আজ রবিবার, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
 / বিশেষ / সিটিটিসির গুমঘরে তিন বছর, পরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে হস্তান্তর
সিটিটিসির গুমঘরে তিন বছর, পরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে হস্তান্তর
নতুন বার্তা, ঢাকা:
Published : Friday, 13 June, 2025 at 12:55 PM
সিটিটিসির গুমঘরে তিন বছর, পরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে হস্তান্তরচট্টগ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ অলিঅলিতে ঘুরে বেড়াতেন ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা এক ব্যক্তি। তার চেহারায় ছিল না কোনো রাজনৈতিক উত্তাপ, ছিল না বিদ্রোহী কোনো তকমা। কিন্তু এক বিস্ময়কর মুহূর্তে এসে জানা গেল তার পরিচয় রীতিমতো কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো। তিনি ছিলেন উৎপল দেববর্মা ওরফে ওমথাই। ছিলেন ত্রিপুরার স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (এনএলএফটি, বিশ্বমোহন) গ্রুপের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল।
২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পুলিশ ঘোষণা দেয়Ñ তারা উৎপল ও এনএলএফটির সাবেক আর্মি চিফ শচীন দেববর্মাকে গ্রেপ্তার করেছে। ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশের ভাষায়, তারা দুজন ‘সম্প্রতি সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন।’ কিন্তু আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তায় মোড়ানো এক কাহিনি। উৎপল ‘কথিত সম্প্রতি’ নয়, বরং ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) গোপন কারাগারে (আয়নাঘর) গুম ছিলেন।
গুম থাকার তিন বছর পরিবার, সহকর্মী, এমনকি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছেও তার খোঁজ ছিল না। আর এখন স্পষ্ট হচ্ছে, এই নিখোঁজ দশা নিছক গা-ঢাকা দেওয়া ছিল না, বরং তিনি ছিলেন গুমের শিকার।
এ ঘটনা শুধু একজন বিচ্ছিন্নতাবাদীর গল্প নয়, এটি এক আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক লেনদেন। পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অপ্রকাশিত ‘বন্ধুত্বের’ এক দলিল। কথিত এই বন্ধুত্বের কারণে মানুষ অদৃশ্য হয়ে যেত রাষ্ট্রের অলিখিত গোপন চুক্তির মাধ্যমে। এই গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন উৎপল দেববর্মা, যাকে আমরা চিনেছিলাম একজন ইজিবাইকচালক হিসেবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন রাষ্ট্রীয় সীমানা অতিক্রমকারী এক স্বাধীনতাকামী নেতা, ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল।

চট্টগ্রাম থেকে তুলে নিয়ে প্রথমে গুম, তারপর হস্তান্তর

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সিটিটিসির একটি বিশেষ ইউনিট উৎপলকে তুলে নেয় চট্টগ্রামের কোনো এক ব্যস্ততম রাস্তা থেকে। উৎপলের সঙ্গে দীর্ঘদিন সিটিটিসির গোপন কারাগারে গুম থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তার (উৎপল) বিরুদ্ধে ছিল না কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অপেক্ষায় ছিলেন আগরতলায় আর উৎপল তখন বাংলাদেশের অন্ধকারতম এক গুমঘরের ভেতরে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিলেন।
সাবেক বন্দিদের সূত্রে জানা গেছে, উৎপল গায়েব হননি। তাকে পরিকল্পিতভাবে রাখা হয়েছিল সিটিটিসির গোপন কারাগারে, যেখানে দিনের আলো পৌঁছাত না আর রাতের নীরবতা ছিন্ন করে ছিল শুধু বন্দিদের কান্না ও নির্যাতনের আওয়াজ।

কে এই উৎপল দেববর্মা?

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এনএলএফটি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। এক গোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন বিশ্বমোহন দেববর্মা। অন্য গোষ্ঠীর সুপ্রিমো ছিলেন পরিমল দেববর্মা। বিশ্বমোহন গ্রুপের দুই শীর্ষ নেতা ছিলেন শচীন দেববর্মা ও উৎপল দেববর্মা। ত্রিপুরার জাতিগত বিদ্রোহী সংগঠন এনএলএফটির সদস্য ছিলেন তারা।
সংগঠনটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ত্রিপুরার জনগণের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে আসছিল। এনএলএফটির বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিশ্বমোহন দেববর্মার নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীটি ছিল (এনএলএফটি, বিএম) অন্যতম। ভারত সরকার এনএলএফটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে।
বিশ্বমোহন দেববর্মার নেতৃত্বাধীন (এনএলএফটি, বিএম) অংশটি ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ত্রিপুরার দীর্ঘ ৩৫ বছরের সশস্ত্র বিদ্রোহের অবসান ঘটায়। ওই চুক্তিতে এনএলএফটি ও অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্সের (এটিটিএফ) মোট ৩২৮ জন সশস্ত্র সদস্য অস্ত্র সমর্পণ করে মূলধারায় ফিরে আসেন। ওই শান্তিচুক্তির কয়েক মাস আগেই উৎপল দেববর্মাকে সীমান্তে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সিটিটিসির গোপন কারাগারের ভেতরের গল্প

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোপন কারাগারগুলোর গল্প বিভিন্ন সময় বেরিয়ে এসেছে বেশ কয়েকজন হুইসেল ব্লোয়ার ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির মুখে। এমনই তিনজন ভুক্তভোগী উৎপল দেববর্মাকে সিটিটিসির গোপন কারাগারে দেখেছেন এবং তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বলছেন, উৎপল দেববর্মা প্রায় তিন বছর ওই গোপন কারাগারে বন্দি ছিলেন। তৎকালীন সিটিটিসির ডিসি জাহিদ হাসান ও এডিসি শেখ ইমরান ছিলেন ওই গুমের মূল ক্রীড়নক।
সিটিটিসির গোপন কারাগারে ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে গুম ছিলেন রেজা মাস্টার নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘উৎপল দেববর্মাকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়েছিল। তার বাড়ি ভারতের ত্রিপুরায়। দীর্ঘদিন তাকে সিটিটিসির গোপন কারাগারে গুম রাখা হয়। তিনি আমার দুই সেল পরেই ছিলেন এবং দীর্ঘদিন সেখানেই ছিলেন। আমাকে ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। দুই বছর পর আমি জামিন পাই। কিন্তু জামিন পাওয়ার পর ফের আমাকে জেলগেট থেকে তুলে আনে সিটিটিসির গোপন কারাগারে। তখনও আমি আমি তাকে (উৎপল) সেখানে দেখেছি।
রেজা মাস্টার বলেন, ‘উৎপলকে যেহেতু আমি তিন মাসের বেশি সময় কাছে থেকে দেখেছি, তাই তার নামটা আমার মনে আছে। তিনি আমাকে তার ব্যক্তিগত অনেক কথা শেয়ার করতেন। ধরে আনার সময় তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এজন্য উৎপল তাকে রান্নাবান্নায় সাহায্য করতেন। এসব কথা তিনি আমাকে বলতেন। এজন্য তার কথাগুলো আমার মনে আছে। সিটিটিসির গোপন কারাগারে আমরা ৮-১০ জনের মতো ছিলাম। একেকজন একেক রুমে। গুম হওয়াদের মধ্যে একজন কামরুল। আরেকজন ছিলেন হাজারীবাগের আনোয়ার। তিনি ওই গোপন কারাগারে দীর্ঘদিন গুম ছিলেন। পাশাপাশি রুমেই ছিলেন তারা। মাঈনুল ইসলাম নামে আরেক তরুণ ছিলেন, বাড়ি বরিশাল। তারা সবাই উৎপল দেববর্মাকে দেখেছেন। আরো অনেকেই ছিলেন ওখানে।’
রেজা মাস্টার আরো বলেন, ‘আরেকজন ছিলেন ড. মিনহাজ। সম্ভবত মালিবাগের বাসিন্দা। তাকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে এসেছিল। তিনিও এক-দেড় মাসের মতো সেখানে গুম ছিলেন। পরে তাকে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় ।’
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর কথা বলার সময় উৎপল কান্না করে দিতেন জানিয়ে রেজা মাস্টার বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর আমি জামিনে মুক্তি পেয়ে হঠাৎ উৎপলের কথা ভাবতে থাকি। পরে নেট ঘেঁটে ভারতীয় পত্রিকায় দেখলাম তাকে নাকি ইন্ডিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি অবাক হয়ে গেলাম ।’
উৎপলকে সিটিটিসির গুমঘরে দেখেছেন আরেক ভুক্তভোগী। ওই তরুণ এখন জামিনে মুক্ত। যদিও একাধিক মিথ্যা মামলা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে। মামলায় জর্জরিত ও নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে শেরপুরের ওই তরুণ আমার দেশকে বলেন, ‘২০২১ সালের ১৭ মার্চ কাশিমপুর-২ কারাগার থেকে জামিনে বের হলে আমাকে কারাফটক থেকে সিটিটিসি তুলে নিয়ে যায়। চারদিন গুম রেখে ২১ মার্চ ছেড়ে দেয় গুমের বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার শর্তে। তখন আমি উৎপল দেববর্মাকে সিটিটিসির গুমঘরে দেখেছি।’
ভুক্তভোগী ওই যুবকের দাবি, ‘যেহেতু গোপন কারাগারে অপর ব্যক্তির সঙ্গে সব সময় ঠিকঠাক কথা বলা যায় না, তাই এই চার দিনে তার (উৎপল দেববর্মা) সঙ্গে বেশি কথা হয়নি। মাঝেমধ্যে একটু কথা হয়েছে। তিনি আমাকে তার নাম বলেছিলেন উৎপল দেববর্মা ওরফে কিরণ। তার বাড়ি ত্রিপুরায়। তাকে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের শীর্ষ নেতা হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে তুলে এনে বাংলাদেশের গুমঘরে রাখা হয়েছিল। এর চেয়ে বেশি কোনো কথা হয়নি। আমি ছিলাম তার সামনের সেলে। তাই দুজন দুজনকে সব সময় দেখতে পারতাম। আমাকে প্রথম যেদিন তার (উৎপল) কাছে নিয়ে যায়, সেদিন তিনি আমাকে সিটিটিসির দেওয়া (তার জন্য বরাদ্দ) রুটি ও ডাল আমাকে খেতে দিয়েছিলেন।’
শেরপুরের ওই তরুণ বলেন, ‘অন্য বন্দিদের মুখে শুনেছি উৎপল দেববর্মাকে দীর্ঘদিন সিটিটিসির গোপন কারাগারে গুম রাখার পর ভারতীয় বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে এনএলএফটির সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল।’
সিটিটিসির গুমঘরে উৎপলকে দেখা ব্যক্তিদের মধ্যে আরেক গুমের শিকার ব্যক্তি হলেন চিকিৎসক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয় দক্ষিণখান ও মোহাম্মদপুর থানার মামলায়। মেজর জিয়াও ছিল ওই দুই মামলায় আমার কেস পার্টনার। পরে ওই দুই মামলায় আমি খালাস পাই। পরে আমাকে ২০২১ সালের ২৬ জুলাই আবার গুম করে সিটিটিসিতে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে আমি উৎপল দেববর্মাকে দেখেছি। একই সময় গুম ছিলেন মুফতি মাহফুজুর রহমান, রাসেল ও আব্দুর রহিম।’
মুজিবুর রহমান বলেন, ‘উৎপলকে রাখা হয়েছিল আমার পাশের কক্ষে। আরেকজন ছিলেন তার সঙ্গে। আমি গিয়ে যখন তাকে সিটিটিসিতে পাই, তখন তিনি (উৎপল) প্রায় ৩৭ মাস ওই কারাগারে বন্দি। এরপর আমি আরো ১০ মাস ওই গোপন কারাগারে গুম থাকি। তখনও উৎপলকে ছাড়া হয়নি। তার ব্যাপারে শুনেছিলাম, তিনি নাকি ভারতের কোনো স্বাধীনতাকামী সংগঠনের শীর্ষ নেতা । উৎপল এবং আমাকে পাশাপাশি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো।’
এ বিষয়ে মুফতি মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনিও উৎপলকে সিটিটিসির গোপন কক্ষে গুম করে রাখার বিষয়টি জানতেন বলে জানান।

দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার ‘অঘোষিত সহযোগিতা’

২০১৬ থেকে ২০২১ সাল— ওই সময়টাতে বাংলাদেশে গুমের সংখ্যা বেড়েছিল আশঙ্কাজনকভাবে। একই সময় ভারতের প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এবং পরে আত্মসমর্পণ বা গ্রেপ্তারের খবরে সংশয় তৈরি হয়েছিল। উৎপল দেববর্মা ও তার সঙ্গে সীমান্তে ‘গ্রেপ্তার দেখানো’ শচীন দেববর্মার ঘটনা এ সন্দেহকে আরো জোরালো করে।
ত্রিপুরা পুলিশের বিবৃতি অনুযায়ী, তারা ‘গা-ঢাকা’ দিয়েছিলেন। অথচ বাস্তবে উৎপল দেববর্মা বাংলাদেশে ঘুম ছিলেন। এটা শুধু আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন নয়; বরং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি গোপন বন্দিবিনিময় বা দমননীতি চালু থাকার ইঙ্গিত দেয়।
ভারতের কারাগারে বাংলাদেশি নাগরিকদের বন্দিত্বের ঘটনা একাধিক গুম ও রাষ্ট্রীয় সমঝোতার প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে আদালতের গেট থেকে গুম করার পর ভারতের দমদম কারাগারে সন্ধান পাওয়া যায়। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হওয়ার পর ভারতের শিলংয়ে ‘আবির্ভূত’ হন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীও ভারতের কারাগারে বন্দি ছিলেন, যা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছিল।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ফজলুল হক, পাবনার সোহেল রানা বিশ্বাস ও দিনাজপুরের নাসির উদ্দিন— এমন চার বাংলাদেশি নিখোঁজ থাকার পর একপর্যায়ে ভারতের বিভিন্ন কারাগার থেকে ‘উদ্ধার’ হন। তাদের পরিবারগুলোর অভিযোগ অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের তুলে নিয়ে গুম করে এবং পরে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের নাটক সাজিয়ে ফেরত পাঠায়।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক গুমবিরোধী কনভেনশন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে বেআইনিভাবে আটক রেখে তার অবস্থান গোপন রাখা আন্তর্জাতিক অপরাধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, উৎপল দেববর্মার ক্ষেত্রে এটি সরাসরি লঙ্ঘিত হয়েছে। এ অপরাধে কেবল বাংলাদেশ নয়, ভারতও সমানভাবে দায়ী। যদি এ দুটি রাষ্ট্র পরস্পরের সন্দেহভাজনদের গোপনে আটক রেখে হস্তান্তর করে থাকে, তাহলে তা এক ভয়ঙ্কর নজির তৈরি করছে দক্ষিণ এশিয়ায়। উৎপল দেববর্মা কেবল একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের নেতা ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন স্বামী, যিনি তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর কাছে ফিরতে চেয়েছিলেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ওমর শরীফ বলেন, “গুম, বিচারবহির্ভূত বন্দিত্ব এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তের ওপারে গোপনে হস্তান্তরের এ প্রবণতায় আইনি জবাবদিহির মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। এসব ঘটনার নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক তদন্ত সময়ের দাবি। নইলে ‘নিখোঁজ’ শব্দটি শুধুই সংখ্যার খেলায় পরিণত হবে, যার পেছনে থাকবে কান্না, লাশ, আর রাষ্ট্রীয় মেকানিজমে হারিয়ে যাওয়ার গল্প।”


পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ


এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
 
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে সতর্ক করল ইরান
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে সতর্ক করল ইরান
ইরানের রাজধানীর তেহরানের প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধে ইসরায়েলকে সাহায্য না করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সকে সতর্ক করেছে ইরান।আজ শনিবার ইরান ...
ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাত নিয়ে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাত নিয়ে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ইসরায়েলের হামলা এবং ইরানের পাল্টা হামলায় মধ্যপ্রাচ্য বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই সংঘাত শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা সংকট নয়, বরং ...
‘বিএনপির সঙ্গে যৌথ ব্রিফিং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে’
‘বিএনপির সঙ্গে যৌথ ব্রিফিং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে’
বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যৌথ প্রেস ব্রিফিং আগামী নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এছাড়া এটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় হয়েছে বলে মত ...
ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে শীর্ষে নিহার দুই নাটক
ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে শীর্ষে নিহার দুই নাটক
তরুণ অভিনেত্রী নাজনীন নাহার নিহা। অভিনয় ক্যারিয়ার বেশিদিনের নয়। অল্প সময়ের ব্যবধানে একের পর এক নাটকে অভিনয় করে দর্শকের প্রশংসা ...
অপ্রতিরোধ্য ইরান, ইসরায়েলের কোন ওষুধই কাজে আসছে না
অপ্রতিরোধ্য ইরান, ইসরায়েলের কোন ওষুধই কাজে আসছে না
ইসরায়েলের হামলার জবাবে মুহুর্মুহু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে ইরান। সব বাধা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উপেক্ষা করে একের পর এক আঘাত ...
ক্যানসার চিকিৎসার অভিনব পদ্ধতি প্রিসিশন অনকোলজি
ক্যানসার চিকিৎসার অভিনব পদ্ধতি প্রিসিশন অনকোলজি
জীবন্ত প্রাণীর কোষে ডিএনএ বা ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে। এ জিনোমিক উপাদান কোষ বৃদ্ধি, বিকাশ, গঠন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং রোগ-বালাইসহ প্রয়োজনীয় ...
প্রেমের ‘ফাঁদ’ পাতা ডেটিং অ্যাপ, সঙ্গী খুঁজতে গিয়ে হতে পারে যেসব বিপদ
প্রেমের ‘ফাঁদ’ পাতা ডেটিং অ্যাপ, সঙ্গী খুঁজতে গিয়ে হতে পারে যেসব বিপদ
নতুন প্রজন্মের অনেকেই সঙ্গী খোঁজার ক্ষেত্রে ডেটিং অ্যাপের ওপর ভরসা রাখছেন। আর মনের মানুষ খোঁজার চাহিদায়, ডেটিং অ্যাপগুলোর জনপ্রিয়তাও আকাশছোঁয়া। ...
ইন্সটাগ্রাম স্টোরি সেভ হওয়া বন্ধ করবেন যেভাবে
ইন্সটাগ্রাম স্টোরি সেভ হওয়া বন্ধ করবেন যেভাবে
কি করছেন, মনের কি অবস্থা কিংবা কোথায় যাচ্ছেন—বন্ধুদের তা জানাতে কে না চায়। ইনস্টাগ্রাম তার জন্য বড় মাধ্যম। তবে স্টোরিতে ...
জরায়ু ফাইব্রয়েড রোগীদের কী খাওয়া উচিত
জরায়ু ফাইব্রয়েড রোগীদের কী খাওয়া উচিত
জরায়ু ফাইব্রয়েড যা জরায়ু লিওমায়োমা নামেও পরিচিত। ফাইব্রয়েড মসৃণ পেশি কোষ ও তন্তুযুক্ত সংযোগকারী টিস্যু দিয়ে গঠিত। অনুমান করা হয়, ...
১০
ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১৬৯
ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১৬৯
এডিস মশাবাহী রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬৯ জন। শনিবার ...
 
স্ত্রীর সাথে অভিমান করে যুবকের আত্মহত্যা
স্ত্রীর সাথে অভিমান করে যুবকের আত্মহত্যা
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় স্ত্রী সাথে অভিমান করে কীটনাশক পানে ফজলে রহমান (৩৫) নামে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন।বুধবার (১১ জুন) সকালে ...
কালীগঞ্জে পচা মাংস বিক্রির অপরাধে ব্যবসায়ীর জেল
কালীগঞ্জে পচা মাংস বিক্রির অপরাধে ব্যবসায়ীর জেল
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে পচা মাংস বিক্রির অপরাধে শাহজালাল ইসলাম সাদা নামে এক মাংস বিক্রেতাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।মঙ্গলবার ...
টাঙ্গাইলে শাকিবের ‘তাণ্ডব’ সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধের নেপথ্যে
টাঙ্গাইলে শাকিবের ‘তাণ্ডব’ সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধের নেপথ্যে
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে নিরাপত্তা ও হুমকির মুখে ঈদ উপলক্ষে শাকিব খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’ সিনেমা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন আয়োজকরা।মঙ্গলবার (১০ জুন) ...
কালিহাতীতে প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের অভিযোগে ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
কালিহাতীতে প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের অভিযোগে ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জরিনা খাতুন (৩০) নামে মিনসিক ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওয়াহেদ আলী মন্ডল (৬০) নামের এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে ...
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার সাজ্জাদ
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার সাজ্জাদ
কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ফের অস্ত্রসহ কুমিল্লার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী।সোমবার (৯ জুন) রাতে নগরীর টমছম ...
উৎসবে পানি ঢাললো সিঙ্গাপুর, হেরে গেলো হামজা-শামিতরা
উৎসবে পানি ঢাললো সিঙ্গাপুর, হেরে গেলো হামজা-শামিতরা
দীর্ঘদিন পর ঢাকায় এসে ১০ বছর আগের স্মৃতিই ফিরিয়ে আনলো সিঙ্গাপুর। ২০১৫ সালে এই স্টেডিয়ামে প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশকে ২-১ গোলে ...
চামড়ার দেশে চীনা জুতা: সম্ভাবনার কুরবানি বাংলাদেশে
চামড়ার দেশে চীনা জুতা: সম্ভাবনার কুরবানি বাংলাদেশে
কোরবানির ঈদ আসে, চামড়ার পাহাড় গড়ে ওঠে ঈদের পরদিন। ট্রাকভর্তি কাঁচা চামড়া ছুটে চলে গুদামে, ট্যানারিতে, কারখানায়। শহরের অলিগলি থেকে ...
সিটিটিসির গুমঘরে তিন বছর, পরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে হস্তান্তর
সিটিটিসির গুমঘরে তিন বছর, পরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে হস্তান্তর
চট্টগ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ অলিঅলিতে ঘুরে বেড়াতেন ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা এক ব্যক্তি। তার চেহারায় ছিল না কোনো রাজনৈতিক উত্তাপ, ছিল ...
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক ১৩ জুন সকালে: প্রেস সচিব
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক ১৩ জুন সকালে: প্রেস সচিব
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকটি ১৩ জুন সকালে অনুষ্ঠিত হবে বলে ...
১০
ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক : লন্ডন যাচ্ছেন আমীর খসরু
ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক : লন্ডন যাচ্ছেন আমীর খসরু
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে যোগ দিতে লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির ...
সম্পাদক ও প্রকাশক: ইউসুফ আহমেদ (তুহিন)
প্রকাশক কর্তৃক ৭৯/বি, ব্লক বি, এভিনিউ ১, সেকশান ১২, মিরপুর, ঢাকা ১২১৬ থেকে প্রকাশিত ও ৫২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, ঢাকা ১১০০ থেকে মুদ্রিত
বার্তাকক্ষ : +৮৮০১৯১৫৭৮৪২৬৪, ই-মেইল editor@natun-barta.com, Web : www.Natun-Barta.com.com