![]() জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() দলটি গত ষোল বছরে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীর এই দিনটি পালন করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিল। তবে বিএনপির দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরের আন্দোলনের পথ ধরে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে এবং শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার দীর্ঘ সময় পর যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। জিয়াউর রহমান তার ঘটনাবহুল কর্মময় জীবন দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন অলঙ্কৃত করে আছেন। নানা কারণে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার সততা, নিষ্ঠা, গভীর দেশপ্রেম, পরিশ্রমপ্রিয়তা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা প্রভৃতি গুণাবলী এ দেশের গণমানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। তিনি ছিলেন একজন পেশাদার সৈনিক। তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল ঈর্ষণীয়। মাত্র ছয় বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। এই সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষ তার ওপর ছিল প্রচণ্ড আস্থাশীল। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তার ওপর মানুষের এই আস্থায় কোনো চিড় ধরেনি। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়িতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মনসুর রহমান কলকাতায় একজন কেমিস্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন। শৈশব ও কৈশোরের একটি সময় গ্রামে কাটিয়ে তিনি বাবার সাথে কলকাতায় এবং দেশ বিভাগের পর করাচিতে চলে যান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। সামরিক জীবনে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যেও তিনি একের পর এক কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সাথে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তার কোম্পানি যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি খেতাব লাভ করে। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের জন্য তিনি নিজেও একটি পিস্তল উপহার পান। সৈনিক জীবনে তিনি যেমন চরম পেশাদারিত্ব দেখিয়েছেন, ঠিক জাতীয় সব সঙ্কটকালেও শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, জিয়াউর রহমান তখন চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বিশ্বসম্প্রদায়কে বাংলাদেশের মানুষের এ ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে সমর্থনের আবেদন জানান। ৯ মাসের মুক্তি সংগ্রামে তিনি একটি সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে সমরনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেন বীরউত্তম খেতাব। ১৯৭৫ সালে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করা হয়। জাতির ভাগ্যাকাশে তখন এক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল। সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। ইতিহাসের সেই বিশেষ ক্ষণে সিপাহী-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন এবং নেতৃত্বের হাল ধরেন। এর পর থেকে জিয়াউর রহমানকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি শুধুই এগিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত সততা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, কর্তব্যনিষ্ঠা, দৃঢ় নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা, নির্লোভ, নির্মোহ, গভীর দেশপ্রেম প্রভৃতি গুণাবলি দিয়ে তিনি জাতির মধ্যে নতুন করে জাগরণের সৃষ্টি করেন। সারাদেশ চষে বেড়াতেন তিনি। তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল তিনি বাংলাদেশের মানুষের উপযোগী একটি স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদী আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটান। দেশে সমন্বয়ের রাজনীতি চালু করে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপিতে একদিকে যেমন চরম বামপন্থীরা স্থান পান, তেমনি চরম ডানপন্থীরাও জায়গা করে নেন। একটি উদার ও মধ্যপন্থী দল হিসেবে বিএনপিকে গড়ে তোলেন। নিজে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হলেও তিনি এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখেন। জিয়াউর রহমান বিভক্তির রাজনীতি দূর করে ঐক্যের রাজনীতির ডাক দেন। রাজনীতিবিদদের তিনি জনগণের দোরগোড়ায় যেতে বাধ্য করেন। বিশাল কর্মযজ্ঞের সূচনা করে জনগণের মধ্যে তিনি সাড়া জাগান। ছয় বছরের শাসনামলে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন এবং তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে এ জাতিকে মুক্ত করেন। স্বজনপ্রীতি, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনসহ নানান অপকর্মে জাতির যখন ত্রাহী অবস্থা ঠিক তখনই জিয়াউর রহমান শক্ত হাতে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস জোগান তিনি। দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক বাণীতে শহীদ জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কর্মসূচি: জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ৮ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া, দুস্থদের মাঝে চাল-ডালসহ বস্ত্র বিতরণ প্রভৃতি। ২৬ মে থেকে আগামী ২ জুন পর্যন্ত এসব কর্মসূচি পালিত হবে। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়ার দিন আজ শুক্রবার ভোরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে শহীদ জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি আলোচনা সভা, মসজিদে মসজিদে গণদোয়া এবং দুস্থদের মধ্যে চাল-ডালসহ বস্ত্র বিতরণ করা হবে। বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিশেষ পোস্টার প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশ করা হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে দুস্থদের মাঝে চাল-ডালসহ বস্ত্র বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও সারা দেশে জেলা ও উপজেলা, থানা ও পৌর ইউনিটগুলোও জিয়াউর রহমানের স্মরণে আলোচনা সভা, দুস্থদের মাঝে খাবার, বস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। |