![]() আইসিএসবি কর্তৃক গভর্নেন্স নিশ্চিতকরণে পরিচালকদের ভূমিকা সংক্রান্ত সেমিনার আয়োজিত
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) এর চেয়ারম্যান, ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ভূইয়া। জনাব এ. এফ. নেসারউদ্দিন এফসিএস, সিনিয়র পার্টনার, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কো. চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস, সেমিনারের প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়াও আলোচক হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন জনাব একেএম হাবিবুর রহমান, চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি; জনাব মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক (সাধারণ), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি); এবং জনাব মোঃ আবদুল মুতালেব, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও (চলতি দায়িত্ব), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন আইসিএসবি-এর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট জনাব এম নুরুল আলম এফসিএস। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনাব এ. কে. এম. মুশফিকুর রহমান এফসিএস, আইসিএসবি-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সুরাইয়া পারভীন এন্ড অ্যাসোসিয়েটস (চার্টার্ড সেক্রেটারিজ, ফিনান্সিয়াল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্টস)-এর পরিচালক। অনুষ্ঠানে সূচনা-বক্তব্য প্রদান করেন জনাব মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এফসিএস, আইসিএসবির কাউন্সিল সদস্য এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি-এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার। অনুষ্ঠানে জনাব মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এফসিএস আইসিএসবি এবং চার্টার্ড সেক্রেটারী পেশা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করেন। তিনি সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। সেশন চেয়ারম্যান জনাব এম নুরুল আলম এফসিএস উপস্থিত সকল সম্মানিত অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও স্বাগত জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, স্বতন্ত্র পরিচালকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেন যে, হিসাব বিশ্লেষণ এবং গভর্নেন্স কাঠামো সম্পর্কে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দক্ষতা থাকা অত্যাবশ্যক। তিনি পেশাগত ক্ষেত্রে ধারাবাহিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক জনাব এ. এফ. নেসারউদ্দিন এফসিএস তার মূল প্রবন্ধে বলেন যে, পরিচালকগণ শেয়ারহোল্ডারদের অভিভাবকসম এবং তারই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও টেকসই কর্পোরেট গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠায় মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি তার বক্তব্যে গভর্নেন্সের মূল স্তম্ভ হিসেবে পিপল, পারপাস, প্রসেস এবং পারফরমেন্স—এই চারটি নিয়ামককে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেন। তিনি বোর্ডের গঠনের ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্য এবং বহুমুখী দক্ষতার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরেন। একটি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ অডিট, আর্থিক প্রতিবেদন এবং ইএসজি সংক্রান্ত বিষয়গুলো নজরদারির ক্ষেত্রে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টরদের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়াও বোর্ডে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব, দুর্বল কমপ্লায়েন্স এবং বোর্ডের অকার্যকারিতার কারণে সুশাসনের ব্যর্থতা হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন এবং শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, নৈতিকতার চর্চা এবং কার্যকর প্রয়োগ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পরিশেষে তিনি পরিচালকদের শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে নৈতিক নেতৃত্ব এবং সুদৃঢ় গভর্নেন্স ফ্রেমওয়ার্ক এর মাধ্যমে স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। জনাব এ. কে. এম. মুশফিকুর রহমান এফসিএস কর্পোরেট গভর্নেন্স নিশ্চিতকরণে পরিচালকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কি কারনে, কেন গুরুত্বপূর্ন কোম্পানির কর্মকাণ্ডকে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা প্রয়োজন এবং এর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং একটি ইতিবাচক কর্পোরেট সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পরিচালকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে জনাব মোহাম্মদ সানাউল্লাহ এফসিএস, কাউন্সিল মেম্বার এবং সিইও ও লিড কনসালটেন্ট, মোহাম্মদ সানাউল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস (চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্টস) কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) এবং সঠিক ব্যক্তিকে পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন প্রয়োজন। তিনি স্বতন্ত্র পরিচালক, মনোনীত পরিচালক, বিদেশি পরিচালক, অভ্যন্তরীণ অডিট বিভাগের প্রধান এবং এমন স্বতন্ত্র পরিচালক যারা পেশাদার নন এবং সেক্রেটারিয়াল অডিট বিষয়ে আলোচনা করেন। জনাব মোঃ আবদুল মুতালেব উল্লেখ করেন, আমরা দেখেছি- কীভাবে কার্যকর কর্পোরেট গভর্নেন্সের অভাবে ব্যবসায়িক খাতে; বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে, বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে এবং এই খাতে দক্ষ মানবসম্পদের অভাব প্রকট হয়েছে। সুশাসনের অভাবে একইভাবে অন্যান্য বাণিজ্যিক খাতেও স্থবিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার মতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই। জনাব মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পরিচালকগণই একটি প্রতিষ্ঠানের চালিকাশক্তি এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা পরিচালকদের অন্যতম দায়িত্ব। তিনি উল্লেখ করেন, নানাবিধ পরিস্থিতির কারণে অনেক স্বতন্ত্র পরিচালক তাঁদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে পারছেন না। তিনি বলেন, চার্টার্ড সেক্রেটারিগণ বোর্ড ও শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাদের ইতিবাচক ভূমিকা প্রয়োজনীয়। জনাব একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, যখন কোনো স্বতন্ত্র পরিচালক কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন, তখন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তারা কোম্পানি সেক্রেটারির মাধ্যমেই প্রথমিক ধারনা প্রাপ্ত হন। তবে নানাবিধ সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তারা প্রত্যাশিত অবদান রাখতে পারছেন না। তিনি বলেন, অনেক পরিচালক চেয়ারম্যানের নির্দেশনার বাইরে যেতে পারেন না, যার ফলে স্বাধীন মত প্রকাশ ও কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ পরিচালকের আর্থিক বিষয়ে পর্যাপ্ত দক্ষতা ও জ্ঞান না থাকায় অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেন না, ফলে অভিজ্ঞতা-সম্পন্ন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রধান অতিথি ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, চার্টার্ড সেক্রেটারি কোর্সের কারিকুলাম অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে প্রণীত, যেখানে আধুনিক কর্পোরেট ও আর্থিক খাতের প্রয়োজনীয়তা প্রতিফলিত হয়েছে এবং এই কোর্স আমাদেরকে জানাচ্ছে যে, আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরিচালকদের ভূমিকা অপরিসীম। তিনি আরও বলেন, তালিকাভুক্ত নয় এমন দুই লক্ষাধিক কোম্পানি ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসা হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে, তাই তাদের কার্যক্রম আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। এমন একটি সময়োপযোগী সেমিনার আয়োজন এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও আলোচনার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্য তিনি আইসিএসবিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এফআরসি এবং আইসিএসবির মধ্যে ভবিষ্যতেও পারস্পরিক কার্যক্রম ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে এবং চার্টার্ড সেক্রেটারিগণ বাংলাদেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উত্তরোত্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। তিনি এফআরসি-এর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস বাক্ত করেন। অনুষ্ঠানে আইসিএসবি-এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য অংশগ্রহন করেন, যার মধ্যে ছিলেন কাউন্সিল সদস্য জনাব সেলিম আহমেদ এফসিএস, জনাব অলি কামাল এফসিএস, জনাব মো. শরিফ হাসান এফসিএস, মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ এফসিএস, আবুল ফজল মোহাম্মদ রুবায়াত এফসিএস এবং সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারী বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবীগণ । আলোচনা পর্বের পর একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সেশন চেয়ার ও আলোচকবৃন্দ অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। পরিশেষে আইসিএসবি-এর কাউন্সিল সদস্য ও সেমিনার এন্ড কনফারেন্স সাব কমিটির সদস্য জনাব জনাব শেখ মোঃ সরফরাজ হোসেন এফসিএস অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক, আলোচকবৃন্দ, আইসিএসবি-এর সদস্যবৃন্দসহ অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। |