![]() রামুতে বৈধ কাগজ থাকা স্বত্বেও বিজিবি কর্তৃক গরু জব্দের ঘটনায় খামারি ও ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভ
খালেদ হোসেন টাপু,রামু :
|
![]() জানা গেছে মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে অবৈধ ভাবে গরু অনুপ্রবেশ করে জেলার অন্যতম শষ্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত গর্জনিয়া গরু বাজারে বিক্রি করার অভিযোগ এনে গত সোমবার গরু বাজারটি বন্ধ রাখার সিন্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে এলাকার প্রান্তিক খামারি ও ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে গত বুধবার জেলা প্রশাসক পবিত্র কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গর্জনিয়া গরু বাজার থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দুরত্বে বেইলি( স্টিল) ব্রীজের নিচে অস্থায়ীভাবে কচছপিয়া গরু বাজার অনুমোদন দেন। বুধবার দুপুর থেকে উক্ত কচ্ছপিয়া গরু বাজারের কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেল চারটা নাগাদ বাজারের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন ভাবে চলে। বিকেল চারটার পর হঠাৎ বিজিবি কচ্ছপিয়া গরু বাজারে উপস্থিত হয়ে মাইকিং করে বার্মিজ গরু না কেনার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করেন। পরে কচ্ছপিয়া গরু বাজার এবং মইশকুমসহ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে ২২টি গরু জব্দ করেন। বিজিবির গরু আটকের শিকার ঘুনধুম এলাকার বশির আলম জানান, কোরবান উপলক্ষে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকায় কচ্ছপিয়া পশুর হাট খেকে এক গৃহ পালিত দেশীয় গরু ক্রয় করে ফিরছিলেন। প্রতিমধ্যে বিজিবি বার্মিজ গরুর অজুহাতে আমার গরুটি আটক করে নিয়ে যায়। তাদেরকে বাজারের বৈধ রশিদ দেখানোর পরও তারা গরুটা ছাড়ে নাই। পুর্ব রাজারকুল এলাকার হাজ্বি সুলতান আহমদ জানান, কোরবানীর জন্য ২লক্ষ ৪০ হাজার টায় ২ টি দেশীয় গরু ক্রয় করে বাড়ির উদ্দেশ্যে ফেরার পথে বিজিবি গরুগুলো আটক করে, এসময় তাদেরকে বাজারের বৈধ রশিদ দেখাতে গেলে তারা উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে রশিদগুলো তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়। একইভাবে অভিযোগ করেন খরুলিয়া দরগাহ পাড়া এলাকার নুরুল হক, ব্যবসার উদ্দেশ্যে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় ৪ টি, মিঠাছড়ির ওমখালী এলাকার আয়াত উল্লাহ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ৩ টি ও খরুলিয়া এলাকার আবু ছিদ্দিক ৭লাখ ৬০হাজার টাকায় ৪ টি দেশীয় গরু কিনে ফেরার পথে বিজিবি আটকে দেয়। এসময় গরু ক্রয়ের বৈধ কাগজ দেখানোর চেষ্টা করা হলে বিজিবির সদস্যরা তাদেরকে বেদড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে রামুর ব্যবসায়ীরা জানান, ধার কর্য করে লাভের আশায় বৈধ পন্থায় সরকারী অনুমোদিত বাজার থেকে গরু ক্রয় করছেন। ক্রয়ের যথাযথ কাগজপত্র থাকা স্বত্বেও বিজিবি তাদের বৈধ গরু আটক করছে। এভাবে চলতে থাকলে ক্রেতা সাধারনের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের নিঃস্ব হয়ে পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। একই সাথে মূলধন হারিয়ে অনেক ব্যবসায়ী পশু ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। সচেতন মহলের অভিযোগ, সীমান্ত দিয়ে আসা অবৈধ গরু-মহিষ আটকে বিজিবির কোন প্রকার তৎপরতা নেই। অথচ সরকারীভাবে ইজারাকৃত বাজার থেকে ক্রয়কৃত বৈধ গরু আটক করছে প্রতিনিয়ত। তাদের অভিযোগ প্রতিদিন সীমান্ত দিয়ে পাহাড়ী চোরাই পথে শত শত গরু প্রবেশ করছে অথচ বিজিবি ঐসমস্ত গরু আটকে উদাসীন। সীমান্তে গরু আটকে দেয়া হলে একটি গরুও বাজার পর্যন্ত আসার সুযোগ নেই।তারা কিন্তু সেটা করছে না। তারা বাজারের বৈধ রশিদের গরু আটকের মাধ্যমে সরকার ও ক্রেতা সাধারনকে মুখোমুখি দাড় করাচ্ছে। একই সাথে বিষয়টি অমানবিকও বটে। এতে করে ক্রেতা ও ব্যবসায়ী লোকসানের কবলে পড়বে। খামারীরা জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তারা দেশীয় গরু হাটে তুলেন এবং হাট থেকে গরুগুলোর ক্রেতারা ইজারাদারের কাছ থেকে যথাযথ কাগজপত্র ও ছাড়পত্র নিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার সময় বিজিবি অভিযান চালিয়ে গরুগুলো জব্দ করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তারা গরু গুলো যথাযথ বৈধ কাগজপত্র আছে বলে দাবি করেন। ক্রেতারা জানান , “আমরা কচ্ছপিয়া গরু বাজার থেকে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছি । আমাদের কিনা দেশীয় গরু, বার্মিজ গরু নয়।” ইজারাদারের অভিযোগ, এমন ঘটনার ফলে অনেকেই হাটে গরু আনতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছেন। ইতোমধ্যেই ব্যবসায়িক ক্ষতি ও দেনার দায়ে অনেকে পথে বসার উপক্রম হয়েছেন। এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১বিজিবি'র অধিনায়ক ও জোন কমান্ডার লে; কর্ণেল এস কে এম কফিল উদ্দিন কায়েস জানান, আমরা খোঁজ নিয়েছি, জব্দকৃত গরু গুলো দেশীয় না। “জব্দ করা গরুগুলো মায়ানমার থেকে চোরাই পথে আনা হয়েছে এবং চোরাই পথে প্রনিয়ত বাজারের বার্মিজ গরু এনে রশিদ নিয়ে বৈধ করে বাইরে চলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। সীমান্তে গরু অনুপ্রবেশ বন্ধ না করে কোরবানি পশুর হাট এবং রাস্তাঘাটে অভিযান চালিয়ে গরু করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে গরু গুলো বার্মিজ, দেশীয় না। তাই জব্দ করা হচ্ছে এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। |