![]() অসচেতনতায় ফাঁকা শহরে বাড়তে পারে ডেঙ্গুর দাপট
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() তারা বলছেন, ঈদের ছুটিতে বিভিন্ন শহর ও নগরী অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যাবে। অনেকে এসময়ে গ্রামে চলে যাবেন। এসময় বাসাবাড়ির আঙিনা, সানসেটের ওপর, বারান্দা বা ছাদে পানি জমে এডিস মশার বংশবিস্তারের সুযোগ বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঈদে বিভিন্ন শহরের মানুষ গ্রামে চলে গেলে ফাঁকা বাসাবাড়িগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে এডিস মশার প্রজনন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। রাস্তায় পানি জমে থাকলেও এডিস মশার বিস্তার হতে পারে। তাদের পরামর্শ, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিকদেরও যতটা সম্ভব খেয়াল রাখতে হবে, বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানি যেন লম্বা সময় জমে না থাকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ৩ জুন আগের ২৪ ঘণ্টার যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যায়, একদিনে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৪ জন। এরমধ্যে বরিশালে সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে কম ময়মনসিংহে। ওই ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ৭৩ জন, ঢাকায় ৩২, চট্টগ্রামে তিন, রাজশাহীতে তিন, খুলনায় দুই এবং ময়মনসিংহে একজন আক্রান্ত হন। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩ জুন পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ৭০০ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৩ জন। এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দিন যত যাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে মে মাসে। ওই মাসটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৭৩ জন। জুনের প্রথম চারদিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩৮ জন। কী বলছে আবহাওয়ার বার্তা জানা গেছে, মে মাসের শুরুতে তাপপ্রবাহ থাকলেও মাসের শেষ দিকে বৃষ্টি বাড়ে। বিশেষ করে ২৭ মে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে দেশে টানা বৃষ্টি ঝরছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, বিদায়ী মে মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৬৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, মে মাসে সাধারণত গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৯৮ মিলিমিটার। তবে এবছর মে মাসে মোট বৃষ্টি হয়েছে ৪৮৬ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি। দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাই মাসে, গড়ে ৫২৩ মিলিমিটার। এরপরই বেশি বৃষ্টিপাতের মাস ধরা হয় জুন, ওই মাসে গড়ে বৃষ্টি হয় ৪৫৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার। আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, এখন যে বৃষ্টি হচ্ছে তা মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে। এই বৃষ্টিপাত আগামীকাল শুক্রবার (৬ জুন) থেকে অনেকটা কমতে পারে। ৭ জুন (ঈদের দিন) চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া অন্য অঞ্চলগুলোতে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তিনি বলেন, এরকম অবস্থা থাকবে ১০ জুন পর্যন্ত। এরপর বৃষ্টিপাত আবার বাড়তে পারে। এখন যেহেতু মনসুন পিরিয়ড বৃষ্টিপাত একেবারে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কম বেশি বৃষ্টি থাকবে। চলতি (জুন) মাসের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস বলছে, এ মাসটিতে স্বাভাবিক বা এর চেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে। মাসের মাঝামাঝি সময়ে সাগরে নিম্নচাপের সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রভাব যদি বেশি থাকে তাহলে বৃষ্টি বেশি হবে, কম থাকলে বৃষ্টিও কম হতে পারে। ডেঙ্গু রোধে করণীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুনে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে। সেজন্য সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এ বিষয়ে ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, এডিস মশা একসময় শহরে হতো। এখন সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। বরং শহরের বাইরে বেশি। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে মশা বাড়ছে। জমাট পানিতে মশা ডিম পাড়ে। মশার বংশবৃদ্ধি হয়। আমাদের ফ্রিজের নিচে, এসির নিচে, ফুলের টব, ছাদ ও বাসার চারপাশে যেন পানি জমে না থাকে। ‘যার যার ঘরবাড়ি নিজেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। ঘরের বাইরে মশা মারার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সিটি করপোরেশনগুলোকে। রাস্তার ধারে অনেক জায়গায় পানি জমে থাকে। যত্রতত্র পড়ে থাকা পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা বা চিপসের প্যাকেটে যেন পানি জমে না থাকে সে বিষয়গুলোর প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে। এগুলোর জন্য প্রশাসনকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে’- বলেন ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, বৃষ্টি হলেই ডেঙ্গু বাড়ে। এখন বৃষ্টি হচ্ছে। এই সময়টাই ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ডেঙ্গু থেকে বাঁচার প্রধানতম উপায় হলো এডিস মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এখন এডিস মশা থেকে বাঁচার কয়েকটা উপায় আছে- কেউ বহুতল ভবনে বসবাস করলে ভবনের ভেতরে বা আশপাশে যেন পানি না জমে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। জমলে ফেলে দিতে হবে। ঘরের ভেতরেও যেন পানি না জমে। ‘প্লাস্টিকের ড্রাম বা মাটির মটকিতে অনেকে পানি সংরক্ষণ করেন। এসব পানি তিনদিনের বেশি রাখা যাবে না। তিনদিনও রাখতে হবে ঢাকনা দিয়ে। না হয়, এডিস মশা এসে ডিম পাড়বে। এডিস মশা সাধারণত ভোরে এবং সন্ধ্যায় কামড় দেয়। এজন্য সাবধান থাকতে হবে’- পরামর্শ এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের। জ্বর হলেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা কিংবা গায়ে রেশ হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে নিজেরা চিকিৎসা করলে প্রচুর পানি, ডাব, ওরস্যালাইন, গ্লুকোজ ও ফলমূলের রস খেতে হবে। প্যারাসিটামলের বাইরে অন্য কোনো ধরনের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না। অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, জ্বর হলে এক-দুদিনের মধ্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা হয়। অথবা কোনো হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও যাওয়া যাবে। জ্বর হলে প্রচুর পানি বা নানান ধরনের জুস পান করতে হবে। জ্বরে হদুর্বলতা অনুভব করলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। সতর্ক প্রশাসন জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ডেঙ্গুর বিষয়ে আমরা বেশ সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। ঈদে তো আমাদের বর্জ্য অপসারণে বিশেষ কাজ চলবেই। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতার নিয়মিত কাজও চলবে। এছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি; ওয়ার্ড ক্যাম্পেইন হচ্ছে। ইউথ ক্যাম্পেইন হচ্ছে। মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যকর ব্যবস্থা করেছি। হাসপাতাল রেডি আছে। জরুরি ওষুধগুলোও কিনে রেখেছি।’ |