আজ রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
 / মতামত / মানবিক করিডোর: বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব
মানবিক করিডোর: বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া:
Published : Monday, 5 May, 2025 at 10:45 PM
মানবিক করিডোর: বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বপৃথিবীর সা¤্রাজ্যবাদী, শক্তিশালী ও বৃহৎ শক্তিগুলো যখন যা চায় জাতিসংঘ নামক প্রতিষ্ঠান মূলতঃ তাই করতে বাধ্য হয়। বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার সামর্থ্য থাকে না জাতিসংঘের। মানবিক করিডোর মিয়ানমারের রাখাইনে অসহায় আরাকানীদের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও তথাকথিত মানবিক করিডোর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হতে পারে চরম হুমকি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মিয়ানমারের রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়া বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্থিতিশীলতা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। মায়ানমারের সামরিক জান্তাদের পাশ কাটিয়ে আরাকানের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে রাখাইনে মানবিক করিডোর দিলে তাতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে বাধ্য এবং তা হবে বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু হয়ে গোলামির নবতর সংস্করণ। যা খুবই বিপজ্জনক এবং দেশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি। এই ধরনের সিদ্ধান্ত শান্তির সহাবস্থান ও জোট নিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থি।

বাতাসে ভারতের সাত রাজ্য নিয়ে খ্রিষ্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্র গড়ার গুঞ্জন ভেসে বেরাচ্ছে। পূর্ব তিমুরের মতো আরেকটি খ্রিষ্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্র তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বলেই অনেকে মনে করেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্রগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সমস্যা এবং সেন্টমার্টিনে নঙ্গর পরিকল্পনার পুরোন কাসুন্দি নতুন কৌশলে সামনে চলে আসছে বার বার। ভৌগলিক ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ভারত মহাসাগর-সেন্টমার্টিন-বঙ্গপসাগর-রাখাইন রাজ্য-খ্রিস্টান অধ্যুষিত সাত রাজ্য যোগ গুঞ্জনে রয়েছে পার্বত্য জেলাগুলোর একাংশ। আশঙ্কাকে একেবারে ফেলে দেয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এসব অঞ্চলে তথাকথিত এনজিও গুলো কি এবং কিসের আর্থ-সামাজিক উন্নতি সাধন করেছিলো সেসব নিয়েও আজ প্রশ্ন উঠছে। সব কিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে, Bangladesh just committed one of the most dangerous geopolitical moves in its recent history under the illusion of Òhumanitarian aid’|

মানবিক করিডোর আসলে কি ? ÒHumanitarian CorridorÓ আসলে কী।  টমানবিক করিডোর বলতে বুঝায় সাহায্য পাঠানোর রাস্তাঘাট। কিন্তু বাস্তবে ওরা যেটা বানায় সেটা হলো : -➤ এনজিও টাইপ তাঁবু বসায়, ➤ ইনটেলিজেন্স অফিসার ঢুকে, ➤ “মানবিক সহায়তা”র নামে মিলিটারি ম্যাপিং তৈরী হয়, ➤ বিদেশি অস্ত্র, ড্রোন, ডেটা আস্তে আস্তে ঢুকে, ➤ কিছুদিন পর সেই অঞ্চল আর নিজের থাকে না।

এরই মধ্যে কিছু রাষ্ট্রের  যে মানবিক করিডোর সেগুলো বিশ্লেষন করলেই বুঝা যাবে আরাকানের সাথে মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠা হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত কি হতে পারে ? মানবিক করিডোর কিভাবে দেশ ধ্বংস করে ? সিরিয়া : - মানবিক সাহায্যের নামে তাবু বসানো হয়েছিল। এরপর সেই রাস্তাতেই অস্ত্র ঢুকছে, বিদ্রোহী ট্রেনিং ক্যাম্প বসছে।  ISIS আর আল-নুসরা এই করিডরের মাধ্যমেই তৈরী হয়েছে। ইরাক : "No-fly zone" ছিল কাগজে। বাস্তবে সেই অঞ্চলে US মিলিটারি বেস বসানো হয়েছিল। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পথ এভাবেই তৈরী করা হয়েছিল। লিবিয়া : "Protection corridor" দেয়া হয়েছিল Qaddafi’র বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের জন্য। এক মাসের মধ্যে NATO ওই করিডর দিয়ে ঢুকে পুরো দেশটাকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজা : "মানবিক সাহায্য" পাঠানোর জন্য Rafah গেটে করিডর দেয়া হলো। আর এখন সেই করিডোর দিয়েই মোসাদ-এর লোকজন ঢুকতে ব্যবহার করে। গোপন ইন্টেল, হামাস সদস্যদের লোকেশন, সব কিছু ওই গেট দিয়েই বের করা হয়। আফগানিস্তান : "সাহায্য দিতে CIA করিডর বানায়"। সেই উছিলা দিয়ে বেস তৈরী করা হয়। সেখান থেকেই চালানো হয়েছিল ড্রোন হামলা, খুন, আর গোয়েন্দা অপারেশন।

১৯৮৯ সালে আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যকার প্রথম যুদ্ধের পর করিডোরটি চালু হয়েছিল। এর নিরাপত্তায় যুক্ত হয়েছিল রুশ শান্তিরক্ষী বাহিনীও। ২০২০ সালে এক যুদ্ধে আজারি বাহিনী লাচিন করিডোর দখলে নেয়। শুরুতে কিছুদিন ভালো চললেও এরপর সেটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। প্রতিপক্ষ এটিকে সামরিক সরবরাহ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ‘অবৈধ’ পরিবহনের কাজে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করে কয়েক বছর পরই তা বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে, এ অভিযোগ অস্বীকার করে আর্মেনিয়াসহ অন্যরা। এরপর ২০২৩ সালে নাগর্নো-কারাবাখ পুরো দখলে নেয় আজারবাইজান। সেখানকার অধিবাসীদের বেশিরভাগ বাস্তুচ্যুত হয়ে লাচিন করিডোর দিয়ে আর্মেনিয়া কিংবা অন্যত্র চলে যান। বসনিয়া যুদ্ধের সময়ে ১৯৯৩ সালে বসনিয়া ও হার্জেগোবিনাতে স্রেব্রেনিকা ছিটমহলসহ কয়েকটি ‘নিরাপদ এলাকা’ ঘোষণা করেছিল জাতিসংঘ। নিরাপত্তা পরিষদের দুটি প্রস্তাবের আলোকে যে ছয়টি এলাকাকে ‘নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয় সেগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী। জাতিসংঘের সেই ‘নিরাপদ এলাকা’ গঠনকে বর্তমানে ওই যুদ্ধের সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কেননা, কোন নিরাপদ এলাকাকে সুরক্ষিত রাখা হবে, তা সুস্পষ্ট ছিল না জাতিসংঘের প্রস্তাব। ওই প্রস্তাবের কারণে জটিল পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল। যেসব দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল, অনেকটা রাজনৈতিক কারণে মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি তারা। ১৯৯৫ সালের দিকে নিরাপদ এলাকাগুলোতে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে, যার পথ ধরে স্রেব্রেনিকা গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ।

মনে রাখতে হবে, একদিন যারা বানিজ্য করতে এসেছিলো আর প্রলুব্ধ হয়ে কেড়ে নিয়েছিলো বাংলা-ভারতের স্বাধীনতা। বাংলাকে দুশত বৎসর কলোনি বানিয়ে দেশীয় খাদেম দ্বারা নিপিড়ন-নির্যাতন-লুন্ঠন, শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন এবং পণ্য বিক্রয়ের তীর্থক্ষেত্রে পরিনত করেছিলো। অনেক স্বাধীনতাকামীকে জীবন দিতে হয়েছে তার মাতৃভুমির স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীনতা হয়েছিলো, বিজয় হয়েছে কিন্তু মুক্তি আসেনি। সিংহাসনে যিনি আরোহন করেছেন তিনিই জনগনের ভাগ্য নিয়ে খেলেছেন বার বার। বস্তুত করিডরের মাধ্যমে আরাকান আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে নিরাপত্তার কৌশলগত ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদকে ব্যবহারের সুযোগ দিতে চায়। এর ফলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দিতায় জটিলতার মধ্যে জড়িয়ে পরবে। বিশ্বের খুব কম মানবিক করিডরই নিরাপত্তাঝুঁকির বাইরে থেকেছে। এ ধরনের করিডর চালু হলে সেই অঞ্চলে থাকা বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ অপরাধীরা সেটাকে নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহারের বহু নজির রয়েছে।

বাংলাদেশ হয়ে যে ত্রাণ যাবে, তা রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকদের কাছে পৌঁছাবে, নাকি আরাকান আর্মি সেগুলোকে দখলে নেবে, তার নিশ্চয়তা জাতিসংঘ কি ভাবে দিবে, তা পরিষ্কার নয়। এখানে প্রধান দুটি পক্ষ মিয়ানমার জান্তা সরকার এবং রাখাইনের নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। মিয়ানমারের এ অঞ্চলটি মাদক, অস্ত্র এবং নারী ও শিশু পাচার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। করিডোর দিলে মাদক বা অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশের শঙ্কা থাকবে। এ ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে বর্তমানে কোনো স্বীকৃত প্রশাসন নেই। ফলে সেখানকার অস্বীকৃতদের সঙ্গে কোনো ধরনের দরকষাকষির আলাদা ঝুঁকি রয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তো রয়েছেই। গত সরকার একক সিদ্ধান্তে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে এবং বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। যার কারণে নিরাপত্তাসহ সামাজিক নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে আরও ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা শোনা যাচ্ছে। এতে করে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে সকলেই আশঙ্কা করছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আর কোন সমস্যা সৃষ্টি করা উচিত হবে না।

আমরা আরেকটা ‘গাজায় পরিণত হতে চাই না’ বাংলাদেশকে কোন যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না। আমাদের দেশে এস কেউ সমস্যা সৃষ্টি করুক সেটিও আমাদের কাম্য হতে পারে না। একে তো আমাদের দেশ রোহিঙ্গা নিয়ে বড় সমস্যায় রয়েছে, তার ওপর প্যাসেজ দেওয়া নিয়ে যাতে সমস্যার সৃষ্টি না হয় এ জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। ‘মানবিক করিডোর’ পেতে শুধু বাংলাদেশের ওপর নির্ভর না করে প্রতিবেশী অন্য দেশেও চেষ্টা করা উচিত জাতিসংঘের। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মানবিক করিডরের প্রস্তাব জাতিসংঘ থেকে আসুক অথবা আমেরিকা থেকে আসুক, তা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। ইতিহাস বলে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কঙ্গো অথবা সিরিয়া, কোথাও মানবিক করিডরের বাস্তবায়ন সফল হয় নাই। ইউক্রেন-রাশিয়াতে জাতিসংঘ প্রস্তাবিত মানবিক করিডরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

আজ জনমনের প্রশ্ন হলো - বাংলাদেশ আজকে করিডর খুলে দিয়ে বলা হলো "এইটা মানবতা", তারপর ৬ মাস পরে যদি সেখানে NGO দিয়ে মিলিটারি ম্যাপিং হয়, কোন এক রাতে surveillance drone নামে বা কোন এক সকালে UN interfaith cleric গিয়ে মুসলিম ক্যাম্পে বক্তৃতা দেয়, আর ২ বছর পরে সেই এলাকাই Òsafe zone” ঘোষণার নামে দখল হয়, তখন আপনি আমি কী করতে পারবো ? তখন এদশের জনগন কি করতে পারেবে ? একই স্ক্রিপ্ট বারবার। শুধু রং আর ভাষা বদলায়। তাই সকলকেই এ শপথ নিতে হবে, এত কথা বুঝি না, শুধু এতোটুকু বুঝি, প্রিয় মাতৃভূমির এক ইঞ্চি জমিও কোন বিদেশি পরাশক্তির ব্যবহার করার সুযোগ দিতে চাই না। দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা আপসহীন। খুজে বের করতে হবে এই করিডরের পেছনে খেলোয়াড় কারা ? তাদের চিহ্নিত করতে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে।

শাসকগোষ্টি সহ সকলকে মনে রাখতে হবে, জীবনে যা কিছুই করো না কেন? মাতৃভুমির সুখের চাবিকাঠি অন্য কারো হাতে তুলে দিও না। কখনোই কারো ওপর এত বেশি নির্ভরশীল হইও না যে, তারা তোমাকে পুতুলরাজ বানিয়ে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পুরন করবে। বিশ্ব রাজনীতির ভয়ঙ্কর খেলা, যার দাম শোধিতে হবে নতুন প্রজন্মকে ? স্বাধীন রাষ্ট্র সিকিমের প্রধানমন্ত্রী কাজী লেন্দুপ দর্জি আজও ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছে। স্বাধীন সার্বভৌম সিকিম পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার ক্রীড়ানক ছিলেন লেন্দুপ দর্জি। বাঙালী প্রজন্মকে সিকিমের করুণ পরিণতির ইতিহাস জানাতে হবে, এটা অগ্রজের দ্বায়িত্ব। সিকিমের ইতিহাস সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার সবচেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরণ। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।

করিডোর পরিচালনায় যে ধরনের সম্পদ ব্যবহার করতে হয় তা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এটা শুধু স্থলভাগে নিরাপত্তা দিতে হয় না, এটা আকাশপথেও নিরাপত্তা দিতে হয়, এটার জন্য আকাশ প্রতিরক্ষা লাগে, এটার জন্য অনেক কিছু লাগে। মিয়ানমারের যেটা সীমান্ত, আমরা স্বীকার করি। কাজেই, একটা ‘নন-স্টেট অ্যাক্টরের’ সম্মতি নিয়ে একটি রাষ্ট্রের সীমান্ত লঙ্ঘন করাটা বেআইনি কাজ। রাখাইনে মানবিক বিপর্যয় রোধে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে করিডর চালু করার জন্য মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সম্মতি প্রয়োজন। কোনো এক পক্ষ রাজি না থাকলে এ করিডর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। জান্তা সরকারকে বাদ দিয়ে আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত রাখাইনে এ করিডরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার। অন্তর্র্বতী সরকার রোহিঙ্গা সমস্যাকে বাংলাদেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ সংকট হিসাবে তা সমাধানের জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের এ উদ্যোগে দলমতনির্বিশেষে সবার সমর্থন জরুরী। রাখাইনে মানবিক চ্যানেলের বিষয়ে জাতিসংঘ প্রস্তাব দিলে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারে। মিয়ানমারের মানবিক সংকট রোহিঙ্গা ইস্যুর পাশাপাশি বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা, বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপরও প্রভাব ফেলছে। এ সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হবে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা রাখাইনের জন্য করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, মিয়ানমারে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মি ছাড়াও দেশটির ওপর প্রভাব আছে এমন আঞ্চলিক সব পক্ষ একমত না হলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এমন করিডর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় হওয়া মানবিক করিডর শেষ পর্যন্ত মানবিকে সীমাবদ্ধ রাখা যায়নি। বরং মানবিক ইস্যুর সঙ্গে পরবর্তী সময়ে সামরিক নানা বিষয় যুক্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে গেলে ফলাফল নেতিবাচক হতে পারে।

 ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং সংঘাতজনিত পরিস্থিতি বিবেচনার বাইরেও রাখাইনে চীন ও ভারতের বিপুল অর্থনৈতিক বিনিয়োগ রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের আশপাশে চীন ও ভারতের তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি ভালোভাবে না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নিরাপত্তার প্রশ্নে দেশ দুটি হয়তো চাইবে না বাংলাদেশ হয়ে রাখাইনে করিডর যাক বা তৃতীয় কোনো পক্ষ এ অঞ্চলে এসে পড়ুক। এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ভারত কিংবা এমন আরও কোনো শক্তি যুক্ত আছে কি-না বা হবে কি-না, সেটাও জানা জরুরী। মিয়ানমারকে নিয়ে এমনিতেই আমরা ঝামেলায় আছি। আবার নতুন করে যেন এ প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো সংকট তৈরি না হয়, সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে।

মধ্যপ্রাচ্যে ইজরাইলের ন্যায় নতুন একটি রাক্ষস রাষ্ট্র তৈরীর মাস্টারমাইনদের খাদেম হওয়ার আদিম প্রবৃত্তি কোন বাঙ্গালীর যেন না হয়! বাংলাকে পরাধীন করার গøানি নিয়ে যে নিদারুন অভিশাভ মিরজাফর এবং তার বংশধর আজও বহন করেছে। ইতিহাসের দর্পন থেকেই প্রকৃত শিক্ষা নিতে হবে।  

লেখক : কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক


পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ


 
ভারতে ডায়াবেটিসের নতুন রূপ ‘মোডি’, আক্রান্ত হতে পারে শিশুরাও
ভারতে ডায়াবেটিসের নতুন রূপ ‘মোডি’, আক্রান্ত হতে পারে শিশুরাও
টাইপ ৫ ডায়াবেটিস নিয়ে বেশ হইচই হচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। নতুন ধরনের ডায়াবেটিস কেন হচ্ছে এবং এর প্রতিকার কী, তা ...
‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সিনেমা ইস্যুতে বিতর্ক, প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন নির্মাতা
‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সিনেমা ইস্যুতে বিতর্ক, প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন নির্মাতা
কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পাল্টা জবাবে ভারতের সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু হওয়ার পরপরই বলিউডে শুরু হয় তার ওপর ভিত্তি ...
গণহত্যাকারীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে: উপদেষ্টা আসিফ
গণহত্যাকারীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে: উপদেষ্টা আসিফ
অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিষিদ্ধ হওয়ার পর গণহত্যাকারীরা সারাদেশে বিশৃঙ্খলা ...
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, যা বলছেন এনসিপি নেতারা
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, যা বলছেন এনসিপি নেতারা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সিদ্ধান্তের পর ...
কাশ্মীরে ফের বিস্ফোরণ, যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা
কাশ্মীরে ফের বিস্ফোরণ, যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা
ভারত-পাকিস্তানের সদ্যঘোষিত যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মাথায় কাশ্মীরের পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ভারতশাসিত কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এক ভিডিও শেয়ার ...
আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণায় শাহবাগে ছাত্র-জনতার উল্লাস
আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণায় শাহবাগে ছাত্র-জনতার উল্লাস
গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ও শাহবাগে ছাত্র-জনতা আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েছে। স্লোগানে স্লোগানে ...
পতিতদের পুনর্বাসন চায় না জনগণ : তারেক রহমান
পতিতদের পুনর্বাসন চায় না জনগণ : তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বিগত দেড় দশক যে দলটি দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণ ...
পাকিস্তানের গোলায় বিএসএফ জওয়ান নিহত
পাকিস্তানের গোলায় বিএসএফ জওয়ান নিহত
পাকিস্তানের গোলার আঘাতে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের এক সদস্য নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। শনিবার (১০ মে) জম্মু-কাশ্মিরের জম্মুতে আন্তঃদেশীয় ...
উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত: বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত: বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
গত বছরের জুলাই অগাস্টের আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ (শনিবার) রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ...
১০
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, ‘সতর্ক প্রতিক্রিয়া’ বিএনপিতে
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, ‘সতর্ক প্রতিক্রিয়া’ বিএনপিতে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে দলটির ...
 
চাঁপাইনবাবগঞ্জে চিকিৎসকদের সাথে অসদআচারণের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে চিকিৎসকদের সাথে অসদআচারণের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র নামধারী কতিপয় যুবকের চিকিৎসকদের সাথে অসদআচারণের প্রতিবাদ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিকিৎসক সমাজ। সোমবার (৫ মে) ...
গড্ডিমারী আলিয়া মাদরাসার উন্নয়নের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা
গড্ডিমারী আলিয়া মাদরাসার উন্নয়নের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী আলিয়া মাদরাসার পুন:প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের লক্ষে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।বুধবার বিকালে গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে প্যানেল ...
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১৩
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১৩
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযানে আওয়ামী লীগের ১৩ নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার (৯ মে) গভীর রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ...
চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিল্প ও বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিল্প ও বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরাতন স্টেডিয়াম মাঠে উদ্বোধন হয়েছে শিল্পপণ্য ও বাণিজ্য মেলার। শনিবার (১০ মে) বিকেলে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ ফিতা ...
কড়াইল বস্তির চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণে এখন যারা
কড়াইল বস্তির চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণে এখন যারা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাজধানীর বনানী থানাধীন কড়াইল বস্তির প্রভাবশালী কিছু নেতা এলাকা থেকে পালালেও চাঁদাবাজি, ...
লন্ডন থেকে ঢাকার পথে খালেদা জিয়া
লন্ডন থেকে ঢাকার পথে খালেদা জিয়া
উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রায় চার মাস যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান শেষে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।বাংলাদেশ সময় ...
ফিরোজার পথে খালেদা জিয়া, নেতাকর্মীদের ঢল
ফিরোজার পথে খালেদা জিয়া, নেতাকর্মীদের ঢল
রাজধানীর গুলশানের বাসা ফিরোজার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পথে বিএনপি নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে।মঙ্গলবার ...
চিরকুট লিখে এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যা, কারণ জানালেন মেজো ভাই
চিরকুট লিখে এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যা, কারণ জানালেন মেজো ভাই
চট্টগ্রাম র‌্যাব কার্যালয়ের এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যার কারণ জানিয়েছেন তার মেজো ভাই নন্দলাল সাহা। বুধবার চট্টগ্রাম র‌্যাব কার্যালয়ের নিজ অফিস ...
মুগ্ধর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী
মুগ্ধর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-বিইউপিতে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মৌমিতা রহমান ঈপ্সিতাকে আইন বিভাগের শিক্ষিকা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ...
১০
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কাম্য নয়
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কাম্য নয়
এ অঞ্চলেরর পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় যুদ্ধ বেধে যাওয়া ও হতাহতের ঘটনায় নানা হুমকি তৈরি হয়েছে। ...
সম্পাদক ও প্রকাশক: ইউসুফ আহমেদ (তুহিন)
প্রকাশক কর্তৃক ৭৯/বি, ব্লক বি, এভিনিউ ১, সেকশান ১২, মিরপুর, ঢাকা ১২১৬ থেকে প্রকাশিত ও ৫২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, ঢাকা ১১০০ থেকে মুদ্রিত
বার্তাকক্ষ : +৮৮০১৯১৫৭৮৪২৬৪, ই-মেইল editor@natun-barta.com, Web : www.Natun-Barta.com.com