারের সুহৃদ জনরা বলেন, কবি আশীষ কুমার। তাঁর পরিচিতি শুধুই কবি, ছড়াকার নয়। তিনি জীবনব্যাপী লেখালেখি ও সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চাতে সাধনা করে গেছেন। তিনি লিখেছেন কবিতা, ছড়া, ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান, প্রবন্ধ। তিনি লিখেছেন কিশোর কবিতা, শিশুতোষ ছড়া, সমাজ পরিবর্তনের নাটক। যখন কম্পিউটারের প্রচলন ছিলো না, সে সময়ে তাঁর হাতে লেখা 'মানপত্র' ছিলো অতিথিকে সম্মান জানানোর অনন্য মাধ্যম। দশ হাজারের বেশি তিনি মানপত্র লিখেছেন। এ পরিচিতির ব্যাপ্তিকে তিনি আরও ছাড়িয়ে গেছে। তিনি একজন নাট্যাভিনেতা, চিত্রশিল্পী ও কৃতি ফুটবলার ছিলেন। নব্বই স্বৈরচার আন্দোলনে কবি আশীষ কুমারের নাটক মর শালা পাবলিক', 'এ লাশ ঢাকা আসবেই' তারুণ্যকে উজ্জীবিত করেছে। তাঁর নাটক কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে রাজধানী ঢাকাতেও মঞ্চায়িত হয়ে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ সময়ে কবি আশীষ কুমারের হাতের লেখা 'পোস্টার' বাংলার তরুণদের উজ্জীবিত করেছে। তাঁর সুন্দর হাতে লেখা পোস্টার মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। চিন্তন সম্পাদক খালেদ শহীদের অনুষ্ঠান সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন, নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সমস্বর' সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আলম, জেলা শিক্ষা অফিসার (অব:) ছড়াকার মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, রামু পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল হক, বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী বিভাস সেনগুপ্ত জিগমী, কক্সবাজার বেতারের সংগীত প্রযোজক শিল্পী বশিরুল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী (অব:) মঞ্জুর হাছান ভূঁইয়া, রামু সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল হক, কবি-অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া, সাংবাদিক সুনীল বড়ুয়া, সংস্কৃতি কর্মী পুলক বড়ুয়া, দীপক বড়ুয়া, কবি তাপস মল্লিক, কবি ও গবেষক কালাম আজাদ, রামু প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক সোয়েব সাঈদ, সমস্বর' সাধারণ সম্পাদক মিজানুল হক, সাংবাদিক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, শিক্ষক জনি বড়ুয়া, সংস্কৃতি কর্মী সুফল বড়ুয়া। কবি আশীষ কুমারকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন, কবি পত্নী ডলি বড়ুয়া, কবি পুত্র ইমন বড়ুয়া ও কবি কন্যা বিভা বড়ুয়া। পরিবারের পক্ষ থেকে আরও কথা বলেন এবং আয়োজন নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, কবি আশীষ কুমারের চাচাতো ভাই ক্রীড়াবিদ সুবীর বড়ুয়া বুলু, কবির ভাগ্নে জ্যোতিসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কিশোর বড়ুয়া ও ভাইপো শিক্ষক ও সংস্কৃতি কর্মী সংগীত বড়ুয়া। উপস্থিত ছিলেন, কবির জামাতা শুভন বড়ুয়া শুভ সহ কবি কন্যার দুই মেয়ে। স্মরণ অনুষ্ঠানে কবি আশীষ কুমারের কাব্যগ্রন্থের ‘স্বাধীনতা’ কবিতা আবৃত্তি করেন নাট্যজন মাস্টার মো. আলম ‘স্বাধীনতা’, 'পিপাসা' কবিতা আবৃত্তি করেন শিক্ষক ও ছড়াকার মো. নাছির উদ্দিন। কবি আশীষ কুমারের কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতা আবৃত্তি করেন, সাংবাদিক সুনীল বড়ুয়া, কবি তাপস মল্লিক, আবৃত্তিকার দীপক বড়ুয়া ও কবি কন্যা বিভা বড়ুয়া। কবি আশীষ কুমারের লেখা এ গান ‘তোঁয়ারা জাননি ওভাই, রামুরে রম্যভূমি হয় কিয়রল্লাই, রামু বড় সুন্দর জাগা, এডে হন ধর্ম-বর্ণ জাত ভেদাভেদ নাই, রামুরে রম্যভূমি হয় এতল্লাই’ পরিবেশন করেন শিল্পী মিজানুল হক ও সংগীত বড়ুয়া। 'ও নদী বাঁকখালীরে ছিলাম যাযাবর, কত সুখের স্বপন দেইখা বাঁকখালী তোর চর, বাইন্দা ছিলাম ছোট্ট একটা কঞ্চি বাঁশের ঘর' গানটি আবেগপূর্ণ কন্ঠে গেয়ে শুনার শিল্পী মিজানুল হক। কবি আশীষ কুমারের লেখা পল্লিগীতি বিভাস সেনগুপ্ত জিগমী'র কন্ঠে 'মানুষ হইতে সময় লাগে, অমানুষ হইতে কোন, লাগেনা সময়' ও তুলিপ সেনগুপ্ত সুর্য'র কন্ঠে 'মূর্খ আমি দয়ালগুরু, ভবের এই পাঠশালায়। সেই সবকটি শিখাইয়া দে, যা শিখিলে তারে পায়'। গানটি দুটো দর্শক বিমোহিত করে। মনে করিয়ে দেয় কবি আশীষ কুমারের বহু প্রতিভার কথা। যন্ত্রানুসঙ্গে ছিলেন রাজীব বড়ুয়া। |