![]() আ.লীগ এমপির সম্পদ পাহারায় বিএনপি নেতার ছেলে
নতুন বার্তা, রাজশাহী:
|
![]() ক্ষমতায় থাকার কারণে অসংখ্য কুকর্মের হোতা ফারুকের বিরুদ্ধে কেউ আঙুল তুলতে পারেনি, কারো সাহস হয়নি তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলারও। তবে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার নামে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা, হত্যা-চেষ্টা, দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উল্লেখযোগ্য। আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। এর পরও সপ্তাহ তিনেক আগে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, রাজশাহীতে ফারুকের রয়েছে শত কোটি টাকার বিলাসবহুল ভবন। রয়েছে বাড়ি-গাড়ি, শপিংমল, বাগান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিনেছেন তিনশ’ বিঘা জমি। ঢাকায় রয়েছে ফ্ল্যাট, দামি প্লট, রয়েছে লন্ডন ও মালয়েশিয়াতে বিলাসবহুল বাড়ি। বেপরোয়া ফারুক বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেখানেও রয়েছে তার বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর থেকেই ফারুকের অঢেল সম্পদ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগলে রেখেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক সম্পাদক রশিদুজ্জামান মিল্লাতের ছেলে শাহাদাত বিন জামান শোভন। তাদের বাড়ি জামালপুরে। রশিদুজ্জামান সেখান থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ-সদস্যও। তার ছেলে জামান বিয়ে করেছেন ফারুকের বড় মেয়ে নাজিফা হক চৌধুরীকে। এই সম্পর্কের সুবাদে ফারুকের অবৈধ সম্পদের পাহাড় পাহারা দিতে রাজশাহীতে অবস্থান করছেন জামান। গণঅভ্যুত্থানের পর রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে, ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। কিন্তু ফারুকের অঢেল সম্পদে কেউ ফুলের টোকাও দিতে পারেনি। বাড়ি, ব্যবসা, মূল্যবান জমি, বাগান, পুকুরসহ সব সম্পদ জামানের তত্ত্বাবধানে থাকায় সেদিকে কেউ আঙুল তোলার সাহস পায়নি। আওয়ামী লীগ নেতার অবৈধ সম্পদ পাহারা দেওয়ার বিষয়ে রাজশাহী জেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জামান নিজেও ডুবেছে, বিএনপিকেও ডুবাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাবেক এক এমপির সম্পদ পাহারায় যেভাবে তিনি ‘ওয়াচডগের’ ভূমিকা পালন করছেন, তা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবেই যায় না। শুধু তাই নয়, তিনি দল ও তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়েও এলাকায় বিভিন্ন জায়গা থেকে মাসোহারা আদায় করছেন। যা দল ও তারেক রহমানের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করছে।’ গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে হামলার ঘটনায় সাবেক এমপি ফারুকের বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এছাড়া বিপুল পরিমাণ ‘অবৈধ সম্পদ’এবং বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে ফারুক ও তার স্ত্রী নিগার চৌধুরীর বিরুদ্ধে মার্চে ঢাকায় দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দেশত্যাগেও এ দম্পতির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রাজশাহীতে ফারুক চৌধুরীর ‘থিম ওমর প্লাজা’ নামে শত কোটি টাকার একটি ১০ তলা ভবন রয়েছে। এ ভবনের অর্ধ শতাধিক দোকান এবং ২০টি ফ্ল্যাট থেকে প্রতি মাসে অর্ধ কোটি টাকা ভাড়া তুলছেন বিএনপি নেতার ছেলে জামান। মহানগরীর সাগরপাড়ায় সাড়ে তিন বিঘার বিশাল বাড়িটিও তার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে শত কোটি টাকার জমি। এগুলোও দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। আওয়ামী এমপি ফারুকের অবৈধ সম্পদ পাহারা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাহাদাত বিন জামান শোভনের মোবাইল ফোন নম্বরে কয়েকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে ফারুকের বড় মেয়ে নাজিফা চৌধুরী বলেন, ‘আমার স্বামী বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করেন না। ফ্ল্যাট ও শপিংমলের ভাড়া আমরাই উত্তোলন করি। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।’ ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে ফারুককে মাদক কারবারিদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। হেরোইন চোরাচালানের আন্তর্জাতিক পথ রাজশাহীর গোদাগাড়ী। এ এলাকার অন্তত দেড় ডজন শীর্ষ হোরোইন কারবারির সঙ্গে ছিল ফারুকের হট কানেকশন। তাদের মধ্যে গোদাগাড়ী পৌরসভার মাদারপুরের চার ভাই মনিরুল, মেহেদী, সোহেল ও টিপু ফারুকের কথিত ভাগিনা ছিলেন। টিপুর কাছ থেকে প্রায় ৩২ লাখ টাকা মূল্যের একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস উপহার নেন ফারুক। গোদাগাড়ীর সম্প্রতি ৬ কেজি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হওয়া মাদকসম্রাট তারেক, নাসির উদ্দিন নয়ন, সেতাবুর রহমান বাবু মেম্বার, জাব্বার কাউন্সিলর ও রুমেল কাউন্সিলরের সঙ্গেও ফারুকের সখ্য ছিল। |