![]() শপথেও ইশরাকের জটিলতা না কাটার শঙ্কা, ‘নির্বাচন চায় সরকার’
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() এমন পরিস্থিতিতে ডিএসসিসি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) নির্বাচন জরুরি বলে মনে করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই নির্বাচন আয়োজনে শিগগির স্থানীয় সরকার বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দেবে বলে একাধিক সূত্র জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, ইশরাক হোসেনের শপথ ঘিরে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তা স্থানীয় সরকার আইনে সমাধান কঠিন। এজন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কথা ভাবছে সরকার। এ নির্বাচন আয়োজনে আসন্ন ঈদুল আজহার পরপরই ইসিকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিরোধিতা করছে বিএনপি। তবে ইসি বলছে, আগে কোন নির্বাচন হবে, সেটা সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশন শুধু সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের বিকল্প নেই বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নাগরিক সেবা অব্যাহত রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচন করা জরুরি। জাতীয় নির্বাচনের জন্য স্থানীয় নির্বাচন আটকে রাখা বা বাধা দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। তবে সংস্কারের আগে সিটি নির্বাচন করলে আরও জটিলতা সৃষ্টি হবে। তাই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছানো দরকার। ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ নিয়ে যত জটিলতা ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তখন নির্বাচনে জাল ভোট ও কারচুপি হয়েছে জানিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। পরে গত ২৭ মার্চ ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। পরদিন ২৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদের পাঠানো একটি লিগ্যাল নোটিশে রায় ও শপথ অনুষ্ঠান নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়। এ নিয়ে রিট করা হয় উচ্চ আদালতে। কমিশনের দেওয়া গেজেট স্থগিত চেয়ে রিটের ওপর গত মঙ্গলবার (২০ মে) শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (২২ মে) আদেশ দেন আদালত। এ আদেশে ইশরাকের শপথে বাধা নেই বলে জানান আদালত। তবে আদালতের এ রায়ের পর রিট খারিজের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী। আগামী ৭ দিনের মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার জন্য সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মী হোসাইন মোহাম্মদ আনোয়ারের পক্ষে নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেন শপথ নিতে পারবেন কি না, সেটি স্পষ্ট করা হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। কারণ, আইনি অনেক জটিলতা রয়েছে। যেমন, গত ৩ আগস্ট গোপনে দেশ ছাড়েন শেখ ফজলে নূর তাপস। পরে ২৬ সেপ্টেম্বর তাপসসহ দেশের সব সিটি মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করে সরকার। আবার শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচনের সাড়ে চার মাস পর (১৬ মে, ২০২০) ডিএসসিসির মেয়রের দায়িত্ব নেন। ২০২০ সালের ২ জুন করপোরেশনের সব কাউন্সিলরকে নিয়ে প্রথম বোর্ড সভা করেন শেখ তাপস। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ অনুযায়ী, মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম বোর্ড সভা থেকে তার মেয়াদকাল শুরু হয়। অর্থাৎ, নতুন মেয়র যেদিন কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রথম সভা করেন, সেদিন থেকেই শুরু হয় তার পাঁচ বছরের মেয়াদকাল। এই হিসাবে আগামী ১ জুন পর্যন্ত শেখ তাপস মেয়রের দায়িত্বে থাকার কথা ছিল। এখন যদি ইশরাক হোসেন শপথ নেন, তিনি ১ জুনের আগেই দায়িত্ব ছাড়তে হবে। অথচ একজন মেয়র পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। এমন অবস্থায় ইশরাককে শপথ পড়ালে ফের সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলে আসবে। আবার যদি ইশরাক চেয়ারে বসে দায়িত্ব ছাড়তে না চান, নিজেকে পাঁচ বছরের জন্য মেয়র পদের বৈধতার রায় নিয়ে আসেন তাহলে আরেক জটিলতা হবে। তাই শপথ নিয়ে গড়িমসি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে গত ১৪ মে থেকে ডিএসসিসির নগর ভবন ও এ ভবনে থাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন ইশরাকের সমর্থকরা। পরে গত ২১ ও ২২ মে তারা কাকরাইলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যাওয়ার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে বৃহস্পতিবার (২২ মে) এই রিট খারিজ করে শপথ পড়ানোর নির্দেশ দেন আদালত। পরে আপাতত ৪৮ ঘণ্টার জন্য আন্দোলন স্থগিত করেন ইশরাক। জানতে চাইলে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘একজন মেয়র শপথ নেওয়ার পর কতদিন দায়িত্ব পালন করবে তা স্থানীয় সরকার আইনে বলা আছে। এখন মেয়রের সময় নিয়ে যে জটিলতা দেখানো হচ্ছে, তা যুক্তিসঙ্গত নয়। আমি মনে করি, আমি পাঁচ বছরের জন্যই নির্বাচিত হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশের পর থেকে শপথ পড়ানো নিয়ে টালবাহানা করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। প্রতিবাদে লাগাতার আন্দোলন করছেন ঢাকাবাসী। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে শপথ পড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত।’ তবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এতদিন পর ইশরাক হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করায় নাগরিকদের মনে এক প্রকার বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের প্রশ্ন, এখন যদি ইশরাক মেয়র পদে বসেন এবং ক্ষমতা ছাড়তে না চান তখন একটা জটিলতা তৈরি হবে। কারণ, মেয়র নির্বাচিত হন পাঁচ বছরের জন্য। এখন কেন তিনি ৮-১০ দিন দায়িত্ব পালন করবেন।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ইশরাক উচ্চ আদালতে মামলা করলে তা ঝুলে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে নগরের অবকাঠামো উন্নয়ন ও অন্য সেবামূলক কাজ করা কঠিন। এর বড় কারণ, এখন তো করপোরেশনে কোনো কাউন্সিলরই নেই। তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ইসির উচিত এসব জটিলতা তৈরি না করে সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেওয়া।’ স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এখন স্থানীয় সরকার সংস্কারের কাজ চলছে। এর আগে সিটি নির্বাচন দিলে তো সংস্কারের দরকার হয় না। তাহলে তো সে আগের অবস্থায়ই রয়ে যাবে। আবার সংস্কার ছাড়া ইশরাক শপথ নিলে কয়েক দিন পর যদি আবার নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়, তখন কী হবে? এসব বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। এমন পরিস্থিতিতে সবার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী করবে।’ স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চান এনসিপির নেতারা মঙ্গলবার (২০ মে) রাতে নিজ কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সেখানে ইসি পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি মেয়র হিসেবে বিএনপির ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে যে সংকট, তা সরাসরি ইসি তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, ইসি ওই মামলায় উচ্চ আদালতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি এবং আপিলও করেনি। ফলে এটা খুবই স্পষ্ট যে তারা একটা দলের পক্ষ নিচ্ছে, একটা প্রার্থীর পক্ষ নিচ্ছে। এই কমিশনের ওপর জাতীয় নির্বাচন বা যে কোনো নির্বাচনের আস্থা রাখা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। এর আগের দিন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তার ফেসবুক পোস্টে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জানান। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। বুধবার (২১ মে) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিয়কালে এনসিপির দাবির বিষয়ে সানাউল্লাহ বলেন, এ সিকোয়েন্সিং অব ইলেকশন, কোনটা আগে হবে, কোনটা পরে হবে, এটা নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই। সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে কোন নির্বাচন আগে হবে, পরে হবে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নির্বাচন আয়োজন করা। |