![]() ড. ইউনূসের ‘পদত্যাগ ভাবনা’ নিয়ে বিএনপিতে মতপার্থক্য
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেল থেকে আলোচনা শুরু—প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। এরপর থেকেই বিএনপির ভেতরে চলছে নানা আলোচনা। দলের একাংশ মনে করছে, ১০ মাসে নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেওয়ায় সরকারের ওপর চাপ দরকার। অন্য অংশের মত, এখনই সংঘাতের পরিবেশ তৈরি ঠিক হবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গত বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে বিএনপির পক্ষে এ সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা চাই।’ দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আমরা চার–পাঁচদিন ধরে সময় চেয়ে আসছি। কিন্তু এখনো কোনো সময় দেওয়া হয়নি।’ তার ভাষায়, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির থেকে চার-পাঁচ দিন ধরে সাক্ষাতের সময় চাচ্ছি। উনি সময় দেননি।’ দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপি এখন সরাসরি কোনো আন্দোলনে যেতে চায় না, বরং সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। তবে ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে মতবিরোধ আছে। আজ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘ড. ইউনূস ১৮ কোটি মানুষের, আমরা আপনার পদত্যাগ চাই না। বিশ্বের দরবারে আমাদের গর্বিত করেছেন, আপনি নোবেলজয়ী। আপনি ব্যক্তি ইউনূস নন, বাংলাদেশের ১৮ কোটির ড. ইউনূস। কিন্তু গতকাল আমি বিস্মিত হয়েছি। পত্রিকায় দেখেছি, কতটুকু সত্য জানি না, এনসিপির এক নেতা বলেছেন, আপনার (ড. ইউনূস) পদত্যাগ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এতে আমার মনটা বড় খারাপ হয়েছে।’ বিএনপির মধ্যে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে দ্বিধা আছে কি-না এমন প্রশ্নে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘না, না, না, আমাদের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো চাপ ও দ্বিধাবিভক্ত নেই। আমরা কেউ প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলিনি। আমরা বলছি, যে যারা বিতর্কিত উপদেষ্টা আছেন, তাদের বাদ দেওয়ার কথা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি চাচ্ছে না উনি (প্রধান উপদেষ্টা) পদত্যাগ করুক। আমরা চাই উনি নির্বাচন করে, নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যান। আমাদের একটাই চাওয়া, উনি দ্রুতসময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন।’ আমীর খসরুর ভাষায়, ‘প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সাহেব চলে যাওয়ার কিছু নেই। ওনাকে নির্বাচন দিয়ে যেতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ১০ মাস হয়ে গেছে, এখনো নির্বাচনের রোডম্যাপ দিচ্ছেন না। একটা অনির্বাচিত সরকার কতদিন চলতে পারে? আমরা ১৫–১৬ বছর যুদ্ধ করে শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছি। এখন একটা অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকতে পারে না।’ সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইনি। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছি। উনি যদি রোডম্যাপ দেওয়ার পরিবর্তে নিজে পদত্যাগ করতে চান, তাহলে সেটা ওনার নিজস্ব চয়েজ হতে পারে। কিন্তু আমরা ওনার পদত্যাগ চাইনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পদত্যাগ চেয়েছি নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের। আমরা চেয়েছি ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগ, যেহেতু সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এখন কেন তিনি দায়িত্ব পালন করতে চান না, সেটা ওনার নিজস্ব ব্যাপার। রাষ্ট্র বসে থাকবে না, জাতিও বসে থাকবে না। পৃথিবীতে কেউ অপরিহার্য না। আবেগ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা হয় না, যুক্তি দিয়ে হয়।’ |