![]() ডায়াবেটিস: কোন ধরনটার ঝুঁকিতে আছেন? লক্ষণ ও পরীক্ষার খুঁটিনাটি
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() প্রায় সকল স্বাস্থ্যসচেতনরাই জানেন যে, ডায়াবেটিস দুই ধরনের রয়েছে- টাইপ ১ এবং টাইপ ২। আপনি কোনটার ঝুঁকিতে রয়েছেন? জানাটা অত্যাবশ্যক। টাইপ ১ ডায়াবেটিসকে 'ক্রনিক অটোইমিউন কন্ডিশন' বলা হয় যা সাধারণত শিশু বা বয়ঃসন্ধিকালে ধরা পড়ে। আর টাইপ ২ ডায়াবেটিস বাসা বাঁধে সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে। অগ্ন্যাশয় যখন ইনসুলিন নামক হরমোন উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তখন টাইপ ২ ডায়াবেটিস দেখা দেয়। এ অবস্থায় কোষগুলো গ্লুকোজ সংগ্রহ করে রক্ত থেকে। ডায়াবেটিস হলো কি না তা কেবল স্বাস্থ্যপরীক্ষার মাধ্যমেই জানা সম্ভব। প্রচলিত দুটো পরীক্ষা হলো এ১সি এবং প্লাজমা গ্লুকোজ পরীক্ষা। এখানে টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলোর জানান দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকার সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) পরামর্শ দেয়, দেহের অতি সাধারণ কিছু লক্ষণ ডায়াবেটিসের অশনিসংকেত বহন করতে পারে। এগুলো বুঝতে পারলেই ডাক্তারের কাছে গিয়ে ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা উচিত। এমনিতেই দুই ধরনের ডায়াবেটিসেরই কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। এগুলো কথা অনেকেই জানেন। এর মধ্যে রয়েছে- * প্রচণ্ড তৃষ্ণা পাওয়া * বিশেষ করে রাতে ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ করা * অকারণে ওজন হ্রাস * ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া * ঝাপসা দৃষ্টি * হাতে ও পায়ে এক ধরনের অসাড়তা চলে আসা * অবসাদ ভাব * ত্বকে বেশ চুলকানি ও শুষ্ক হয়ে যাওয়া * ক্ষত দ্রুত না শুকানো টাইপ ১ ডায়াবেটিসের অন্যান্য লক্ষণ এই লক্ষণগুলো খুব দ্রুত প্রকাশ পেতে পারে। কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যেই এগুলো স্পষ্ট হয়। সাধারণত শিশু ও কিশোর বয়সীদের মাঝে প্রকাশিত হয়। যদিও যেকোনো বয়সেই এসব লক্ষণের দেখা মেলে। তবে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অধিকাংশের লক্ষণগুলো ৪-৬ এবং ১০-১৪ বছর বয়সীদের মাঝে দেখা দেয়। শিশুদের মাঝে যে সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে- * হঠাৎ করেই এবং অকারণেই ওজন হ্রাস পাওয়া * মেয়েদের বয়ঃসন্ধির আগে দিয়ে ইয়েস্ট সংক্রমণ * মুখ থেকে ফলের গন্ধ বের হওয়া * ফ্লু সংক্রমণে যা ঘটে, যেমন মাথা ঘোরানো, বমি, শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা এবং জ্ঞান হারানো ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে থাকা। ডায়াবেটিস হয়ে গেছে কিন্তু ধরা পড়েনি- এমন অবস্থায় রক্তপ্রবাহে কিটোনেস নামক এক ধরনের পদার্থের সৃষ্টি হয়। তখনই ফ্লুয়ের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে। এ অবস্থাকে বলে 'ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস'। এটা স্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অন্যান্য লক্ষণ এই ধরনের ডায়াবেটিস আগেরটির তুলনায় অনেক ধীরগতিতে বাসা বাঁধে দেহে। কয়েক বছর ধরে তা চলতে পারে। সতর্কসংকেতগুলোও খুবই সূক্ষ্ম। এই ডায়াবেটিসের সুস্পষ্ট কোনো লক্ষণ মিলবে না। তবে কিছু বার্তা নজরে আসলেই পরীক্ষা করে ফেলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে রয়েছে- * সংক্রমণ সহজে না সারাই হওয়া এবং ক্ষত সহসা না শুকানো * হাত এবং পায়ে অসাড় বোধ করা * হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগা এখন ডায়াবেটিস হলো কিনা তা বোঝার জন্য যেসব পরীক্ষা রয়েছে তার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক। এ১সি: এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয় গত ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার গড় ঠিক আছে কিনা। এ পরীক্ষা করতে খালিপেটে থাকা বা বিশেষ কোনো পানীয় গ্রহণের শর্ত নেই। ফাস্টিং প্লাজমা গ্লুকোজ (এফপিজি): এ পরীক্ষার জন্য কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা আগ থেকে খালিপেটে থাকতে হয়। ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স (ওজিটিটি): ২-৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় হবে এ পরীক্ষা করতে। প্রাথমিক অবস্থায় একবার আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরখ করা হবে। এরপর দুই ঘণ্টার বিরতিতে নির্দিষ্ট মিষ্টি পানীয় গ্রহণের পর আবারও পরীক্ষা করা হবে। র্যান্ডম প্লাজমা গ্লুকোজ টেস্ট: এই পরীক্ষা যেকোনো সময়ই করা যায়। এর জন্য খালিপেটে থাকার দরকার নেই। তবে পরীক্ষা করার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে লক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। টাইপ ১ ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খাবারের সঙ্গে সঠিক ইনসুলিন এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আর যদি টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ভোগেন, তবে কেবল খাবার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের মাধ্যমেই সুস্থ থাকতে হবে। যদি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন থেকে বেরিয়ে এসে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হন, তবে এর মাত্রা স্বাস্থ্যকর সীমার নিচেও আনা যাবে না। এর জন্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ আপনাকে সহায়তা করবে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসাপদ্ধতি সময়ের সঙ্গে বদলাতে পারে। মনে রাখবেন, লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা না করার কারণে ডায়াবেটিস খারাপের দিকে যেতে থাকে। আবার অনেক সময় প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো শনাক্ত করাও যায় না। ডায়াবেটিস হয়েছে নিশ্চিত হতে অনেক সময় একাধিক পরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে। সূত্র: হেলথলাইন |