![]() মানবিক করিডোর: বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া:
|
![]() বাতাসে ভারতের সাত রাজ্য নিয়ে খ্রিষ্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্র গড়ার গুঞ্জন ভেসে বেরাচ্ছে। পূর্ব তিমুরের মতো আরেকটি খ্রিষ্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্র তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বলেই অনেকে মনে করেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্রগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সমস্যা এবং সেন্টমার্টিনে নঙ্গর পরিকল্পনার পুরোন কাসুন্দি নতুন কৌশলে সামনে চলে আসছে বার বার। ভৌগলিক ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ভারত মহাসাগর-সেন্টমার্টিন-বঙ্গপসাগর-রাখাইন রাজ্য-খ্রিস্টান অধ্যুষিত সাত রাজ্য যোগ গুঞ্জনে রয়েছে পার্বত্য জেলাগুলোর একাংশ। আশঙ্কাকে একেবারে ফেলে দেয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এসব অঞ্চলে তথাকথিত এনজিও গুলো কি এবং কিসের আর্থ-সামাজিক উন্নতি সাধন করেছিলো সেসব নিয়েও আজ প্রশ্ন উঠছে। সব কিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে, Bangladesh just committed one of the most dangerous geopolitical moves in its recent history under the illusion of Òhumanitarian aid’| মানবিক করিডোর আসলে কি ? ÒHumanitarian CorridorÓ আসলে কী। টমানবিক করিডোর বলতে বুঝায় সাহায্য পাঠানোর রাস্তাঘাট। কিন্তু বাস্তবে ওরা যেটা বানায় সেটা হলো : -➤ এনজিও টাইপ তাঁবু বসায়, ➤ ইনটেলিজেন্স অফিসার ঢুকে, ➤ “মানবিক সহায়তা”র নামে মিলিটারি ম্যাপিং তৈরী হয়, ➤ বিদেশি অস্ত্র, ড্রোন, ডেটা আস্তে আস্তে ঢুকে, ➤ কিছুদিন পর সেই অঞ্চল আর নিজের থাকে না। এরই মধ্যে কিছু রাষ্ট্রের যে মানবিক করিডোর সেগুলো বিশ্লেষন করলেই বুঝা যাবে আরাকানের সাথে মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠা হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত কি হতে পারে ? মানবিক করিডোর কিভাবে দেশ ধ্বংস করে ? সিরিয়া : - মানবিক সাহায্যের নামে তাবু বসানো হয়েছিল। এরপর সেই রাস্তাতেই অস্ত্র ঢুকছে, বিদ্রোহী ট্রেনিং ক্যাম্প বসছে। ISIS আর আল-নুসরা এই করিডরের মাধ্যমেই তৈরী হয়েছে। ইরাক : "No-fly zone" ছিল কাগজে। বাস্তবে সেই অঞ্চলে US মিলিটারি বেস বসানো হয়েছিল। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পথ এভাবেই তৈরী করা হয়েছিল। লিবিয়া : "Protection corridor" দেয়া হয়েছিল Qaddafi’র বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের জন্য। এক মাসের মধ্যে NATO ওই করিডর দিয়ে ঢুকে পুরো দেশটাকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজা : "মানবিক সাহায্য" পাঠানোর জন্য Rafah গেটে করিডর দেয়া হলো। আর এখন সেই করিডোর দিয়েই মোসাদ-এর লোকজন ঢুকতে ব্যবহার করে। গোপন ইন্টেল, হামাস সদস্যদের লোকেশন, সব কিছু ওই গেট দিয়েই বের করা হয়। আফগানিস্তান : "সাহায্য দিতে CIA করিডর বানায়"। সেই উছিলা দিয়ে বেস তৈরী করা হয়। সেখান থেকেই চালানো হয়েছিল ড্রোন হামলা, খুন, আর গোয়েন্দা অপারেশন। ১৯৮৯ সালে আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যকার প্রথম যুদ্ধের পর করিডোরটি চালু হয়েছিল। এর নিরাপত্তায় যুক্ত হয়েছিল রুশ শান্তিরক্ষী বাহিনীও। ২০২০ সালে এক যুদ্ধে আজারি বাহিনী লাচিন করিডোর দখলে নেয়। শুরুতে কিছুদিন ভালো চললেও এরপর সেটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। প্রতিপক্ষ এটিকে সামরিক সরবরাহ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ‘অবৈধ’ পরিবহনের কাজে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করে কয়েক বছর পরই তা বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে, এ অভিযোগ অস্বীকার করে আর্মেনিয়াসহ অন্যরা। এরপর ২০২৩ সালে নাগর্নো-কারাবাখ পুরো দখলে নেয় আজারবাইজান। সেখানকার অধিবাসীদের বেশিরভাগ বাস্তুচ্যুত হয়ে লাচিন করিডোর দিয়ে আর্মেনিয়া কিংবা অন্যত্র চলে যান। বসনিয়া যুদ্ধের সময়ে ১৯৯৩ সালে বসনিয়া ও হার্জেগোবিনাতে স্রেব্রেনিকা ছিটমহলসহ কয়েকটি ‘নিরাপদ এলাকা’ ঘোষণা করেছিল জাতিসংঘ। নিরাপত্তা পরিষদের দুটি প্রস্তাবের আলোকে যে ছয়টি এলাকাকে ‘নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয় সেগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী। জাতিসংঘের সেই ‘নিরাপদ এলাকা’ গঠনকে বর্তমানে ওই যুদ্ধের সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কেননা, কোন নিরাপদ এলাকাকে সুরক্ষিত রাখা হবে, তা সুস্পষ্ট ছিল না জাতিসংঘের প্রস্তাব। ওই প্রস্তাবের কারণে জটিল পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল। যেসব দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল, অনেকটা রাজনৈতিক কারণে মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি তারা। ১৯৯৫ সালের দিকে নিরাপদ এলাকাগুলোতে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে, যার পথ ধরে স্রেব্রেনিকা গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। মনে রাখতে হবে, একদিন যারা বানিজ্য করতে এসেছিলো আর প্রলুব্ধ হয়ে কেড়ে নিয়েছিলো বাংলা-ভারতের স্বাধীনতা। বাংলাকে দুশত বৎসর কলোনি বানিয়ে দেশীয় খাদেম দ্বারা নিপিড়ন-নির্যাতন-লুন্ঠন, শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন এবং পণ্য বিক্রয়ের তীর্থক্ষেত্রে পরিনত করেছিলো। অনেক স্বাধীনতাকামীকে জীবন দিতে হয়েছে তার মাতৃভুমির স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীনতা হয়েছিলো, বিজয় হয়েছে কিন্তু মুক্তি আসেনি। সিংহাসনে যিনি আরোহন করেছেন তিনিই জনগনের ভাগ্য নিয়ে খেলেছেন বার বার। বস্তুত করিডরের মাধ্যমে আরাকান আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে নিরাপত্তার কৌশলগত ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদকে ব্যবহারের সুযোগ দিতে চায়। এর ফলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দিতায় জটিলতার মধ্যে জড়িয়ে পরবে। বিশ্বের খুব কম মানবিক করিডরই নিরাপত্তাঝুঁকির বাইরে থেকেছে। এ ধরনের করিডর চালু হলে সেই অঞ্চলে থাকা বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ অপরাধীরা সেটাকে নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহারের বহু নজির রয়েছে। বাংলাদেশ হয়ে যে ত্রাণ যাবে, তা রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকদের কাছে পৌঁছাবে, নাকি আরাকান আর্মি সেগুলোকে দখলে নেবে, তার নিশ্চয়তা জাতিসংঘ কি ভাবে দিবে, তা পরিষ্কার নয়। এখানে প্রধান দুটি পক্ষ মিয়ানমার জান্তা সরকার এবং রাখাইনের নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। মিয়ানমারের এ অঞ্চলটি মাদক, অস্ত্র এবং নারী ও শিশু পাচার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। করিডোর দিলে মাদক বা অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশের শঙ্কা থাকবে। এ ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে বর্তমানে কোনো স্বীকৃত প্রশাসন নেই। ফলে সেখানকার অস্বীকৃতদের সঙ্গে কোনো ধরনের দরকষাকষির আলাদা ঝুঁকি রয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তো রয়েছেই। গত সরকার একক সিদ্ধান্তে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে এবং বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। যার কারণে নিরাপত্তাসহ সামাজিক নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে আরও ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা শোনা যাচ্ছে। এতে করে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে সকলেই আশঙ্কা করছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আর কোন সমস্যা সৃষ্টি করা উচিত হবে না। আমরা আরেকটা ‘গাজায় পরিণত হতে চাই না’ বাংলাদেশকে কোন যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না। আমাদের দেশে এস কেউ সমস্যা সৃষ্টি করুক সেটিও আমাদের কাম্য হতে পারে না। একে তো আমাদের দেশ রোহিঙ্গা নিয়ে বড় সমস্যায় রয়েছে, তার ওপর প্যাসেজ দেওয়া নিয়ে যাতে সমস্যার সৃষ্টি না হয় এ জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। ‘মানবিক করিডোর’ পেতে শুধু বাংলাদেশের ওপর নির্ভর না করে প্রতিবেশী অন্য দেশেও চেষ্টা করা উচিত জাতিসংঘের। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মানবিক করিডরের প্রস্তাব জাতিসংঘ থেকে আসুক অথবা আমেরিকা থেকে আসুক, তা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। ইতিহাস বলে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কঙ্গো অথবা সিরিয়া, কোথাও মানবিক করিডরের বাস্তবায়ন সফল হয় নাই। ইউক্রেন-রাশিয়াতে জাতিসংঘ প্রস্তাবিত মানবিক করিডরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আজ জনমনের প্রশ্ন হলো - বাংলাদেশ আজকে করিডর খুলে দিয়ে বলা হলো "এইটা মানবতা", তারপর ৬ মাস পরে যদি সেখানে NGO দিয়ে মিলিটারি ম্যাপিং হয়, কোন এক রাতে surveillance drone নামে বা কোন এক সকালে UN interfaith cleric গিয়ে মুসলিম ক্যাম্পে বক্তৃতা দেয়, আর ২ বছর পরে সেই এলাকাই Òsafe zone” ঘোষণার নামে দখল হয়, তখন আপনি আমি কী করতে পারবো ? তখন এদশের জনগন কি করতে পারেবে ? একই স্ক্রিপ্ট বারবার। শুধু রং আর ভাষা বদলায়। তাই সকলকেই এ শপথ নিতে হবে, এত কথা বুঝি না, শুধু এতোটুকু বুঝি, প্রিয় মাতৃভূমির এক ইঞ্চি জমিও কোন বিদেশি পরাশক্তির ব্যবহার করার সুযোগ দিতে চাই না। দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা আপসহীন। খুজে বের করতে হবে এই করিডরের পেছনে খেলোয়াড় কারা ? তাদের চিহ্নিত করতে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে। শাসকগোষ্টি সহ সকলকে মনে রাখতে হবে, জীবনে যা কিছুই করো না কেন? মাতৃভুমির সুখের চাবিকাঠি অন্য কারো হাতে তুলে দিও না। কখনোই কারো ওপর এত বেশি নির্ভরশীল হইও না যে, তারা তোমাকে পুতুলরাজ বানিয়ে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পুরন করবে। বিশ্ব রাজনীতির ভয়ঙ্কর খেলা, যার দাম শোধিতে হবে নতুন প্রজন্মকে ? স্বাধীন রাষ্ট্র সিকিমের প্রধানমন্ত্রী কাজী লেন্দুপ দর্জি আজও ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছে। স্বাধীন সার্বভৌম সিকিম পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার ক্রীড়ানক ছিলেন লেন্দুপ দর্জি। বাঙালী প্রজন্মকে সিকিমের করুণ পরিণতির ইতিহাস জানাতে হবে, এটা অগ্রজের দ্বায়িত্ব। সিকিমের ইতিহাস সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার সবচেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরণ। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। করিডোর পরিচালনায় যে ধরনের সম্পদ ব্যবহার করতে হয় তা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এটা শুধু স্থলভাগে নিরাপত্তা দিতে হয় না, এটা আকাশপথেও নিরাপত্তা দিতে হয়, এটার জন্য আকাশ প্রতিরক্ষা লাগে, এটার জন্য অনেক কিছু লাগে। মিয়ানমারের যেটা সীমান্ত, আমরা স্বীকার করি। কাজেই, একটা ‘নন-স্টেট অ্যাক্টরের’ সম্মতি নিয়ে একটি রাষ্ট্রের সীমান্ত লঙ্ঘন করাটা বেআইনি কাজ। রাখাইনে মানবিক বিপর্যয় রোধে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে করিডর চালু করার জন্য মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সম্মতি প্রয়োজন। কোনো এক পক্ষ রাজি না থাকলে এ করিডর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। জান্তা সরকারকে বাদ দিয়ে আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত রাখাইনে এ করিডরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার। অন্তর্র্বতী সরকার রোহিঙ্গা সমস্যাকে বাংলাদেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ সংকট হিসাবে তা সমাধানের জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের এ উদ্যোগে দলমতনির্বিশেষে সবার সমর্থন জরুরী। রাখাইনে মানবিক চ্যানেলের বিষয়ে জাতিসংঘ প্রস্তাব দিলে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারে। মিয়ানমারের মানবিক সংকট রোহিঙ্গা ইস্যুর পাশাপাশি বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা, বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপরও প্রভাব ফেলছে। এ সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হবে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা রাখাইনের জন্য করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, মিয়ানমারে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মি ছাড়াও দেশটির ওপর প্রভাব আছে এমন আঞ্চলিক সব পক্ষ একমত না হলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এমন করিডর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় হওয়া মানবিক করিডর শেষ পর্যন্ত মানবিকে সীমাবদ্ধ রাখা যায়নি। বরং মানবিক ইস্যুর সঙ্গে পরবর্তী সময়ে সামরিক নানা বিষয় যুক্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে গেলে ফলাফল নেতিবাচক হতে পারে। ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং সংঘাতজনিত পরিস্থিতি বিবেচনার বাইরেও রাখাইনে চীন ও ভারতের বিপুল অর্থনৈতিক বিনিয়োগ রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের আশপাশে চীন ও ভারতের তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি ভালোভাবে না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নিরাপত্তার প্রশ্নে দেশ দুটি হয়তো চাইবে না বাংলাদেশ হয়ে রাখাইনে করিডর যাক বা তৃতীয় কোনো পক্ষ এ অঞ্চলে এসে পড়ুক। এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ভারত কিংবা এমন আরও কোনো শক্তি যুক্ত আছে কি-না বা হবে কি-না, সেটাও জানা জরুরী। মিয়ানমারকে নিয়ে এমনিতেই আমরা ঝামেলায় আছি। আবার নতুন করে যেন এ প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো সংকট তৈরি না হয়, সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে ইজরাইলের ন্যায় নতুন একটি রাক্ষস রাষ্ট্র তৈরীর মাস্টারমাইনদের খাদেম হওয়ার আদিম প্রবৃত্তি কোন বাঙ্গালীর যেন না হয়! বাংলাকে পরাধীন করার গøানি নিয়ে যে নিদারুন অভিশাভ মিরজাফর এবং তার বংশধর আজও বহন করেছে। ইতিহাসের দর্পন থেকেই প্রকৃত শিক্ষা নিতে হবে। লেখক : কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক |