![]() ১২২১ জনকে পুশ ইন: ‘অবৈধ ভারতীয়দের’ পুশ ব্যাক শুরু করেছে বাংলাদেশ
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() তবে বিএসএফের পুশ ইনের পর আলোচনায় আসে বাংলাদেশে অবস্থান করা ‘অবৈধ ভারতীয়দের’ ফেরত পাঠানো বা পুশ ব্যাকের বিষয়ে। এরই মধ্যে অবৈধ ভারতীয়দের পুশ ব্যাক শুরু করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, ভারত যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সীমান্ত দিয়ে জোর করে লোকজনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করছে। বাংলাদেশে যেসব অবৈধ ভারতীয় অবস্থান করছে তাদের যথাযথ নিয়ম মেনে পুশ ব্যাক করা হচ্ছে। ভারত যাদের পুশ ইন করেছে তাদের ওপর নির্মম নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের শরীরে নিষ্ঠুরতার ছাপ ফুটে উঠেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ভারতের বিএসএফকে বারবার পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে পুশ ইন বন্ধ করার তাগিদ দিলেও তারা শুনছে না, পুশ ইন করেই চলেছে। বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু এলাকায় ঘন জঙ্গল ও দুর্গম পাহাড় থাকায় বিজিবির টহল কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিচ্ছে বিএসএফ। এ রকম ২৬টি সীমান্ত এলাকাকে ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিজিবি। ওই সব এলাকায় টহল জোরদার, সীমান্ত পাহারায় স্থানীয়দের যুক্ত করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ও অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পুশ ইনের ব্যাপারে অফিসিয়ালভাবে জানানোর পরেও তা ঠেকানো যাচ্ছে না। পুশ ইন থামানো না গেলে ভারত আরও উৎসাহিত হয়ে পুশ ইন বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে সংকট আরও গভীর হতে পারে। বিশেষ করে অতীতে আসামের কথিত অবৈধ বাংলাদেশি নিয়ে ভারত সরকারের যে তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে, সেটি আবারও শুরু হতে পারে। অতীতে তাদের প্রশাসনের করা মনগড়া তালিকা ধরে সেখানকার বাঙালিদের পুশ ইনের অপতৎপরতা শুরু হতে পারে। পুশ ইন বন্ধে প্রয়োজনে কূটনৈতিক পর্যায়ে দুই দেশের সরকার পর্যায়ে আলোচনা করতে হবে। এতেও কাজ না হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জাতিসংঘের দ্বারস্থ হতে হবে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কূটনৈতিক আলোচনায় পুশ ইন না থামায় আরও হার্ডলাইনে যাবে বাংলাদেশ। এজন্য ১ জুন স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া অবৈধ ভারতীয়দের পুশ ব্যাক শুরু করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশিদের নির্যাতন করছে ভারত সেলিনা বেগম নামের ৪১ বছরের একজন বাংলাদেশি নারী অভিযোগ করেছেন, বিএসএফ গভীর রাতে তাকে ও তার তিন মেয়ের শরীরে খালি প্লাস্টিকের বোতল বেঁধে দেয়। এরপর ত্রিপুরার সাবরাং সীমান্তের কাছে ফেনী নদীতে তাদের ফেলে দেয়। ফেনী নদী ত্রিপুরার সাবরাং জেলা ও বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার মাঝামাঝি সীমান্ত নির্দেশনা দেয়। বিএসএফ পুশ ইন করার পর ফেনী নদীতে তারা সারা রাত ভেসেছিলেন। পরদিন সকালে বাংলাদেশের সীমান্তের বাসিন্দারা তাদের উদ্ধার করেন। সেলিনা বেগম বলেন, ‘তারা (বিএসএফ) আমাদের কোমরে প্লাস্টিকের খালি বোতল বেঁধে নদীতে ফেলে দেয়। আমার সন্তানরা বুঝতে পারেনি কী হচ্ছে। আমরা সারা রাত নদীতে ভেসে ছিলাম।’ বিজিবি সূত্র জানায়, গত ২২ মে ভোর ৬টার দিকে রামগড়ের সোনাইপুল এলাকার কাছে স্থানীয়রা সেলিনা, তার স্বামী উম্মেদ আলী (৪৭) এবং মেয়ে রুমি খাতুন (১৬), রুম্পা খাতুন (১৫) ও সুমাইয়াকে (৬) ফেনী নদী থেকে উদ্ধার করে। পরে মহামুনি ক্যাম্প থেকে বিজিবির সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে হেফাজতে নেন। পরিবারটি তাদের জানিয়েছে, তারা ভারতের হরিয়ানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। হরিয়ানার স্থানীয় পুলিশ তাদের আটকের পর মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। তাদের জমানো অর্থ কেড়ে নেয়। অনেকটা অভুক্ত অবস্থায় তাদের একটা ট্রেনে তোলা হয়। কয়েক দফা ট্রেন পরিবর্তন করার পর তাদের আনা হয় ত্রিপুরা রাজ্যে। সেখান থেকে গাড়িতে করে সাবরাং জেলা শহরের সীমান্তবর্তী বিএসএফের একটি ক্যাম্পে আনা হয়। এরপর তাদের প্রত্যেকের শরীরে খালি প্লাস্টিকের বোতল বেঁধে দেওয়া হয়। ধরা পড়লে কী বলতে হবে তা শিখিয়ে দেয় বিএসএফ গত ১৭ মে ভোরে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও সীমান্ত থেকে জাহানারা খাতুন নামের একজনকে আটক করে বিজিবি। তার সঙ্গে সেদিন ১৭ জনকে আটক করে বিজিবি। যাদের প্রত্যেককেই ভারত থেকে পুশ ইন করা হয়। জাহানারা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএসএফ আমাদের বলেছে যে আমরা দুটো গুলি মারবো। গুলি মারার পরে তোমরা সব দৌড় মারবা। তো ওরা দুটো গুলি মারে। তখন আমরা সবাই সেখান থেকে দৌড় মারি। সামনে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়ি।’ তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে ঠেলে বাংলাদেশে ঢোকানোর সময় বিজিবির সামনে পড়লে কী বলতে হবে সেটাও শিখিয়ে দিয়েছিলো বিএসএফ সদস্যরা। বিএসএফ বললো, যদি ধরা পড়ো তাহলে বলবা যে আমরা ইন্ডিয়া যাচ্ছিলাম, সীমান্তে বিএসএফ তাড়া দেয়ায় দেশের ভেতরে আবার চলে আসছি।’ মুম্বাই থেকে উড়োজাহাজে কলকাতা, তারপর পুশ ইন জাহানার খাতুনের সঙ্গে পুশ ইনের পর বিজিবির হাতে আটক হন যশোরের নুরুন্নাহার। তিনি তিন বছর আগে কাজের খোঁজে ভারতের মুম্বাইয়ে গিয়েছিলেন। নুরুন্নাহার বলেন, ‘আমার এলাকার একজনের সঙ্গে মুম্বাই গিয়েছিলাম। সেখানে রুম ভাড়া করে থাকতাম। কাজ করতাম বিভিন্ন বাসাবাড়িতে।’ নুরুন্নাহারের বর্ণনা অনুযায়ী এপ্রিলের শেষ দিকে তিনি মুম্বাইয়ে ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হন। সেখানে ১৫ দিন আটক রেখে যাচাই-বাছাইয়ের পর বিমানে করে তাদের পাঠানো হয় কলকাতা। এরপর কলকাতা থেকে বাসে করে আনা হয় বাংলাদেশ সীমান্তে। গত ১৭ মে ভোররাতে তাদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ঠাকুরগাঁও সীমান্তবর্তী এলাকায়। ‘পুশ ইনে রাজি না হলে নির্যাতন চালায় বিএসএফ’ কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী সীমান্ত এলাকা দিয়ে গত ২৭ মে ভোরে ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ ইন করে বিএসএফ। পুশ ইনের সময় বিএসএফ তাদের হাতে বাংলাদেশি দুইশ টাকা, একটি পানির বোতল ও খাবার প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। পরে তাদের কাঁটাতারের বাইরে বের করে দেয়। কেউ আসতে না চাইলে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলে জানিয়েছেন পুশ ইনের শিকার এক ব্যক্তি। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকসহ পুশইন করা ব্যক্তিদের এমন স্বীকারোক্তিমূলক কয়েকটি ভিডিও রয়েছে আসামের মিকিরভিটা এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পুশইনের শিকার খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আসামের মিকিরভিটায় আমাদের মাটি (জমি) আছে, ঘরবাড়ি আছে। আমি সেখানকার একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমার মা-বাবা সেখানকার আদি বাসিন্দা। আমার বড় ভাই ও মা সেখানের ওয়ার্ড মেম্বার।’ ওই শিক্ষক আরও বলেন, “গত ২৩ মে আমাকে এসপি অফিসে তুলে নিয়ে আসা হয়। পরে সেখান থেকে ভারতের গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়া ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সোমবার (২৬ মে) ওই ক্যাম্প থেকে ফজরের নামাজের আগে কাঁটাতার পার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। সীমান্তে পাঠানোর আগে আমাদের প্রত্যেককে ২০০ টাকা, পানির বোতল ও প্যাকেট খাবার দেওয়া হয়। কেউ আসতে রাজি না হলে মারধর করে আসামের ভাষায় বলে ‘কিয় না যাও, যাবই লাগিবো। তোর ঘরত পৌঁছাই দিইম।’”। এদিকে পুশ ইন করাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে পুশ ইন ঠেকাতে এলাকাবাসী ও বিজিবি সীমান্ত এলাকায় কঠোর অবস্থান নেয়। ২৭ মে দুপুরে বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও বিএসএফ রাজি হয়নি। উল্টো বাংলাদেশের আকাশে ড্রোন ওড়ানো, সীমান্তে ভারী অস্ত্র তাক করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ২০০১ সালে ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী যুদ্ধে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমীন বলেন, ‘বিএসএফ জোর করে ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে। আমরা এলাকাবাসী ও বিজিবি বাধা দিতে গেলে বিএসএফ ভয় দেখাতে রাবার বুলেট ছোড়ে। এছাড়া তারা ভারত ও বাংলাদেশের আকাশে ড্রোন উড়িয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে। ওই সময়ে ভারতের সীমান্তে বেশ কিছু ভারী যানবাহন দেখা যায়।’ ২৫ দিনে ১৮ জেলা দিয়ে এসেছে ১২২১ জন বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বিএসএফ সুযোগ বুঝে একেক দিন একেক সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন করছে। বিজিবি সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৭ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এই ২৫ দিনে দুর্গম সীমান্ত দিয়ে এক হাজার ২২১ জনকে পুশ ইন করেছে বিএসএফ। এর মধ্যে মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে ৩৮০ জন, খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে ১৩২ জন, সিলেট সীমান্ত দিয়ে ১১৫ জন, কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ৯৩ জন, লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে ৮৫ জন, ফেনী ও ঝিনাইদহ সীমান্ত দিয়ে ৫২ জন করে, হবিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ৪১ জন, পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ৩২ জন, মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ৩০ জন, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ২৩ জন, ঠাকুরগাঁও ও চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ১৯ জন করে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ১৭ জন, সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ১৬ জন, দিনাজপুর সীমান্ত দিয়ে ১৫ জন, কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন ও কুষ্টিয়া সীমান্ত দিয়ে ৯ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবনের গহিন অরণ্যের মান্দারবাড়িয়া এলাকা দিয়ে ৭৮ জনকে পুশ ইন করেছে ভারত। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি পুশ ইনের ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলার তিন সীমান্ত দিয়ে। এ বিষয়ে বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু এলাকায় ঘন জঙ্গল ও দুর্গম পাহাড় থাকায় বিজিবির টহল কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিচ্ছে বিএসএফ। পুশইন ঠেকাতে রাতভর কড়া পাহারায় গ্রামবাসী ও বিজিবি দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় পুশ ইন ঠেকাতে গ্রামবাসী ও বিজিবির সদস্যরা রাতভর পাহারা দিচ্ছেন। অনেক সীমান্তে উত্তেজনাও বিরাজ করছে। সেখানে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে কুড়িগ্রামের কচাকাটা এলাকার শোভারকুটি ও শিপেরহাট সীমান্তে বিএসএফের পুশ ইন নিয়ে রাতভর চলে উত্তেজনা। এ সময় পুশ ইন ঠেকাতে বিজিবি ও আনসার ভিডিপি কঠোর অবস্থান নেয়। তাদের সঙ্গে পুশ ইন ঠেকাতে প্রায় এক কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় মানব দেওয়াল সৃষ্টি করে রাতভর পাহারা দেয় স্থানীয় হাজারো বাসিন্দা। স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবরী জেলার গোলকগঞ্জের বিএসএফ সদস্যরা পুশ ইন করতে দুটি পিকআপ ভ্যানে ৫০ থেকে ৬০ জন নাগরিককে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া ভারতের ফাইসকারকুটি গ্রামের একটি স্কুলে জড়ো করে। পরে সেই সীমান্তের সব বাতি বন্ধ করে পুশ ইন করার চেষ্টা করে বিএসএফ। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শত শত জনতা সীমান্তে অবস্থান নিয়ে পাহারা দেন। পরে কুড়িগ্রামে ২২ বিজিবির কচাকাটা ও কেদার ক্যাম্পের সদস্য ও আনসার-ভিডিপির কয়েকটি টিম সীমান্তে কঠোর অবস্থান নেয়। অন্যদিকে বিএসএফও অবস্থান নেয় ভারতীয় সীমান্তে। রাত ২টার দিকে শূন্য রেখায় অবস্থান নেয় বিএসএফ। এ সময় বিএসএফ কয়েক দফা বিজিবির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বিজিবি তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে রাত ৩টার দিকে শূন্য রেখা থেকে সরে যায় বিএসএফ। এ বিষয়ে কুড়িগ্রামে ২২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহাবুব উল হক বলেন, সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ যাতে অবৈধভাবে কাউকে পুশ ইন করতে না পারে সে জন্য বিজিবি, আনসার সদস্যসহ সীমান্তবাসী যৌথভাবে পাহারা দিচ্ছে। সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে। যা বলছেন বিশ্লেষকরা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘ভারত যথাযথ নিয়ম না মেনে পুশ ইন করছে। এভাবে পুশ ইন আন্তর্জাতিক কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না। আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে যদি কাউকে পুশ ইন করা হয় সেখানে কাদের পাঠানো হচ্ছে সে বিষয়ে তো আমাদের জ্ঞান নেই। এজন্য এটা গ্রহণযোগ্য নয়। ভারতের সঙ্গে কথা বলা দরকার এবং তীব্র প্রতিবাদ করা উচিত।’ অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, ‘যাদের পুশ ইন করছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশি যারা তারা কী উদ্দেশ্যে, কবে ভারতে গিয়েছিল, কোনভাবে গিয়েছিল, তাদের ভারতীয় বৈধ কোনো কাগজপত্র ছিল কি না? এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা দরকার। পুশ ইন জোর করে হলেও দেখার বিষয় বিজিবির কাছে সর্বোচ্চ কী দিকনির্দেশনা দেওয়া ছিল। সে অনুযায়ী তারা (বিজিবি) উপস্থিত ছিল কি না।’ কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদ বাড়ানো দরকার উল্লেখ করে আসিফ মুনীর বলেন, ‘প্রয়োজন হলে ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিকে ডেকে প্রতিবাদ জানানো হোক। যদি পুশ ইন চলমান থাকে সেটিও খোঁজ নেওয়া দরকার। ভারতের কাছে এমন কোনো তালিকা আছে কি না অথবা পরিকল্পনা আছে কি না।’ সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল বিজিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে পুশ ইন করায় বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মৌখিক ও লিখিতভাবে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। এছাড়া পুশইন রোধে বিজিবি সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল তৎপরতা বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পুশ ব্যাক শুরু করেছে বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠক ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। কূটনৈতিক তৎপরতা আগেও ছিল। তবে বৈঠকে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরালো করার কথা জানানো হয়েছে। পুশ ইনের মাধ্যমে যারা আসছে বাংলাদেশি প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের স্থানীয়ভাবে আশ্রয় দিয়ে রাখা হচ্ছে। অবৈধ ভারতীয়দের পুশ ব্যাক করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু পুশ ব্যাক করা হচ্ছে। তবে সেটা অফিসিয়ালি নয়। বাংলাদেশ যথাযথ নিয়ম মেনেই পুশ ব্যাক করছে। |