![]() যুদ্ধের মুখে ইরান-ইসরায়েল, ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ৫টি সংকেত
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() দুই দেশের হুমকি-পাল্টা হুমকি, সামরিক মহড়া, ও ছায়াযুদ্ধে জড়িয়ে পড়া পরিস্থিতিকে ঠেলে দিচ্ছে এক ভয়াবহ সংঘাতের দিকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। যদি এ যুদ্ধ শুরু হয়, তবে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়- বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায়ও বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের চলমান পরমাণু আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে এবং পশ্চিমা জোট ইসরায়েলের প্রতি বিরক্ত- এই প্রেক্ষাপটে যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বেড়েছে। এই ৫টি ঘটনা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করছে, কীভাবে দুই শত্রু রাষ্ট্র ধীরে ধীরে সরাসরি সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে: ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে ইরানের বিস্তৃত প্রস্তুতি চীনের কাছ থেকে কয়েক হাজার টন অ্যামোনিয়াম পারক্লোরেট সংগ্রহ করছে ইরান- এই রাসায়নিক কঠিন জ্বালানিভিত্তিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল- এর তথ্যমতে, এই উপাদান দিয়ে প্রায় ৮০০ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা সম্ভব। এসব সরঞ্জাম ইরানের মিত্র বাহিনী যেমন ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের হাতেও পৌঁছাতে পারে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, ইরান শুধু নিজের প্রতিরক্ষা শক্তিই বাড়াচ্ছে না, বরং আঞ্চলিক মিত্রদেরও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করছে। হামলার জন্য ইসরায়েলের প্রস্তুতি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) সম্প্রতি ইরানবিরোধী একাধিক সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এতে একাধিক দিনব্যাপী অভিযানের অনুশীলন করা হয়, যার লক্ষ্য ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘ইসরায়েল আত্মরক্ষার অধিকার রাখে’ এবং কোনো চুক্তিতেই ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সুযোগ রাখা যাবে না। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে কূটনৈতিক সমঝোতার সময় আঘাত হানাকে ‘অযৌক্তিক’ বলেছিলেন, তিনিও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য হামলার পথ একেবারে বন্ধ রাখেননি। অঞ্চলজুড়ে ইরান-ঘনিষ্ঠ মিলিশিয়াদের তৎপরতা ইরান ও ইসরায়েল সরাসরি সংঘাতে না গেলেও তাদের মধ্যে ‘ছায়াযুদ্ধ’ চলছে সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে। সম্প্রতি ইসরায়েল এক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো সিরিয়ায় বিমান হামলা চালায়, যা ছিল সিরিয়া থেকে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার জবাব। একই সময় হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের তেলআবিবের উপকূলীয় শহর ইয়াফার দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার কুনেইত্রা অঞ্চলে ইরানপন্থী মিলিশিয়ারা ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে, যাতে ইসরায়েল প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং অঞ্চলটি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। নেতানিয়াহুর অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ ও রাজনৈতিক কৌশল ইসরায়েলে রাজনৈতিকভাবে চাপের মুখে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। দেশজুড়ে বিক্ষোভ, বিচার সংস্কার ইস্যু এবং গাজা যুদ্ধ নিয়ে গভীর বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ইরানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান ও সম্ভাব্য সামরিক অভিযান তার পক্ষে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় আবেগ গড়ে তুলতে পারে। নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইরান বর্তমানে ‘সবচেয়ে দুর্বল’ অবস্থায় আছে- এটাই আঘাত হানার সঠিক সময়। ইসরায়েলের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা ও ইরানের আঞ্চলিক জোট গঠন গাজা যুদ্ধের পর ইসরায়েল ক্রমেই আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়ছে। জর্ডান রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে নিয়েছে, তুরস্ক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এবং সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণ আলোচনা থেমে গেছে। একই সময়ে ইরান রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে, যা তাকে আঞ্চলিক ভারসাম্যের পাল্লায় শক্তিশালী করছে। এই পটভূমিতে ইরান বিশ্বাস করছে, তারা আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করেও নিজেদের স্বার্থে কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে? পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ইসরায়েল যখন নিজস্ব কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন ইরানও আক্রমণের সম্ভাব্য প্রতিশোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরমাণু কর্মসূচি থেকে ইরান সরতে রাজি নয়, অন্যদিকে ইসরায়েল তা থামাতে চায় যেকোনো মূল্যে। সামনের সপ্তাহগুলোতে ছোটখাটো সংঘর্ষ বড় যুদ্ধে রূপ নিতে পারে, যদি কূটনৈতিক পথে সমঝোতার সুযোগ চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়। বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি বৃহৎ যুদ্ধ শুধু একটি ‘ট্রিগার মুহূর্তের’ অপেক্ষায়। নিউজ উইকে আমির দাপ্তরিক কলাম থেকে অনুবাদ |