![]() ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কে বিজয়ী হয়েছে?
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() ঘটনার সূত্রপাত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের লক্ষ্য করে চালানো এক বন্দুকধারীর হামলায়, যেখানে ২৬ জন নিহত হন। দিল্লি এই হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনকে দায়ী করে। এর পাল্টা জবাবে ৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে’ হামলা চালায়। এই ঘটনার পর থেকেই শুরু হয় সীমান্তে পাল্টাপাল্টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, যার মধ্যে ছিল অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ও নানা প্রযুক্তিনির্ভর সামরিক অস্ত্রের ব্যবহার। ভারত এই সংঘর্ষে ফরাসি ও রাশিয়ান নির্মিত রাফাল ও সুখোই জেট ব্যবহার করেছে, আর পাকিস্তান ব্যবহার করেছে চীনের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি জে-১০ ও জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান। ইসলামাবাদ দাবি করেছে তারা ৬টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে রাফালও রয়েছে, গুলি করে ভূপাতিত করেছে। দিল্লি সেই দাবি প্রত্যাখ্যান না করলেও বিস্তারিত কিছু জানায়নি। বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, পাকিস্তান চীনের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে যদি সত্যিই ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করতে পারে, তাহলে এটি চীনা প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য একটি ‘লাইভ ডেমোনস্ট্রেশন’। এতদিন যেসব দেশ চীনা অস্ত্রকে ‘কমদামী ও নিম্নমানের’ মনে করত, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চীনের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্নেল ঝাও বো বলেছেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ চীনের জন্য একটি বড় বিজ্ঞাপন ছিল। এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিজেদের অস্ত্র পরীক্ষা করার সুযোগ আগে কখনও আসেনি। চীনের জে-১০ যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এর মধ্যেই ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে, জে-১০ দিয়ে পশ্চিমা প্রযুক্তিকে হারানোর দাবি নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস। কেউ কেউ এই পরিস্থিতিকে ‘ডিপসিক মোমেন্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন- যেমন চীনা এআই স্টার্টআপ ডিপসিক জানুয়ারিতে পশ্চিমা বাজারে আলোড়ন তুলেছিল, তেমনি এই সংঘর্ষেও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে চীন বিশ্বে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের বার্তা দিতে চাইছে। তবে লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক ওয়াল্টার ল্যাডউইগ মনে করেন, এই মুহূর্তে চীনা যুদ্ধবিমান রাফালের সমান কি না, সেটা বলা কঠিন। তার মতে, ভারত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস না করেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে, যা সুপরিকল্পিত নয়। তিনি আরও বলেন, ভারত যদি পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান আগে থেকেই আকাশে থাকা অবস্থায় হামলা করে থাকে, তাহলে সেটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। কিন্তু ভারত তার প্রচলিত সামরিক পদ্ধতি অনুসরণ করে স্ট্রাইক করেছে এবং অনেক স্পর্শকাতর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। দিল্লি দাবি করেছে, তারা পাকিস্তানের অন্তত ১১টি সামরিক বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে রয়েছে রাওয়ালপিন্ডির নিকটে নূর খান বিমানঘাঁটি। এসব আঘাতে পাকিস্তানের যুদ্ধপ্রস্তুতি ব্যাহত হয়। কিন্তু এসব দাবিকে ঘিরে সরকারিভাবে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত হয়তো নির্ভুলভাবে কৌশলগতভাবে সফল হামলা চালিয়েছে, তবে তথ্য-নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা তাদের অর্জনকে ছাপিয়ে যেতে দেয়নি। পরিস্থিতি যখন হাত থেকে বেরিয়ে যেতে বসেছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা হস্তক্ষেপ করে দুই দেশের ওপর যুদ্ধবিরতির চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু এই সংঘর্ষ ভারতের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে- বিশেষ করে চীনা অস্ত্রের কার্যকারিতা যদি বাস্তবে প্রমাণিত হয়ে থাকে। ভারতের কাছে এটা স্পষ্ট, দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পে আরও বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি। চীন ইতিমধ্যেই রাডার এড়াতে সক্ষম উন্নত জে-২০ স্টিলথ জেট অন্তর্ভুক্ত করেছে তার বাহিনীতে। চীন সরকারি পর্যায়ে ভারতীয় রাফাল ভূপাতিত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চুপ থেকেছে, কিন্তু সামাজিক ও প্রতিরক্ষা মহলে জয়ধ্বনি শোনা গেছে। তাদের কাছে পাকিস্তানের কৌশলগত বিজয় মানেই নিজেদের অস্ত্রশক্তির বিশ্বে স্বীকৃতি। কার্লোটা রিনাউডো বলেন, বাস্তবতা নয়, মানুষের উপলব্ধিই এখন গুরুত্বপূর্ণ। সেই হিসেবে চীনের ‘জয়’ অনেকটাই মনস্তাত্ত্বিক। এই সংঘর্ষ একদিকে যেমন দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়িয়েছে, তেমনি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে- ভবিষ্যতের যুদ্ধ কি শুধু দুই দেশের মধ্যে হবে, নাকি আরেক ‘অদৃশ্য শক্তি’ তার ছায়া বিস্তার করবে? সেই প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর এখনই চীনের দিকে অনেকটা ইঙ্গিত করে। আনবারাসন এথিরাজন, দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সম্পাদক, বিবিসি |