![]() ‘কোচ হিসেবে এই বাংলাদেশের সঙ্গে কোনোভাবেই যায় না ক্যাবরেরা’
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() গত দুই দিনে নানাজন এই ম্যাচ কাঁটাছেঁড়া করেছেন। সবার বিশ্লেষণের সারমর্ম ছিল- কোচের ভুল সিদ্ধান্তেই হতাশার এই হার। বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে ক্যাবরেরা দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি। এরপর থেকে ৪০ মাস পার হয়ে গেছে। সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী ক্যাবরেরার মেয়াদ আছে আগামী বছর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে নিজের চুক্তির মেয়াদের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন সাংবাদিকরা, যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল এই ম্যাচ হারলে চাকরি হারানোর ভয় আছে কিনা তার! সাড়ে তিন বছরে ক্যাবরেরার অধীনে বাংলাদেশের পাফরম্যান্স আশা জাগানিয়া কিছু ছিল না। জয়ের হার ২৫ ভাগেরও নিচে। বাংলাদেশের আগে কোনো জাতীয় দল পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল না ক্যাবরেরা। ভারতের গোয়া স্পোর্টিং ক্লাব দিয়ে কোচিং (সহকারী কোচ) ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ২০১৩ সালে। ৮ বছর ক্লাব লেভেলে কোচিং করানো এই ক্যাবরেরাকে বাফুফে বাংলাশে দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়। ক্যাবরেরা যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন সে সময়ের বাংলাশে দল আর এখনকার বাংলাশে দল এক নয়। বাংলাদেশ বদলে গেছে অনেক। বিশেষ করে হামজা চৌধুরী, শামিত সোম কিংবা ফাহমিদুল ইসলামের মত ফুটবলার যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের বাজার দরও বেড়ে গেছে। হামজা ও শামিত যে লেভেলে ফুটবল খেলেছেন এবং খেলছেন সেখানে আরো উঁচুমানের কোচের অধীনে অনুশীলন করেন তারা। শামিতের তো কানাডা জাতীয় দলে দুটি ম্যাচ খেলারও অভিজ্ঞতা আছে। কানাডার মতো দেশের জাতীয় দলে খেলা সাধারণ বিষয় নয়, যে দেশটি এর আগে বিশ্বকাপেও খেলেছে এবং আগামী বিশ্বকাপে খেলবে স্বাগতিক হিসেবে। বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার হেভিওয়েট দল। হাজমা ও শামিতের মানের ফুটবলার এই অঞ্চলের কোনো দেশে নেই। হামজা-শামিতরা যখন আরো বড় মাপের কোচের অধীনে অনুশীলন করছেন, সেখানে হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা কতটা দক্ষ তাদের জন্য? এমন প্রশ্ন করলে জাতীয় দলের সাবেক তারকা স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমিলি কোনো রাখঢাক না করেই বলেন, ‘এই বাংলাদেশকে পরিচালনা করার দক্ষতা বা যোগ্যতা ক্যাবরেরার নেই। তিনি নিজেই সেটা প্রমাণ করেছেন।’ আপনি বলছিলেন হামজা-শামিত যোগ হওয়ায় বাংলাদেশ দলের শক্তি ও কোয়ালিটি বেড়েছে। কতটা বেড়েছে বলে আপনি মনে করেন? ‘ধরুণ আগে যদি ৩০ থাকে এখন তার দ্বিগুণ’-বলেছেন এমিলি। বাংলাদেশ দলের শক্তি বেড়েছে, মর্যাদা বেড়েছে, বাজারমূল্যও বেড়েছে। কিন্তু কোচ তো সেই ক্যাবরেরাই আছেন। এই দলের সাথে এই কোচ কি যায়? ‘এবার যখন তার মেয়াদ শেষ হয়েছিল তখন ধারণা ছিল আর নবায়ন করবে না বাফুফে। কারণ, এই কোচ কিছুই করতে পারছিলেন না। বিশেষ করে প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে মালদ্বীপের কাছে হারটা ছিল চরম হতাশার। তারপরও বাফুফে হয়তো মনে করেছিল নতুনভাবে পরিকল্পনা করে দলটিকে তৈরি করতে পারবেন ক্যাবরেরা; কিন্তু পারেননি। দলটাকে ঠিকমতো নার্সিংই করতে পারেননি। দীর্ঘদিন হয়ে গেছে একজন জেনুইন স্ট্রাইকার বের করে আনতে পারেননি তিনি’- বলেছেন সাবেক এই স্ট্রাইকার। ক্যাবরেরা যে লো-কোয়ালিটর কোচ, তিনি যে প্রতিপক্ষকে রিড করতে পারেন না সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ বিশ্লেষণ করে সেই বর্ণনা দিয়েছেন এমিলি। তার মতে, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষ্যে ম্যাচের শুরুতেই ভুল করেছেন একাদশ গঠণের মাধ্যমে। ‘ঢাকায় এসে সিঙ্গাপুরের জাপানিজ কোচ বলেছিলেন হামজা ও শামিতের কারণে বাংলাদেশের শক্তি অনেক বেড়েছে। এই দুই তারকা খেলোয়াড়ের কারণেই তারা বাংলাশেকে সমীহ করছে বলেও জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মিডফিল্ড এত স্ট্রং তা কাজেই লাগাতে পারেননি কোচ। কাজেম শাহ মধ্যমাঠের খেলোয়াড়। তাকে দিয়েছেন রাইট উইংয়ে। আর যে রাউট উইংয়ে দক্ষ, সেই রাকিবকে রাখলেন সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ডে। এই ম্যাচে যদি বাম দিকে ফাহামিদুল, ডান দিকে রাকিব এবং নাম্বার নাইন পজিশনে প্রথাগত একজন স্ট্রাইকার রাখা হতো তাহলে সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগ তছনছ হয়ে যেতো’- বলছিলেন এমিলি। আপনি যদি কোচিং স্টাফের অংশ হতেন তাহলে ক্যাবরেরাকে কেমন একাদশের পরামর্শ দিতেন? এমিলি বলেন, ‘আমি মনে করি, শুরু থেকেই প্রেসিং ফুটবল খেলার জন্য আক্রমণাত্মক একাদশ গড়তে বলতাম। যেটা বলছিলাম রাইট উইংয়ে রাকিব, লেফট উইংয়ে ফাহামিদুল, নম্বার নাইনে সুমন রেজা বা আল-আমিন এবং তার পেছনে শামিত। শুরু থেকে আগ্রাসি ফুটবল খেললে সিঙ্গাপুর ভয় পেতো। তারপরও ওরা খেলা গুছিয়ে উঠতে পারতো না। আমাদের কোচ কি করলেন, প্রতিপক্ষের খেলা অবজার্ভ করতে থাকলেন। যেখানে আমরা ওদের চাপে রাখবো, সেখানে গোল খেয়ে নিজেরাই চাপে পড়লো। দ্বিতীয়ার্ধে ঠিকই অ্যাটাকিং মুডে গেলেন, গোল করলেন। তবে ম্যাচে ফিরতে পারলেন না আর।’ ‘সিঙ্গাপুর ঢাকায় এসে বাংলাদেশকে সমীহ করেই কথা বলছিলেন। তারা তো খোঁজ-খবর রাখেন। যে দলটি মাঠে নামার আগে একটু ভয়ে ভয়ে ছিল সেই দলটিকে মাঠে আমরা ভয় দেখাতে পারলাম না। আসলে কোচের গেম প্ল্যানিংয়েই ত্রুটি ছিল। প্রথমত এই ম্যাচে স্ট্রাইকার না খেলানোর কোনো কারণই ছিল না। কারণ, এই ম্যাচতো আমরা জিততে চেয়েছিলাম। দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে বাংলাশে চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় কয়েকটি পরিবর্তন এনে।’ ‘এখানে একটা বিষয় বলা ভালো যে, ফুটবলের নিয়মই এটা যে কোনো দল ২-০ গোলে এগিয়ে থাকলে সে ডিফেন্সিভ খেলবেই। তার তৃতীয় গোলের চেয়ে লক্ষ্য থাকবে গোল না খাওয়া। বাংলাদেশ যখন ২-১ গোলে পিছিয়ে, যখন দ্বিতীয় গোলের জন্য পাগল হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। আমরা দেখলাম যে গোল করলো সেই রাকিবকে নিচে নামিয়ে নেওয়া হলো রাইট ব্যাকে। এটা কোন ধরণের কোচিং? রাকিব সব সময় ফ্রি স্পেসে খেলতে অভ্যস্থ। তাইতো সে বল ধরলেই ডান দিক দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে। অথচ তাকে দেয়া হয়েছিল অন্য পচিজশনে।’ ‘আরেকটা বিষয়, ১০টার মতো কর্নার পেয়েছিল বাংলাদেশ। কোনো কর্নারই ঠিকঠাক মতো নিতে পারেননি। এক পর্যায়ে টানা চার কর্নার। তিনটির একটিও মোরসালিন জায়গামতো বল ফেলতে পারেননি। যে কারণে চতুর্থটা নিয়েছিলেন হামজা। দলের সবচেয়ে লম্বা খেলোয়াড় হামজা। তাকে তো কর্নারের সময় রাখা হবে বক্সে। আর অন্যরা যখন ঠিকঠামমতো কর্নার নিতে পারছিলেন না তখন জামাল ভূঁইয়াকে নামিয়ে ট্রাই করতে পারতেন। হাতে তো অপশন ছিল। কোচ ব্যবহার করতে পারলেন না। আসলে কোনো সঠিক পরিকল্পনাই ছিল না তার। ফল হিসেবে আমরা হেরেছি। এই ম্যাচ বাংলাশে কিছুতেই হারে না। কোচের ত্রুটিপূর্ণ কৌশলই বাংলাদেশকে ডুবিয়েছে’- বিশ্লেষণ এমিলির। |