আজ রবিবার, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ০১ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
 / মতামত / ভূমিকম্প ঝুঁকি : আমরা কতটা প্রস্তুত?
ভূমিকম্প ঝুঁকি : আমরা কতটা প্রস্তুত?
মীর আব্দুল আলীম:
Published : Thursday, 29 May, 2025 at 1:10 PM
ভূমিকম্প ঝুঁকি : আমরা কতটা প্রস্তুত?গভীর রাতে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, তা যেন আরেকবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—আমরা কতটা ঝুঁকির মধ্যে বাস করছি। রিখটার স্কেলে মাত্র ৫.২ মাত্রার হলেও এই কম্পন আমাদের নগরের অস্থিতিশীল ভিত্তি ও ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন, বাংলাদেশ বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ। এসব অঞ্চল ঢাকার ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে, যেখানে যদি ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তবে ঢাকায় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
ঢাকার যে ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে, তা আমরা নিজেরাই বাড়িয়ে তুলছি। ইমারত নির্মাণ নীতিমালা না মেনে, জলাভূমি ভরাট করে বালু ও মাটি দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন। এই শহরের ভূতাত্ত্বিক কাঠামো ও ভবনগুলোর গঠন এক বড় ভূমিকম্পে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনতে পারে। এখনই সময়, হাত-পা গুটিয়ে বসে না থেকে সচেতন ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। সরকারের যেমন দায়িত্ব রয়েছে শক্তিশালী তদারকি এবং নীতিমালা বাস্তবায়নের, তেমনি নাগরিকদেরও রয়েছে সচেতন থাকার দায়। ভূমিকম্প ঠেকানো না গেলেও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর প্রস্তুতি নেওয়া এখনই জরুরি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভূতত্ত্ববিদেরা বলছেন, ১৫০ বছর অন্তর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই অঞ্চলে একবার বড় ভূমিকম্প হয়। শেষটি হয়েছিল ১৯৩০ সালে। তাহলে কি আগামীটি কড়া নাড়ছে? আমরা জানি, ঢাকার নিচে ডাউকি ফল্ট, সীতাকুন্ড ফল্ট আর টেকনাফ ফল্ট-তিনটি ভয়ংকর টেকটোনিক রেখা কিলবিল করছে। ভূপৃষ্ঠের নিচে জমছে শক্তি। কে জানে, কোন মুহূর্তে সেই শক্তির বিস্ফোরণ হবে? এম ভুমিকম্পে পুরনো ঢাকার পুরনো ভবনগুলো কি টিকবে? ঢাকা শহরের ভগ্নপ্রায় ভবনগুলো যেন চুপ করে বসে থাকা আত্মহত্যার ফাঁদ। প্রায় ৭২ হাজার ভবন ধ্বংসের ঝুঁকিতে। দুই লাখ মানুষের জীবনের ওপর ঝুলছে এক অদৃশ্য তলোয়ার। রমনা, পুরান ঢাকা, মগবাজার, মিরপুর-এই এলাকাগুলোর অধিকাংশ বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে কোনও ভূমিকম্প সহনীয় নীতিমালা না মেনেই। বাংলাদেশে এখনো “নির্মাণ কোড” মানা হয় একটি বিলাসিতা হিসেবে। ইমারতের গায়ে পলিশ আছে, কিন্তু ভিতরে কংক্রিট ফাঁকা। ভবনের ডিজাইন হয়েছে ঠিকাদারের লাভ দেখে, মানুষের জীবন নয়।
বহুদিন ধরেই আমা যেনে আসছি-ভূমিকম্পের কারণ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ তিনটি প্রধান টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ইন্ডিয়ান প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট এবং বার্মা মাইক্রোপ্লেট। এই প্লেটগুলোর মধ্যে ক্রমাগত সংঘর্ষ ও গতি ভূমিকম্পের প্রধান কারণ। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতীয় প্লেট প্রতিবছর ইউরেশিয়ান প্লেটের দিকে ৫ সেন্টিমিটার অগ্রসর হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ায়।বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলো তুলনামূলকভাবে ছোট মাত্রার হলেও এগুলো বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে ৮.০ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষত সিলেট এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে। এটি দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
৭.৮ মাত্রার মাত্র এক মিনিটের ভূমিকম্পেই লন্ডভন্ড তুরস্কেও পরিকল্পিত গাজিয়ানতেপ শহর। বাংলাদেশে রিখটার স্কেলে যদি সাত মাত্রার ভূমিকম্প হয়, সেই ধাক্কা বাংলদেশ সামলাতে পারবে কি? ভূমিকম্প বিশ্লেষকরাতো বলছেন- কেবল ঢাকায় ধ্বসে পড়বে কয়েক হাজার ভবন, মৃত্যু হবে অন্তত দুই থেকে তিন লাখ মানুষের। গত ১৫ বছরে ছোট-বড় ভূমিকম্পে ১৪১ বার কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ। ১০০ বছরের মধ্যে এদেশে বড় ধরনের কোন ভূমিকম্প হয়নি। ভুমিকম্পবিদরা বলেন- বড় ভূমিকম্পের শত বছরের মধ্যে আরেকটি বড় ভূমিকম্প হয়। বড় ভুমিকম্পের ইতিহাস বলে শত বছর ঘনিয়ে এসেছে বাংলাদেশের।সে দিক থেকেও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের আশংকা’র কথাও শুনছি আমরা। আমাদের পত্রিকাগুলো এমন সংবাদই ছাপছে। তাতে করে ভূমিকম্প নিয়ে দেশে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে অনেক। যদি হয় ৯ মাত্রারর ভুমিকম্প বাংলাদেশের কি হবে ভাবা কি যায়? যে দেশটার ইট বালি রড সিম্টে সব কিছুতেই দুইনাম্বারী সেখানে অপরিকল্পিত বিল্ডিংগুলোর কি হবে? কি হবে জনগনের? এতো কিছুর পরেও বাংলাদেশ মোটেও প্রস্তুত নয়। ভুমিকম্প পরবর্তি উদ্ধার কাজের তেমন প্রস্তুতি নেই বাংলাদেশের। এ বিষয়ে বাজেটেও থাকে দুর্বল বরাদ্ধ। এ অবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় দেখছি না।দেশের ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে ঢাকা ও তার আশেপাশের এলাকা।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন এরকম হলে ঢাকা শহরটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের ১৪ কোটি মানুষ। কোনো কোনো পত্রিকায় বলা হয়েছে এ জাতীয় ভূমিকম্পে ৬ থেকে ২০ ফুট উপরে উঠে যাবে মাটি। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-তুরস্কে যে ভূমিকম্প হয়েছে, এর চেয়ে ছোট, অর্থাৎ, রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও শুধু ভবন ধস নয়, ঢাকার অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও গ্যাসলাইন এ নগরকে একটি অগ্নিকূপে পরিণত করতে পারে। কয়েক হাজার ভবন ধ্বসে পড়বে। মৃত্যু হতে পারে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের। কারণ, আমাদের ভবনগুলো এখনও নিরাপদভাবে তৈরি হচ্ছে না।বুয়েটের বিভিন্ন সময়ে করা জরিপে দেখা যায়, ঢাকায় ১৩ লাখ, চট্টগ্রামে ৩ লাখ ও সিলেটে ১ লাখ বহুতল ভবন রয়েছে। এসব ভবনের ৭৫ শতাংশ হচ্ছে ছয়তলা বা তার চেয়েও উঁচু। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এই ভবনগুলো ও এর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির সমীক্ষাতেই বলা হয়েছে, ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানীতে প্রায় ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা তাদের গবেষণা থেকে বলেছেন এখনই ভূমিকম্প হবে তা বলা যাবে না তা পাঁচশ’ বছর পরেও হতে পারে। দেশে কোথায় কবে কত মাত্রার ভূমিকম্প হবে কেউ আগে-ভাগে তা বলতে পারে না। সবই ধারণাপ্রসূ। হতেও পারে নাও হতে পারে। ভূমিকম্প কখন হবে, কবে হবে এবং ভূমিকম্প যেহেতু প্রতিরোধ করা যাবে না তাই এ নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশের মানুষকে অসুস্থ করে দেয়ার কোনো মানে হয় না। ভূমিকম্পের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে উদ্ধারে প্রস্তুতি থাকতে হবে। জনমনে আতঙ্ক তৈরি না করে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। জাপানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। জাপান ভয়কে জয় করেছে। তাই তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুবই কম। আমাদের সরকার আমাদের জনগণ ভূমিকম্পের ব্যাপারে সচেতন নয়। ঢাকা শহরে যতগুলো স্থাপনা থাকা দরকার তার চেয়ে ৫০ গুণ স্থাপনা তৈরি হলেও সরকারে এ ব্যাপারে মাথাব্যথা নেই। এখনও এ শহরে স্থাপনা নির্মাণের হরেদরে অনুমতি দেয়া হচ্ছে। শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, বাণিজ্যিক কার্যালয়, সচিবালয়সহ অন্যান্য অফিস শহরের বাইরে করার পরিকল্পনা সেই বহু আগে নেয়া হয়েছে কিন্তু তার বাস্তবায়নের কোনোই লক্ষণ নেই। উল্লেখিত অফিস-আদালতগুলো শহরের বাইরে হলে ঢাকার চাপ অর্ধেক কমে যাবে। মানুষ আর ঢাকামুখী হবে না। ঢাকা শহরে লোকজনের বসবাস কমে যাবে। তাতে ঢাকার চাপ কমবে। তখন ভূমিকম্প হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিচে নেমে আসবে।
সরকারের তরফ হতে যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণের কথা বলা হলেও ভূমিকম্প-পরবর্তী বিপর্যয় সামাল দেয়ার ন্যূনতম প্রস্তুতিও যে আমাদের নেই তা স্পষ্ট। ব্যাপক অভাব রয়েছে জনসচেতনতারও। ভূমিকম্পের ব্যাপারে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার কোনোটাই সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে অনেক মূল্যবান সময় অপচয় হয়েছে। আর বিলম্ব করা সমীচীন হবে না। ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের প্রকৃত সময় এখনই।
বিশ্বব্যাপী সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনাগুলো, যেমন নেপালের ভূমিকম্প এবং তুরস্ক-সিরিয়ার সাম্প্রতিক বিপর্যয়, আমাদের সতর্কতার বার্তা দেয়। এই বিপর্যয়গুলো দেখায় যে, ভূমিকম্প না শুধু অবকাঠামোগত ধ্বংস ডেকে আনে, বরং মানবিক সংকটও তৈরি করে।ভূমিকম্পের সম্ভাব্য প্রভাব হিসেবে বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং দুর্বল ভবনের কারণে, ভূমিকম্প হলে প্রাণহানির সংখ্যা ব্যাপক হতে পারে। ঢাকাসহ প্রধান শহরের অবকাঠামো ধসে পড়লে শিল্পক্ষেত্রে বিশাল ক্ষতি হবে। ভূমিধস, নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং মাটির উর্বরতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক আকার দেখা দিবে। পানি, বিদ্যুৎ এবং স্বাস্থ্যসেবার অভাবে ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে মহামারি দেখা দিতে পারে। ভূমিকম্প একটি বিপর্যয়কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা মানুষের জীবন, সম্পদ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ভূমিকম্পের কারণে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা সরাসরি এর তীব্রতা, ভূমিকেন্দ্রের গভীরতা এবং প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে। একটি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো যত দুর্বল, ভূমিকম্পের প্রভাব তত বেশি মারাত্মক।
বড় ভূমিকম্প হলে আমরা কতটা প্রস্তুতি?
বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তবে ভূমিকম্পের জন্য আমরা এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নই। ভবনের স্থাপত্য দুর্বলতা: অধিকাংশ ভবন ভূমিকম্প প্রতিরোধী নয়। নগর পরিকল্পনার ব্যাপক অভাব রয়েছে। ঢাকার মতো শহরে ভবন ও রাস্তার ঘনত্ব উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত করতে পারে। প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস ও তথ্য বিশ্লেষণে উন্নত প্রযুক্তি নেই। জরুরি সেবার ঘাটতি ব্যাপক। উদ্ধারকাজ এবং চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী ও সরঞ্জাম নেই।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (ডিএমএ) এবং অন্যান্য সংস্থা গুলোকে আরো বেশি ভাবতে হবে। সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে।স্কুল-কলেজে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালাতে হবে। ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশার বাস্তবায়ন করতে হবে।
একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা ভূমিকম্পের সম্ভাবনা মোকাবিলায় আমাদের একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন, যা অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে জনসচেতনতা পর্যন্ত বিস্তৃত। নতুন ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশা বাধ্যতামূলক করা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন গুলো ভেঙে ফেলা কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের পুনর্গঠন করা জরুরী। পুরোনো এবং দুর্বল ভবনগুলো চিহ্নিত করে মেরামত বা পুনর্র্নিমাণ করা নাহলে ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা বাড়বে। শহরে খোলা স্থান এবং জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ভিত্তি করতে হবে যা বাংলাদেশে অপ্রত্যূল। পূর্বাভাসের জন্য আধুনিক সিসমোগ্রাফ এবং মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করা জরুরী। ভূমিকম্পের তথ্য ও সতর্কতা প্রচারের জন্য মোবাইল অ্যাপ এবং অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার বাড়াতে হবে। শিক্ষা কার্যক্রম, স্কুল, কলেজ এবং কর্মস্থলে ভূমিকম্প পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাপক করতে হবে। গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভূমিকম্পের ঝুঁকি এবং প্রস্তুতি নিয়ে প্রচারণা বাড়াতে হবে। প্রশিক্ষিত কর্মী, দমকল বাহিনী, পুলিশ, এবং সেনাবাহিনীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমিক ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। উদ্ধারকাজে ব্যবহারের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করা জরুরী।জরুরি চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করতে হবে। যা এখনো অভ্যুতুল বলা যায়। বাংলাদেশ প্রবল ভূমিকম্পের দেশ হলেও আমাদের এই ভাবনাটা অনেক বেশি আছে বলে মনে হয় না। ভূমিকম্প-পরবর্তী সময় উদ্ধার কার্যক্রম যত দ্রুত সম্ভব জীবিতদের উদ্ধার করা। জরুরি চিকিৎসার মাধ্যমে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা। গৃহহীনদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা। জরুরি খাদ্য, পানি, এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনঃস্থাপন করার পূর্ব প্রস্তুতি থাকতে হবে।
সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা নেই বললেই চলে। তবে ভূমিকম্প প্রতিরোধে সরকারের কাজ কিছুটা হলেও শুরু হয়েছে, তা খণ্ড খণ্ড। বাজেটের আগে পরিকল্পনা আসে, বাজেটের পরে চাপা পড়ে যায়। একটি জরুরি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা দরকার-যেখানে থাকবে: (১) দুর্বল ভবন পুনর্গঠনের সময়সীমা, (২) নির্মাণ কোডের কঠোর প্রয়োগ, (৩)  প্রশিক্ষিত উদ্ধার কর্মী তৈরি, (৪)  ঢাকায় খোলা জায়গা সংরক্ষণ, (৫) নাগরিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন।
ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ করা সম্ভব নয়-কিন্তু প্রস্তুতির মাধ্যমে আমরা প্রাণ বাঁচাতে পারি, ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারি। আমাদের এখনই দরকার একটি জাতীয় জাগরণ-যেখানে সরকার, নাগরিক, প্রতিষ্ঠান সবাই একসাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় একযোগে কাজ করবে। প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতি, প্রতিটি স্কুলের মহড়া-এসবই মিলে গড়ে উঠবে একটি সহনশীল দেশ।

মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ। 


পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ


 
শক্তিশালী ইন্দোনেশিয়াকে রুখে দিলো বাংলাদেশ
শক্তিশালী ইন্দোনেশিয়াকে রুখে দিলো বাংলাদেশ
প্রথমবারের মতো  শক্তিশালী ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে দারুণ খেলেছে বাংলাদেশ। চোখে চোখে রেখে লড়েছেন বাংলাদেশ নারী দলের ফুটবলাররা। শেষ দিকে ভাগ্যকেও পাশে ...
কুষ্টিয়ায় ‘পোড়া থানা’র কার্যক্রম উদ্বোধনে বিএনপি-এনসিপির হট্টগোল
কুষ্টিয়ায় ‘পোড়া থানা’র কার্যক্রম উদ্বোধনে বিএনপি-এনসিপির হট্টগোল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে পুড়িয়ে দেয়া কুষ্টিয়া মডেল থানার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার আয়োজনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের ...
অভিনয়ে মৌসুমী, সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
অভিনয়ে মৌসুমী, সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় নায়িকা মৌসুমীকে অনেক দিন ধরেই পর্দায় দেখা যায় না। এর মধ্যে তাঁর চিত্রনায়ক স্বামী ওমর সানী জানান, ...
ট্রেনে ঈদযাত্রার প্রথম দিনে ঢাকায় শাস্তি পেলেন বিনা টিকিটের ৩৭ জন
ট্রেনে ঈদযাত্রার প্রথম দিনে ঢাকায় শাস্তি পেলেন বিনা টিকিটের ৩৭ জন
ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ট্রেনে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছে। ট্রেন যাত্রার প্রথম দিন শনিবার (৩১ মে) যাত্রীদের নির্বিঘ্ন ভ্রমণ নিশ্চিত ...
৫ আগস্টের পর শ ম রেজাউলকে অপহরণ করতে চেয়েছিলেন ছাত্রলীগ নেতা!
৫ আগস্টের পর শ ম রেজাউলকে অপহরণ করতে চেয়েছিলেন ছাত্রলীগ নেতা!
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কারা কীভাবে ...
গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট বৃষ্টি
গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট বৃষ্টি
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েল ভূখণ্ড লক্ষ্য করে বেশ কিছু রকেট ছোড়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। রোববার (১ জুন) ...
ঐক্য নেই বরিশাল বিএনপিতে : সরোয়ার
ঐক্য নেই বরিশাল বিএনপিতে : সরোয়ার
বরিশাল বিএনপিতে গ্রুপিং দীর্ঘদিনের। এ গ্রুপিংয়ের কারণে ‘কেন্দ্রীয় থেকে জাতীয়’ সব কর্মসূচি পালন হচ্ছে পাল্টাপাল্টি এবং বিচ্ছিন্নভাবে। বিশেষ করে ২০২৪-এর ...
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী দুই নেতাকে সেনাবাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ, ছুটে এলেন সারজিস
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী দুই নেতাকে সেনাবাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ, ছুটে এলেন সারজিস
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রংপুরের বাড়িতে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি ও জেলা ...
গণপিটুনি, ৯ মাসে নিহত ১৬৩
গণপিটুনি, ৯ মাসে নিহত ১৬৩
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে গণপিটুনি দিয়ে হত্যাকাণ্ড কীভাবে বেড়েছে তা উঠে এসেছে মানবাধিকার সংস্থা আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক পরিসংখ্যানে। সংস্থাটির ...
১০
আকার কমছে, বাজেটে বড় সংস্কার নেই
আকার কমছে, বাজেটে বড় সংস্কার নেই
দেশের অর্থনীতি নানা চাপের মুখে। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়েও ছোট করে এনেছে বলে ...
 
আত্রাইয়ে প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল
আত্রাইয়ে প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল
উত্তর জনপদের শষ্যভান্ডার খ্যাত সবুজ অরণ্যে ঘেরা নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার পথে-প্রান্তরে গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল। কালের ...
টাঙ্গাইলে শহীদ জিয়ার ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
টাঙ্গাইলে শহীদ জিয়ার ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
টাঙ্গাইলে সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শুক্রবার(৩০ মে) সকালে জেলা বিএনপির উদ্যোগে প্রেসক্লাবের ...
ঢাকার অনেক সড়কে পানি, মাঝরাতেও যানজটে ভোগান্তি
ঢাকার অনেক সড়কে পানি, মাঝরাতেও যানজটে ভোগান্তি
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে আজ দেশজুড়ে বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় সারাদিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে অধিকাংশ সড়ক। এতে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল ...
এক লাখ শ্রমিক নেওয়ার পরিকল্পনা জাপানের : প্রেস সচিব
এক লাখ শ্রমিক নেওয়ার পরিকল্পনা জাপানের : প্রেস সচিব
আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বড় পরিসরে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে জাপান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য ...
আমাদের শান্তিরক্ষীরা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত: সেনাপ্রধান
আমাদের শান্তিরক্ষীরা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত: সেনাপ্রধান
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী ...
সাগরে নিম্নচাপটি কোন বন্দর থেকে কত দূরে
সাগরে নিম্নচাপটি কোন বন্দর থেকে কত দূরে
উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে নিম্নচাপটি মোংলা সমুদ্রবন্দর ...
নেতানিয়াহুকে ইরানে হামলা করতে না করেছি : ট্রাম্প
নেতানিয়াহুকে ইরানে হামলা করতে না করেছি : ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ইরানে সামরিক হামলা না চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। চলমান পরমাণু আলোচনা ...
সবজির বাজার এখনও চড়া, দাম কমেছে মুরগির  
সবজির বাজার এখনও চড়া, দাম কমেছে মুরগির  
বৃষ্টির অজুহাতে সরবরাহ ভালো থাকলেও সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহের চেয়ে সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০ ...
উপকূল অতিক্রম করেছে গভীর নিম্নচাপ, অমাবস্যায় জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা
উপকূল অতিক্রম করেছে গভীর নিম্নচাপ, অমাবস্যায় জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে। এর ফলে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রবল দমকা হাওয়া ...
১০
প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে বিএনপিকে কেন দোষারোপ করলেন তা বোধগম্য নয়: সালাহউদ্দিন আহমেদ
প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে বিএনপিকে কেন দোষারোপ করলেন তা বোধগম্য নয়: সালাহউদ্দিন আহমেদ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন নিয়ে বিএনপিকে কেন দোষারোপ করলেন তা বোধগম্য নয় বলে জানিয়েছেন বিএনপি’র স্থায়ী ...
সম্পাদক ও প্রকাশক: ইউসুফ আহমেদ (তুহিন)
প্রকাশক কর্তৃক ৭৯/বি, ব্লক বি, এভিনিউ ১, সেকশান ১২, মিরপুর, ঢাকা ১২১৬ থেকে প্রকাশিত ও ৫২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, ঢাকা ১১০০ থেকে মুদ্রিত
বার্তাকক্ষ : +৮৮০১৯১৫৭৮৪২৬৪, ই-মেইল editor@natun-barta.com, Web : www.Natun-Barta.com.com