![]() বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নন-ক্যাডার কর্মকর্তা : তেত্রিশ বছরের নীরব কান্নার নাম
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() বর্তমানে পরিসংখ্যান কর্মকর্তার ৭১টি ক্যাডার পদের বিপরীতে ৭৬টি উপপরিচালক অর্থাৎ প্রায় ১০৭% ক্যাডার পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। তারমানে ৫টি ক্যাডার উপপরিচালক পদ শূন্যই থেকে যাচ্ছে। ওই ৭৬টি উপপরিচালক পদের মধ্যে ৫০টি ক্যাডার শিডিউলভুক্ত নয়। অন্যদিকে নন-ক্যাডার ১৫টি উপপরিচালক পদের বিপরীতে রয়েছেন ৯ম গ্রেডের ২৩৫ জন পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, ৪ জন কার্টোগ্রাফার ও ১ জন প্রকাশনা কর্মকর্তা (মোট ২৪০টি ফিডার পদ) অর্থাৎ ফিডার পদের বিপরীতে পদোন্নতির পদ মাত্র ৬%। ২০১১ সালের পূর্বে ৩৫টি পরিসংখ্যান কর্মকর্তার (নন-ক্যাডার) বিপরীতে উপপরিচালক পদ ছিল ১৫টি এবং ক্যাডার ৭০টি পরিসংখ্যান কর্মকর্তার বিপরীতে উপপরিচালক পদ ছিল ২৬টি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রথম দফায় ২০০টি ও দ্বিতীয় দফায় আরও ২৬৭টি পরিসংখ্যান কর্মকর্তার (নন-ক্যাডার) পদ সৃজনের অনুমোদন দেয়। যার মধ্যে কোনো এক অজানা কারণে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এ ৪৬৭টি পদের মধ্যে মাত্র ২০০টি সৃজনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। একই সঙ্গে ৫০টি উপপরিচালক, ৫টি যুগ্মপরিচালক এবং ১টি পরিচালক পদেরও অনুমোদন দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে এগুলো ক্যাডারভুক্ত করতে বিবিএস থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়। তখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অনুবিভাগ এতে অসম্মতি জানায়। এমতাবস্থায় তথ্য গোপন করে তৎকালীন স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষরিত একটি অবৈধ ডকুমেন্ট দেখিয়ে ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা এসব পদ ক্যাডার পদ হিসাবে সৃজন করে, যদিও ক্যাডারভুক্তির প্রধান শর্ত অর্থাৎ শিডিউলভুক্তি হয়নি। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ পদগুলোকে ক্যাডার পদ হিসাবে আদেশ জারি করার পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৫৬টি পদকে ক্যাডার হিসাবে সৃজিত নয় মর্মে শিডিউলভুক্তিতে আপত্তি জানায়। এদিকে নতুন সৃজিত নন-ক্যাডার পদগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সুযোগ না থাকাতে তারা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। বঞ্চিত নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা হাইকোর্টে একটি রিট দাখিল করেন ২০২২ সালে। গত বছর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিদ্যমান আইন বাস্তবায়ন করে অর্থাৎ শিডিউলভুক্তি ছাড়া পদোন্নতি না দিতে নির্দেশনা প্রদান করে রায় ঘোষণা করেন। তা স্বত্ত্বেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৩৬তম বিসিএস হতে নিয়োগপ্রাপ্ত ও ২০১৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির পদ থেকে ক্যাডারে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদান করে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, যা আদালত অবমাননার শামিল। একইভাবে ধীরগতিতে চলছে নন-ক্যাডারের ৩টি পরিচালক, ৩টি যুগ্মপরিচালক পদে পদোন্নতিও। উপমহাপরিচালক পদটি নন-ক্যাডারের হওয়া সত্ত্বেও সে পদে তাদেরকে পদোন্নতি প্রদান করা হচ্ছে না। ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সময় হলেই বিদ্যুৎ গতিতে ব্যবস্থা নেয়া হয়, অন্যদিকে নন-ক্যাডার কোনো পদোন্নতির পদ শূন্য হলে ডিপিসি মিটিং ডাকা নিয়ে শুরু হয় নানা রকম টালবাহানা। এটা ক্যাডারদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে, কেননা তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রকল্পসমূহের পিডিদের দ্বারা গঠিত সিন্ডিকেট দ্বারা পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিচালিত হয়। এদিকে এসব কর্মকর্তার অধস্তন কর্মচারীদের (জেএসএ/এসএ/টিএস/এসআই/চেইনম্যান) পদোন্নতি পেয়ে ক্যাডার উপপরিচালক/যুগ্মপরিচালক হওয়ার সুযোগ আছে। যাদের প্রারম্ভিক নিয়োগ বিপিএসসির সুপারিশে হয়নি বা এতো বেশি প্রতিযোগিতা করে তারা আসেনি। অথচ সরকারি কর্মকমিশনের কঠিন বৈতরণী পার হয়ে একজন প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা পদে যোগদান করেও সারাজীবনে একটি পদোন্নতির সুযোগও পাচ্ছেন না। অধস্তন যে কর্মচারীকে নিজ হাতে যোগদান করিয়েছেন, প্রশিক্ষিত করেছেন, কাজ শিখিয়েছেন; সেই কর্মচারীই তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হচ্ছেন; যা প্রচন্ড মানসিক পীড়ার কারণ। ফলে বিবিএস-এর মাঠপর্যায়ে ‘চেইন অব কমান্ড’ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিবিএস-এর বৈষম্যবিরোধী প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বিবিএস-এ চলমান প্রকল্পসমূহের মধ্যে মাত্র ১টির প্রকল্প পরিচালক নন-ক্যাডারের। ২৬৭টি ৯ম গ্রেডের পরিসংখ্যান কর্মকর্তার পদ অনুমোদন সত্ত্বেও সৃজনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এগুলো সৃজনের ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন, যাতে মাঠপর্যায়ের সকল কার্যালয়ের দপ্তর প্রধানের পদ প্রথম শ্রেণির গেজেটেড হয়। বাতিল করতে হবে কর্মচারী থেকে ক্যাডার পদে পদোন্নতির বিতর্কিত পদসোপান। ২৪০টি বিদ্যমান ৯ম গ্রেডের নন-ক্যাডার পদের বিপরীতে পদোন্নতির পদ মাত্র ১৫টি। তারা এ ২৪০টি পদের অন্তত ৬০-৭০% পদের বিপরীতে নন-ক্যাডার উপপরিচালক পদে পদোন্নতি দাবি করেন। এজন্য আসন্ন অর্গানোগ্রামে সদর দপ্তর, বিভাগীয় কার্যালয়, প্রশিক্ষণ একাডেমি ও উপজেলায় ৬ষ্ঠ গ্রেডের নন-ক্যাডার পদ সৃজনের আহ্বান জানান তারা। পাশাপাশি নন-ক্যাডারের সকল পদে সর্বোচ্চ সংখ্যক পদোন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের। আসন্ন অর্গানোগ্রামে এর প্রতিফলন চান তারা। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর একাধিকবার স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তারা। দাবি আদায় না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তারা। এদিকে জানা গেছে, পরিসংখ্যান ক্যাডারগণ আসন্ন অর্গানোগ্রামসহ নানা ইস্যুতে সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে তদবির করে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসন অনুবিভাগের যুগ্মসচিব পদে বসিয়েছেন ১৮তম বিসিএস-এর কর্মকর্তা ও হাসিনা সরকারের অন্যতম আস্থাভাজন কর্মকর্তা জনাব মোঃ মীর হোসেনকে। |