![]() মৃত্যুর ৯ মাস পর হত্যা মামলার আবেদন, সাবেক এমপিসহ আসামি ৫৭
নতুন বার্তা, নোয়াখালী:
|
![]() শুক্রবার (২৩ মে) বাদীপক্ষের আইনজীবী সাফায়েত উল্যাহ কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আমলি আদালত-৭-এর বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি গ্রহণ করেন। মামলায় এইচ এম ইব্রাহিমসহ ৫৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিচারক, এরপর চাটখিল থানায় পূর্বে এ সংক্রান্ত কোনো মামলা হয়েছে কি না তা আগামী সাত দিনের ভেতর রিপোর্ট জমা দিতে বলেন। মামলায় সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিম, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ উল্যা, সাবেক মেয়র ভিপি নিজাম উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হুদা শাকিল, বেলায়েত হোসেন, শাহজাহান বাবুল, বজলুর রহমান লিটন, রাজিব হোসেন রাজু, আলী তাহের ইভুসহ ৫৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইমতিয়াজ হোসেন একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছিলেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে, ৫ আগস্ট সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।সেই দিন বিকেলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে গোপনে অন্য রাষ্ট্রে পালিয়ে গেছে। এই খবরে উত্তেজিত হয়ে ছাত্র ও সাধারণ জনগণ চাটখিল উপজেলায় একটি আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলটি চাটখিল-রামগঞ্জ মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষ প্রান্তে পৌঁছালে ছাত্র ও সাধারণ জনগণ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যের পথে রওনা হয়। ভুক্তভোগী ইমতিয়াজ হোসেন যখন দশঘরিয়া সড়কে পৌঁছান, তখন অভিযোগ অনুযায়ী, সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম ও সাবেক মেয়র নিজাম উদ্দিনের নির্দেশে, হেলমেট পরিহিত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে দিতে ইমতিয়াজকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি করে। একটি গুলি তার বাম হাতের কব্জিতে এবং আরেকটি গুলি বুকের নিচের অংশ দিয়ে পেটে প্রবেশ করে। এতে তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। স্থানীয় জনগণ তাকে তাৎক্ষণিকভাবে চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে রেফার করেন। সেখান থেকে একই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে সেখানে শয্যা সংকট থাকায় তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন, ৬ আগস্ট, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমতিয়াজ হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর কারণ হিসেবে শর্টগানের গুলিবিদ্ধ হওয়াকে উল্লেখ করে মৃত্যুসনদ প্রদান করে। মামলার বাদি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। ঘটনার সময় এলাকায় চরম উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করায় চাটখিল থানায় নিয়োজিত কোনো পুলিশ কর্মকর্তা লাশের পোস্টমর্টেম করতে সক্ষম হননি। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্থানীয় সাক্ষীগণ পুরো ঘটনা সম্পর্কে অবগত এবং তারা আদালতে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। ইতোমধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত গেজেট (রেজি. নং ৭৮৪, মেডিকেল কেস আইডি ২৫৮৮৫) অনুযায়ী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নোয়াখালী-এর সাধারণ শাখা কর্তৃক ইমতিয়াজ হোসেনকে ‘গণঅভ্যুত্থানের শহিদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রকাশিত তালিকায় ২০ নম্বর ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ২৭ মার্চ ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজকে শহীদের স্বীকৃতি ও ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র দেওয়ায় ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গেজেটভুক্ত শহীদের তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চাটখিল উপজেলার প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা অবাক হয়েছি কীভাবে একজন আত্মঘাতী ব্যক্তি শহীদ হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়। আবার জেলা প্রশাসক ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র তুলে দেন। আমরা বিষয়টির প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে ইমতিয়াজের নাম কোথাও ছিল না। তারপরও কীভাবে এতদূর গড়িয়েছে তার জন্য তদন্ত করা দরকার। এছাড়াও তারা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ৮ লাখ টাকা পেয়েছেন বলে জেনেছি। এখনো আহত যোদ্ধারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। কিন্তু এভাবে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমরা ইমতিয়াজের পরিবারকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। তৎকালীন চাটখিল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের শহীদের স্বীকৃতির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যাচাই-বাছাইয়ে ইমতিয়াজের নাম বাদ যায়। যে যে ক্রাইটেরিয়াতে শহীদের স্বীকৃতি পাওয়া যায় তার ভেতরে সেটি পাওয়া যায়নি। চাটখিল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফিরোজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আদালতের কোনো চিঠি আমি পাইনি। যদি পাই তাহলে আদালতের আদেশ প্রাপ্তি সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, গেজেট নিয়ে আপত্তি থাকায় আমরা ইমতিয়াজের বিষয়টি তদন্ত করছি। তার সব সুযোগ সুবিধা আপাতত বন্ধ আছে। জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহায়তা তাকে ছাড়া বাকি সবাইকে দেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। |