![]() মানবিক করিডর নিয়ে যুদ্ধে জড়ানোর শঙ্কা: মেজর (অব.) হাফিজ
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মানবিক করিডরের কথা বলেছে। বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের দেশ। আমরা জানি না, জনগণ জানে না, প্রতিনিধিরা জানেন না কী ধরনের করিডর দেওয়া হবে এবং এর লক্ষ্য কী। আমরা কি নতুন কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? এগুলো সম্পর্কে তো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলাপ-আলোচনা করার দরকার ছিল। কিন্তু দেখি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এক কথা বলেন, প্রেস সচিব আরেক কথা বলেন। জনগণ অন্ধকারে আছে, এটা কী ধরনের সরকার। আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশে অভ্যস্ত। গণতন্ত্রের জন্যই তো আমরা ১৬ বছর সংগ্রামের পর ওই মাফিয়া সরকারকে বিদায় করেছি। এখনো কেন আমরা অন্ধকারে থাকব? সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি; কিন্তু আমরাই জানি না কীসের জন্য এই করিডর দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। মেজর (অব.) হাফিজ অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারত হস্তক্ষেপ করেছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রত্যেক প্রকল্পে বাংলাদেশের নতজানু সরকার ভারতের কাছে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার দেশের মানুষের স্বার্থ না দেখে তারা এদেশকে ভারতের একটি কলোনি বানিয়ে দিয়েছিল। দেশের মানুষ দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে ওই মাফিয়া সরকারের পতন ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, এখন একটি নতুন অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানেই দুর্বল সরকার। কারণ, তাদের পেছনে কোনো জনসমর্থন নেই। আমাদের দল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে বারবার বলা হয়েছে, একটা নির্বাচন দেন। যাতে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অঙ্গনে আমরা বাংলাদেশের মানুষের দাবিগুলো তুলে ধরতে পারি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে আমরা যে বলিষ্ঠ ভূমিকা আশা করি, ততটা পাইনি। তবুও আমরা আশা করব, আগামী দিনগুলোয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বর্তমান অধ্যাপক ড. ইউনূসের সরকার বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, পানি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ৫৪টা নদী ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। প্রতিটির ওপর অগণিত বাঁধ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে আমাদের পানির নাব্য কমে গেছে। পানি ছাড়া বাংলাদেশের নদীমাতৃক দেশের কৃষককুলের যে করুণ অবস্থা, তা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশ অন্যান্য আগ্রাসনের মতো পানি আগ্রাসনের শিকার। কথাটি আমরা ১৬ বছর ধরে শুনিনি। না শোনার কারণ হলো, যারা এই আগ্রাসনের হোতা, তারা এমন একটি সরকার এখানে বসিয়ে রেখেছিল, যারা বাংলাদেশের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে প্রতিবেশীর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বৈঠকে অংশ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের এফেক্ট শুরু হয়েছে। এর যে বর্জ্য নদীতে পড়ছে, দিনকে দিন নদীগুলোর পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে আমরা ভয়ংকর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মওলানা হামিদ খান ভাসানী, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কথা বলেছেন। রিজভী বলেন, একটা স্টাইল হয়েছে যে, ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বললে সে বোধহয় পশ্চাৎপদ, সে বোধহয় আধুনিক নয়, সে প্রগতিশীল থাকবে না-এরকম প্রবণতা খুব পরিকল্পিতভাবে মাইন্ডসেটে ঢোকানো হয়েছে। আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে অনেকের মধ্যে এই প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু এদেশে ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে এ শব্দগুলো ব্যবহার করেছে বামপন্থিরা। কিন্তু এখন সেভাবে তারা সোচ্চার নয়। তিনি আরও বলেন, ফারাক্কা বাঁধ চালু করার বিষয় শেখ মুজিবকে জানানো হয়েছিল যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। তখন শেখ মুজিব অনুমতি দিলেন। সর্বনাশ সেদিনই হয়ে গেছে। এরপর আর তারা (ভারত) মনেই করেনি বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলা দরকার। আন্তর্জাতিক নার্স দিবস উপলক্ষ্যে পৃথক আরেকটি অনুষ্ঠানে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল একজন মহীয়সী নারী ছিলেন। একজন ধনী পরিবারের মেয়ে হয়ে সমাজকল্যাণের কাজে নেমে আসেন। তিনি মানুষের সেবার জন্য নার্সিং পেশা চালু করেন। তিনি শত্র“-মিত্র সবার সেবা করেছেন। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ সেবা, মায়ের সেবা। একজন নার্স মায়ের সেবা হিসাবেই দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু আমাদের দেশে তাদের প্রতি বৈষম্য দেখানো হয়। এমনকি নার্সদের আবাসন সুবিধা নেই। নিজের বেতন থেকে বাসা ভাড়া দিতে হয়। আমাদের যেমন ভালো ডাক্তার দরকার, তেমনই নার্সদের যে লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার, সেটি দিতে হবে। রিজভী বলেন, জানি না এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাত কীভাবে দেখা হবে, অথচ অত্যন্ত জরুরি এই সার্ভিসটা। কেন আমি ডলার খরচ করে ইন্ডিয়ায় যাব? কেন তাদের টাকা দিয়ে আসব? তারা প্রতিমুহূর্তে আমাদের নিয়ে নেগেটিভ বয়ান তৈরি করে অপপ্রচার করছে। তাদের পেছনে যদি আমরা ডলার খরচ না করে টাকাগুলো আমাদের নার্স-ডাক্তারদের পেছনে খরচ করি, তাহলে ইন্ডিয়ায় যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ডাক্তারদের লজিস্টিক সাপোর্ট ঠিক করতে পারলেই তো কেউ ওইদিকে (ইন্ডিয়া) যেত না। সেই কাজগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের করা দরকার ছিল। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএনপি নেতা আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, জাহিদুল কবির প্রমুখ। |