![]() চামড়ার দেশে চীনা জুতা: সম্ভাবনার কুরবানি বাংলাদেশে
মীর আব্দুল আলীম:
|
![]() আমাদের অসংখ্য ট্যানারি আছে, কাঁচামালও কম নয়, শ্রমিকের অভাব নেই— সরকারও এই করবে সেই করবে বলে মাঝেমধ্যে গলা ফাটায়। তবু কোথায় হারিয়ে যায় ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’-এর অহংকার? প্যারিসের বিলাসবহুল দোকানে আজও জায়গা পায় না বাংলার তৈরি জুতো। বাংলাদেশের চামড়ায় তৈরি জুতার রাজত্ব চলে সেখানে। কারণ? চামড়ার গায়ে জমে আছে অবহেলার ধুলোর স্তর, শিল্পনীতির শূন্যতা আর চিরচেনা আমলাতান্ত্রিক ছলচাতুরির ছায়া। চামড়ার দেশে, আসল মূল্য দেয় বিদেশি ব্র্যান্ড। আর বাংলাদেশ? থেকে যায় শুধু কাঁচামালের যোগানদাতা হয়ে- নিজের সম্পদ দিয়েও নিজের নাম গড়তে ব্যর্থ এক নিরুপায় শ্রমিকের মতো। আমাদের চামড়া শিল্পের গায়ে জমে আছে অবহেলার ধুলা, দুর্নীতির দাগ আর পরিকল্পনার শূন্যতা। প্রতি বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশে প্রায় ৭০-৮০ লাখ গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি কুরবানি হয়। এর মাধ্যমে যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া পাওয়া যায়, তা আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। কেবল এই একটি মৌসুমেই প্রায় সারা বছরের চাহিদা মেটানোর মতো চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব। অথচ আমরা এই বিপুল সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব এবং পরিকল্পনার ঘাটতির কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। চামড়া নষ্ট হওয়া মানে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি। যদি এই মৌসুমভিত্তিক সরবরাহকে একটি পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিল্পে রূপান্তর করা যেত, তাহলে আমাদের দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হতো এবং চীন বা ভারতের মতো জুতা, ব্যাগ, বেল্ট, জ্যাকেট তৈরির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক স্থান দখল করা সম্ভব হতো। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব: বাংলাদেশের বেশিরভাগ ট্যানারিতে এখনও প্রাচীন পদ্ধতিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ও মানসম্মত যন্ত্রপাতির অভাব, দক্ষ জনবলের স্বল্পতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের অভাবে চামড়ার গুণগত মান ধরে রাখা সম্ভব হয় না। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে হলে চামড়ার প্রক্রিয়াকরণে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা জরুরি। চীন, ভারত, ভিয়েতনাম—এরা ইতোমধ্যেই আধুনিক ট্যানারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে নিজেদের বাজার স¤প্রসারণ করেছে। আমাদের দেশে যদিও সাভারে চামড়াশিল্প নগর গড়ে তোলা হয়েছে, তবু এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান সেখানে কার্যকরভাবে স্থানান্তরিত হয়নি কিংবা কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি। যদি সরকার এবং বেসরকারি উদ্যোক্তারা একসাথে মিলে আধুনিক ট্যানারি প্রযুক্তি স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে বিনিয়োগ করতেন, তাহলে চামড়া শিল্পে অভ‚তপূর্ব বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হতো। প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলার অভাব: চামড়া শিল্পে সফলতা অর্জনের জন্য কেবল প্রযুক্তি বা কাঁচামালই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন দক্ষ জনবল। বর্তমানে বাংলাদেশে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ, ডিজাইন, এবং পণ্য উৎপাদনে দক্ষ কর্মীর অভাব প্রকট। আন্তর্জাতিক মানের জুতা, ব্যাগ বা গার্মেন্টস এক্সেসরিজ তৈরি করতে হলে যে ধরনের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা দরকার, তা আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এখনো সীমিত। কিছু টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে সীমিতসংখ্যক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, কিন্তু তা দেশের শিল্পের জন্য যথেষ্ট নয়। সরকার যদি ট্যানারি জোনে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে নিয়মিত কোর্স চালু করত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহ দিত প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ করতে, তাহলে ক্রমশ দক্ষ জনবল গড়ে উঠত। এতে বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করা সহজ হতো। রপ্তানি বাজারের জন্য ব্র্যান্ডিংয়ের অভাব: বাংলাদেশে উৎপাদিত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যগুলো গুণগত মানে উন্নত হলেও বিশ্ববাজারে তা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত নয়। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের অভাবে আমাদের পণ্যের মূল্য অনেক কমে যায় এবং পাইকারি দামে বিক্রি করতে হয়। অথচ ভারত, চীন বা ইতালির মত দেশগুলো কেবল ব্র্যান্ড ভ্যালুর জোরে একই পণ্য অনেক বেশি দামে বিক্রি করে। যদি বাংলাদেশ সরকার কিংবা উদ্যোক্তারা যৌথভাবে ব্র্যান্ড নির্মাণ, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ, ডিজিটাল মার্কেটিং, এবং ট্রেড মিশনের মাধ্যমে পণ্যের পরিচিতি বাড়াতে সচেষ্ট হতেন, তাহলে আমাদের পণ্য উচ্চমূল্যে বিক্রি করা যেত এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ সুগম হতো। চামড়াজাত হস্তশিল্পের সম্ভাবনা: চামড়া দিয়ে কেবল জুতা বা ব্যাগ নয়, নানা ধরনের হস্তশিল্পও তৈরি করা সম্ভব—যেমন ঘড়ির ফিতা, বইয়ের মলাট, গৃহসজ্জার সামগ্রী, অলংকার, দোলনা, আসবাবপত্রের কভার ইত্যাদি। এই খাতে গ্রামীণ নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করে পড়ঃঃধমব রহফঁংঃৎু গড়ে তোলা যেতে পারে। এতে করে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হস্তশিল্প বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক আয় বাড়ানো সম্ভব। এজন্য চাই স্থানীয় উদ্যোগ, প্রশিক্ষণ, এবং সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা। যদি চামড়াজাত হস্তশিল্পকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা যায়, তবে তা একটি স্বতন্ত্র রপ্তানি খাতে পরিণত হতে পারে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও পরিবেশদূষণ: ট্যানারির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের পরিবেশ ব্যবস্থার অন্যতম দুর্বল দিক। চামড়া প্রক্রিয়াকরণের সময় বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা সঠিকভাবে নিষ্কাশন না হলে পরিবেশ দূষণ হয়। এই সমস্যা আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। উন্নত দেশে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতি না থাকলে তাদের বাজারে প্রবেশ করাও কঠিন হয়ে পড়ে। সাভার চামড়াশিল্প নগরে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট (ঈঊঞচ) থাকলেও সেটির কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। পরিবেশবান্ধব ট্যানারি শিল্প গড়ে তুলতে হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং কঠোর পরিবেশ আইন প্রয়োগ করা জরুরি। অভ্যন্তরীণ বাজারের অপার সম্ভাবনা: বাংলাদেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের একটি বিশাল বাজার রয়েছে। দেশের মানুষের মধ্যে এখন দেশীয় ব্র্যান্ডের জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে। কিন্তু দেশীয় বাজার এখনও বিদেশি পণ্যের দখলে। যদি স্থানীয় উদ্যোক্তারা মানসম্পন্ন ও স্টাইলিশ চামড়াজাত পণ্য তৈরি করতে পারেন, তবে দেশীয় বাজারে চীনের পণ্যকে টেক্কা দেয়া সম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে দেশীয় ব্র্যান্ডকে উৎসাহিত করা এবং বাজার সুরক্ষার ব্যবস্থা নিলে এই খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারে। চামড়া গবেষণায় বিনিয়োগের অভাব: চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের উন্নয়নে গবেষণা অত্যন্ত জরুরি। অথচ বাংলাদেশে এ খাতে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা কার্যক্রম প্রায় নেই বললেই চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং কিছু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে কিছু গবেষণা চললেও তা শিল্পের প্রয়োজনে যথেষ্ট নয়। গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে নতুন প্রযুক্তি, ডিজাইন এবং পরিবেশবান্ধব উপকরণ উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই শিল্প আরও টেকসই করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদÐ অর্জনে দেরি: চামড়া শিল্পে আন্তর্জাতিক মানদÐ অর্জন করতে হলে ওঝঙ, জঊঅঈঐ কিংবা খডএ (খবধঃযবৎ ডড়ৎশরহম এৎড়ঁঢ়) সার্টিফিকেশন পাওয়া জরুরি। আমাদের দেশের অনেক ট্যানারি এই সার্টিফিকেশন অর্জন করতে পারেনি বিধায় আন্তর্জাতিক বড় ব্র্যান্ডগুলো আমাদের পণ্য কিনতে আগ্রহী নয়। অথচ এই মানদÐ অর্জন করলে বাজারে প্রবেশের পথ সুগম হয় এবং উচ্চমূল্য পাওয়া যায়। সরকার যদি প্রণোদনা ও সহায়তা দিয়ে এসব সার্টিফিকেশন অর্জনে সাহায্য করে, তাহলে রপ্তানি বহুগুণে বাড়বে। কুটির শিল্প থেকে বৃহৎ শিল্পে উত্তরণ: বাংলাদেশে বহু উদ্যোক্তা ছোট পরিসরে চামড়াজাত পণ্য তৈরি করেন, কিন্তু তারা বড় শিল্পে রূপ নিতে পারেন না মূলধন, প্রশিক্ষণ ও বিপণন ব্যবস্থার অভাবে। সরকার ও এনজিওগুলো যদি এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ, ঋণ এবং বিপণন সহায়তা দেয়, তাহলে তারা বৃহৎ শিল্পে পরিণত হতে পারেন। এতে চামড়াশিল্পে কর্মসংস্থান ও রপ্তানি দুটোই বাড়বে। বিনিয়োগে উৎসাহ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব: চামড়া শিল্প একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্র। কিন্তু ব্যবসায়ীরা অনেক সময় সরকারি নীতির স্থায়িত্বহীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতির কারণে বিনিয়োগে আগ্রহ হারান। সরকারের উচিত একটি সুস্পষ্ট এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতি গ্রহণ করা, যাতে বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। শিল্পাঞ্চলের ভর্তুকি, কর ছাড়, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং সহজ ঋণ সুবিধা এই খাতকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। বহু উদ্যোক্তা চামড়াজাত পণ্য তৈরি করতে পারেন, কিন্তু সেগুলো রপ্তানি বা বিক্রির জন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংযোগ থাকে না। এই সমস্যা দূর করতে হলে একটি শক্তিশালী রপ্তানি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। বিজিএমইএর মতো একটি সংগঠন যদি চামড়া শিল্পের জন্যও কার্যকরভাবে কাজ করে, তাহলে উদ্যোক্তারা বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবেন। প্রতি বছর অনেক চামড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হয়। ফলে দেশীয় বাজারে কাঁচামালের ঘাটতি তৈরি হয়। এই অবৈধ চোরাচালান বন্ধ করতে হলে কড়া নজরদারি, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সদিচ্ছা প্রয়োজন। চামড়ার সঠিক মূল্য নিশ্চিত করা এবং প্রকৃত সংগ্রাহকদের সঙ্গে কাজ করলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পণ্যের প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। নতুন ডিজাইন, দ্রæত ডেলিভারি, পরিবেশবান্ধব পণ্য এখন গ্রাহকদের চাহিদা। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানো, গবেষণা ও উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া, এবং আধুনিক পণ্য উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। দেশে উৎপাদিত চামড়াজাত পণ্য ব্যবহার করতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এজন্য চাই গণসচেতনতা, প্রচার, ও দেশীয় ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা গড়ে তোলা। যদি আমরা নিজেরাই দেশীয় পণ্য ব্যবহার করি, তাহলে বিদেশি পণ্যের চাহিদা কমবে এবং দেশীয় শিল্প টিকতে পারবে। সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পে দেশপ্রেম সৃষ্টি করতে হবে। চামড়ার ঘ্রাণে শুধু অর্থ নয়, আত্মমর্যাদাও লুকিয়ে থাকে। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ এখন আর গরিব-দুঃখী দেশের প্রতীক নয়। গার্মেন্টসে সফলতা এসেছে, তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রগতি দৃশ্যমান—তাহলে চামড়া শিল্পের বেলায় এত গলা শুকিয়ে যায় কেন? নীতিনির্ধারকরা একটু দূরদৃষ্টি আর রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখালে, এই একটি শিল্প দিয়েই দাঁড় করানো যেত নতুন এক ‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশ’। শুধু একদিনের কোরবানিতে নয়, সারাবছরজুড়ে কুরবানি করা যেত চীন-মালয়েশিয়ার আমদানি নির্ভরতার ওপর। সময় এসেছে, চামড়ার গন্ধে ঘাম আর গৌরব মিশিয়ে এক নতুন শিল্প বিপ্লবের বীজ বপনের। মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ। |