![]() আইএমএফের ঋণের কিস্তি: শর্ত নিয়ে দরকষাকষি, কোনো পক্ষে ছাড় নয়
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডলারের প্রবাহ যেভাবে বেড়েছে, তাতে আইএমএফের ঋণের প্রয়োজন তেমন নেই। তবে তাদের ঋণ পেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের অর্থনীতি যে স্থিতিশীল এমন একটা বার্তা যায়। এ কারণেই সরকার এখনো আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে আইএমএফ ঋণের চুক্তি থেকে বেরোতে চাচ্ছে না। কারণ তাদের ঋণ কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে গেলে বৈশ্বিকভাবে আইএমএফ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যায়। এ কারণে দুই পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, আইএমএফের সঙ্গে ঋণ নিয়ে এর আগে যত দরকষাকষি হয়েছে তা বেশিমাত্রায় হয়নি। এবারই দরকষাকষির মাত্রা বেশি ছিল। এর আগে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার সময়ে রিজার্ভ ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। পরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করে। ওই সময়েও তাদের সঙ্গে ব্যাপক দরকষাকষি হয়। এটিকে রাষ্ট্রের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয় হিসাবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। যা দেশের জন্য ইতিবাচক। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ২০২২ সালে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। তারা নানা শর্তে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তি মেলে। গত বছরের জুন পর্যন্ত তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার ছাড় করেছে। গত ডিসেম্বরে চতুর্থ কিস্তি ছাড় করার কথা ছিল। এ বিষয়ে আলোচনা করতে গত নভেম্বরে আইএমএফ মিশন বাংলাদেশ সফর করে যায়। কিন্তু ওই সময়ে শর্ত বাস্তবায়ন নিয়ে সমঝোতা হয়নি। ফলে ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড় করেনি। ওই সময়ে বলা হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে ছাড় করবে। পরে তা পিছিয়ে মার্চে নিয়ে যায়। পরে বলা হয়, এপ্রিলে ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। তখন গত ডিসেম্বর ও আগামী জুনের কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করা যাবে। কিন্তু বসন্তকালীন বৈঠকেও দুই পক্ষের আলোচনায় সমঝোতা হয়নি। ওই সময়েই অনলাইনে বৈঠক করার বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হয়। ইতোমধ্যে গত সোম ও মঙ্গলবার দুই দফা বৈঠক হয়েছে। এতেও সমঝোতা হয়নি। এ মাসের আরও একটি বৈঠকের কথা রয়েছে। সূত্র জানায়, দীর্ঘ দরকষাকষির পর ওয়াশিংটন বৈঠকে আইএমএফের সঙ্গে তিনটি শর্ত বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দেয়। এগুলো হচ্ছে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, রাজস্ব আয় বাড়ানো ও ব্যাংক খাতের পুনরুদ্ধারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আইএমএফকে জানানো। এর মধ্যে রাজস্ব আয় ও ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। রাজস্ব আয় পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে। ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। এখন বাকি রয়েছে একটি শর্ত, ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। সরকার এতে রাজি নয়। কারণ এখন বাজারে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। ডলারের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আমদানিও স্বাভাবিক। এ অবস্থায় ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে এর দাম বেড়ে যাবে। টাকার মান কমে যাবে। তখন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে। বাড়বে মূল্যস্ফীতির হার। এখন সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে। এটি বেড়ে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল। এখন কমে ৯ শতাংশের ঘরে এসেছে। আগামীতে আরও কমবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশাবাদী। কিন্তু এখন আইএমএফের শর্তে ডলারের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য ব্যর্থ হবে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতে রাজি হচ্ছে না। তবে সর্বশেষ বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দামের সীমা আরও বাড়াতে সম্মত হয়েছে। আইএমএফ এখনো এতে সম্মত হয়নি। এ বিষয়ে আগামী বৈঠকে আরও আলোচনা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, দুই পক্ষ মৌলিক অনেকগুলো শর্ত থেকে আলোচনা করে একটি শর্তে এসেছিল। এখন এটি নিয়ে আরও আলোচনা হবে। এর মাধ্যমে একটি সমঝোতা হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশাবাদী। |