![]() প্রশাসনের সর্তকতা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন
সিলেটে বাড়ছে নদনদীর পানি,জনমনে বন্যার শঙ্কা:নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা
এমদাদুর রহমান চৌধুরী জিয়া, সিলেট ব্যাুরো:
|
![]() আবার উজানে ভারতের আসাম এবং মেঘালয়েও হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত। এর পানিও নেমে আসছে। সাংবাদিকতা পর্যন্ত সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সহ সিলেটের ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে আশপাশ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির দৃশ্য দেখা যায়। এ অবস্থায় সিলেটের নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু অংশ ডুবে গেছে। ফুঁসছে সুরমা-কুশিয়ারাও। বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও যখন তখন ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখী হতে পারে পুরো সিলেট বিভাগ। গত কয়েকদিন ধরেই সিলেট অঞ্চলে বন্যার পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির কারণে বরাবরই সিলেট অঞ্চল ভেসে যায়। এটা প্রতি বর্ষায়ই হয়। ![]() এদিকে আবার ক্ষনে ক্ষনে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে সুরমা কুশিয়ারা নদীর পানি। শুক্রবার বিকেলেও বিপৎসীমার কয়েক ফুট নিচে থাকলেও রাতেই তা আশঙ্কাজনক পর্যায়ের দিকে যেতে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৃষ্টি কেবল এদিকেই ঝরছে, তা না। ঝরছে উজানে, ভারতের আসাম এবং মেঘালয় রাজ্যে। ভারী না, রীতিমতো অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে সেখানে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে মোট ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আসাম মেঘালয়ের বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে আসে সুরমা কুশিয়ারা এবং সারি, সারিগোয়াইন, লোভাছাড়ার মতো পাহাড়ী নদী হয়ে। আর তখন দুকূল ছাপিয়ে পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সুরমা-কুশিয়ারা যেভাবে ফুঁসছে, যখন তখন বন্যা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ২ দশমিক ৫২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শনিবার সকাল ৬টায় বইছিল বিপৎসীমার ১ দশমিক শূণ্য ৪ মিটার নিচ দিয়ে। আর বিকেল ৩টায় এ পয়েন্টে সুরমার পানি বইছিল বিপৎসীমার ১ দশমিক শূণ্য ৯ মিটার নিচ দিয়ে। পানি যেভাবে ঘন্টায় ঘন্টায় হ্রাসবৃদ্ধি হচ্ছে, এতে যখন তখন ভয়াবহ রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে সিলেট পয়েন্টে সুরমা শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বইছিল বিপৎসীমার দুই দশমিক ১৯ মিটার নিচ দিয়ে। শনিবার সকাল ৬টায় এই পয়েন্ট পানি ছিল বিপৎসীমার ১ দশমিক ৮৬ মিটার নিচে। আর বিকেল ৩টার দিকে পানি ছিল ১ দশমিক ৪৯ মিটার নিচে। অর্থাৎ এ পয়েন্টে ৯ ঘন্টায় পানি বেড়েছে ৩৭ সেন্টিমিটার। এদিকে কুশিয়ারার পানি আমলসীদে শুক্রবার সন্ধ্যায় ছিল বিপৎসীমার ৫ দশমিক ৪২ মিটার নিচে। শনিবার দুপুর ১২টায় এ পয়েন্টে পানি বইছিল বিপৎসীমার ২ দশমিক ৪৭ মিটার নিচ দিয়ে। বিকেল ৩টার হিসাব দিতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ পয়েন্টে সকাল ৬টায় পানি ছিল বিপৎসীমার দুই দশমিক ৯২ মিটার নিচে। ৬ ঘন্টার ব্যবধানে এ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৪৫ সেন্টিমিটার। শেওলা পয়েন্টেও যথারীতি ফুঁসছে কুশিয়ারা। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় এ পয়েন্টে পানি ছিল বিপৎসীমার ৪ দশমিক শুণ্য ৪ মিটার নিচে। শনিবার সকাল ৬টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার নিচে। আর বিকের ৩টায় পানি ছিল বিপৎসীমার ২ দশমিক ৬৫ মিটার নিচে। অর্থ্যাৎ এ পয়েন্টে ৯ ঘন্টায় পানি বেড়েছে ৬২ সেন্টিমিটার। ফেঞ্চুগঞ্জে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কুশিয়ারা পানি ছিল বিপৎসীমার ১ দশমিক ৬৭ মিটার নিচে। শনিবার সকাল ৬টায় ছিল ১ দশমিক ৪৬ মিটার নিচে। বিকেল তিনটায় ছিল ১ দশমিক ১১ মিটার নিচে। ৯ ঘন্টায় এ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বেড়েছে ৩৫ সেন্টিমিটার। এদিকে সিলেট নগরে গত ২৪ ঘণ্টার টানা অতি বৃষ্টির কারণে সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিভিন্ন স্থানে তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)। খোলা হয়েছে একটি বিশেষ জরুরি কন্ট্রোল রুম বলে নিশ্চিত করেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা নেহার রঞ্জন পুরকায়স্থ । সিসিক সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি (কক্ষ নং ২০৫) কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। জরুরি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা: তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর, যোগাযোগ: ০১৭১১৯০৬৬৪৭, সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন, প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান, মোবাইল: ০১৭১৩৩১১৫২৬, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ একলিম আবদীন, মোবাইল: ০১৭৬৯০০৫৮৫৬ সিসিকের এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে পরিস্থিতি সরাসরি পরিদর্শন করবেন এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৫টার মধ্যে সকল ওয়ার্ড থেকে জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি নিষ্কাশনের অগ্রগতির প্রতিবেদন সিসিকের আইসিটি শাখার ইমেইলে (1gcc1@lgd.gov.bd) পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ এই ভারী বৃষ্টিতে নগরীর জিন্দাবাজার, ক্বিন ব্রিজ এলাকা, আম্বরখানা, বন্দরবাজার, টিলাগড়, উপশহর, লালদিঘীরপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় হাঁটুপানি জমে যায়। অনেক বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে শনিবার (৩১ মে) বিকেলে সিলেটের সারিঘাট, রাংপানিসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। জেলায় বিভিন্ন এলাকায় এখনো বন্য পরিস্থিতি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। আগের প্রস্তুতি অনুযায়ী আশ্রয় কেন্দ্র গুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া বর্ষাকাল আসার পূর্বেই সকল পাহাড়টিলা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশনাদেয়া হয়েছে বলে ও জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক। |