![]() তারেক রহমান ও ড.মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে স্বস্তির বার্তা
রায়হান আহমেদ তপাদার:
|
![]() আগামী বছরের রমজানের আগেই বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। লন্ডনে ড.মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক শেষে দেয়া যৌথ বিৃবতিতে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য ওই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ১৩ জুন লন্ডনের পার্ক লেনের হোটেল ডোরচেস্টারে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। পরে রূদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অন্য প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন না। প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠকের পর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে ডেকে নেয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের বৈঠক শেষে একটি যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়েছে।লিখিত ওই বিবৃতিতে জানানো হয়, অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্য, সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে অন্তত প্রতীকী সাফল্যের প্রশ্নটি প্রধান উপদেষ্টার ন্যূনতম লক্ষ্য। এত বড় একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের দায়িত্ব নিয়ে এটুকু স্মারক তৈরি করতে চাওয়া খুবই স্বাভাবিক। বিপরীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও যে ন্যূনতম সংস্কার এবং বিচারের জন্য সময়ের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়েছেন, তাতে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে বাস্তববাদিতার প্রতিফলন ঘটেছে। এগুলো সম্পন্ন করার জন্য কোনোভাবেই বাড়তি সময় দেওয়া যাবে না, এমন কোনো অনমনীয় অবস্থান তিনি নেননি। নির্বাচনের সময় নিয়ে উভয় পক্ষের এ নমনীয়তা উভয় পক্ষের মধ্যে আপাতদৃষ্টে সৃষ্টি হওয়া দূরত্বের অবসান ঘটিয়েছে। অর্থনৈতিক নীতি কিংবা পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক বিতর্ক যেভাবে হয়েছে, তা-ও কিন্তু সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির অন্যতম কারণ। অন্তর্বর্তী সরকার যে অর্থনীতিতে একটা স্থিতিশীলতা তৈরি করতে পেরেছে এবং আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তির অব্যাহত অপপ্রচারের পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহানুভূতি ও সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছে, এগুলো ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সরকারের কাজ অনেকটাই সহজ করে দেবে। না হলে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটা রাজনৈতিক সরকার গঠিত হলেই যে তা এসব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে সক্ষম হতো, এ কথা কেউই জোর দিয়ে বলতে পারে না। বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানোর কারণে অন্য কারও সঙ্গে যেন দূরত্ব তৈরি না হয়, সেটাও কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিএনপির প্রতি ঈর্ষাকাতর বা বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা আছে, এমন দু-একটি দল লন্ডনের এ বৈঠককে ইতিবাচকভাবে না-ও নিতে পারে। নির্বাচনের সময় প্রশ্নে ছাড় দিয়ে বড় দলের প্রতি আনুকূল্য দেওয়া হলো কি না-এমন প্রশ্ন তারা তুলতে পারে। কেননা, আমরা ইতিমধ্যে ছাত্রদের গড়ে তোলা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও তার পৃষ্ঠপোষকদের মুখ থেকে বিএনপির প্রতি অভিযোগ তুলতে শুনেছি যে তারা সংস্কার ও বিচারকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ সমালোচনা অযৌক্তিক নয়; কিন্তু তা যেন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে অনৈক্য উসকে না দেয়, সেদিকেও সবার নজর রাখা দরকার। লন্ডনের বহুপ্রতীক্ষিত বৈঠকটি নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে সৃষ্ট মতভেদ দূর করার প্রত্যাশা যে পূরণ করেছে, তার পেছনে অধ্যাপক ইউনূসের লন্ডনের অন্য একটি আলোচনারও কিছুটা ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। ১১ জুন রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স বা চ্যাথাম হাউসের আয়োজনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় তিনি বেশ কয়েকটি বিষয়ে তাঁর অবস্থান খোলাসা করেছেন। তাঁর পরিকল্পনা ও ভাবনা নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠছিল, তার বেশ কয়েকটির সোজাসাপটা উত্তর ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচারকারীদের সৃষ্ট ধোঁয়াশা অপসারণ করেছে। ওই আলোচনায় ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণের বিষয়টি তিনি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেন এবং গণভোটের ধারণাও নাকচ করে দেন। বহু সমালোচক অভিযোগ করে আসছিলেন যে ডিসেম্বর ২০২৫-এর পর নির্বাচন বিলম্বিত করার পেছনে অধ্যাপক ইউনূসের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। তাঁদের দাবি ছিল,একটি গণভোটের মাধ্যমে তাঁর ম্যান্ডেট দীর্ঘায়িত করা হতে পারে। ড.মুহাম্মদ ইউনূসের স্পষ্ট বক্তব্য এসব সন্দেহ অনেকটাই দূর করে। উল্লেখযোগ্য আরেকটি বিষয় সবার মন কেড়েছে, অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করার সময় তারেক রহমান তাঁকে একটি কলম ও দুটি বই উপহার দিয়েছেন। বই দুটির একটি হচ্ছে নেচার ম্যাটার্স এবং অন্যটি নো ওয়ান ইজ ঠু স্মল টু মেক আ ডিফারেন্স। দ্বিতীয় বইটি পরিবেশবাদী আন্দোলনের বর্তমানের সবচেয়ে পরিচিত মুখ গ্রেটা থুনবার্গের লেখা। পরিবেশ ও ব্যক্তিপর্যায়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগের শক্তি-এই দুটি বিষয়ই মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মী এখন তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রতীক্ষায়।ইতোমধ্যে তিনি সব মামলা থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন। তাছাড়া স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, তারেক রহমানের দেশে আসতে কোনো সমস্যা নেই। ফলে এ বৈঠক নিয়ে যে রাজনৈতিক আলোচনা চলছে, তার সঙ্গে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ও যুক্ত হয়ে গেছে। যুক্তরাজ্যে এ বৈঠক ঘিরে লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যেও রয়েছে সমান কৌতূহল। সংসদ নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব কমে আস্থা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক রাজনৈতিক নেতারা। তারা আরো বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকের ফলে দুই পক্ষই জিতেছে। উভয়পক্ষের মধ্যে থাকা বিভক্তি, সন্দেহ ও অবিশ্বাস কমেছে। তবে নাটকীয় কিছু না ঘটলে এই ঐকমত্য দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে এটাই সকলের প্রত্যাশা। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী তারেক রহমানের ধমনীতে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন বাস্তবতায় প্রোথিত রাজনৈতিক দর্শন, আর হৃদয় মূলে গেঁথে আছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বহধা বিস্তৃত এক মহীরুহ। অন্যদিকে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বের উজ্জ্বল গুণাবলীও তারেক রহমানকে করেছে আলোকিত। তারেক রহমানের ত্যাগ, ধৈর্য্য এবং দূরদর্শী নেতৃত্ব দলকে পুনরুজ্জীবিত করেছে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত করতে বদ্ধ পরিকর। তারেক রহমান শুধু বিএনপি’র নেতা নন, বরং সারাদেশের একজন সর্বজন গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব। যার লক্ষ্য-বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং উৎপাদনের উন্নয়ন নিশ্চিত করা। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে কাক্ষিত গন্তব্যের পথে এগিয়ে যাবে, তা স্বপ্ন নয় বরং বাস্তবতা হতে চলেছে। লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক |