![]() মৃত্যুর আগে নিজের বীর প্রতীক উপাধী গেজেটে প্রকাশ দেখে যেতে পারলেন না কাঁকন বিবি
হাবিব সরোয়ার আজাদ:
|
![]() মুক্তিযুদ্ধে চলাকালে পাক বাহিনী আর রাজাকারদের হাতে বারবার নির্যাতিত হয়েছেন। তবু দমে যাননি এই নারী। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন সম্মুখ সমরে। অনেকেই জানেন, মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছিলেন কাঁকন বিবি। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়নি। গেজেটে খেতাব না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়েই চলে গেলেন কাঁকন বিবির। দেশ স্বাধীন করার নিমিত্তে জীবনের শেষ আশা ত্যাগ করে কাঁকন বিবি বেছে নিয়েছিলেন গুপ্তচরবৃত্তি, পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন কয়েকবার। তবে যুদ্ধ শেষে কোন এক অভিমানে দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন। স্বাধীনতার ২৫ বছর পর ১৯৯৬ সালে জেলায় তৎকালীন সময়ে কর্মরত এক সংবাকর্মী ভিক্ষারত অবস্থায় খুঁজে পান।’ তখন কাঁকন বিবির দুর্বি:সহ জীবন চিত্র উঠে আসে গণমাধ্যমে। তৎকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাঁকন বিবিকে এক একর খাস জমি ও বীর প্রতীক উপাধি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ওই জমিতেই ছোট্ট কুড়ের ঘরে বসবাস করতেন তিনি। একমাত্র মেয়ে সখিনা বিবি ও মেয়ের জামাই রফিক মিয়াকে নিয়েই ছিলো তাঁর ছোট্র সংসার। বেসরকারীভাবে কাঁকন বিবি প্রথম স্বীকৃতি পান ১৯৯৮-তে দেশের জাতীয় একটি দৈনিক প্রত্রিকার দেয়া সংবর্ধনায়। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এককালীন অর্থসহ প্রতি মাসে সম্মানী দেয়া হত ওই পত্রিকা থেকে। কাঁকন বিবি মহান মুক্তিযুদ্ধে এক সাহসী নারীর নাম। নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে বেছে নেন গুপ্তচরবৃত্তির পথ। জীবনবাজি রেখে পাকিস্তানী মিলিটারির তথ্য সংগ্রহ করে আনতেন, সরবরাহ করতেন মুক্তিবাহিনীর মধ্যে। তাঁর দেয়া তথ্যানুযায়ী একাধিক মিশনে জয়ী হয় মুক্তিবাহিনী। সাহসী এই নারী সরাসরি অংশ নিয়েছেন আমবাড়ি, বাংলাবাজার, টেবলাই, বলিউরা, মহব্বতপুর, বেতুরা, দূরিনটিলা, আধারটিলাসহ প্রায় ৯টি সম্মুখযুদ্ধে। জানা যায়, ১৯৭১ সালে জুন মাসে দোয়ারাবাজার সীমান্তে পাকবহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনী হেরে গেলে অনেকের সঙ্গে আটক হন পাক সেনাদের হাতে কাঁকন বিবিও। দিনের পর দিন তার ওপর চলতে থাকে পাক সেনাদের পাশবিক নির্যাতন। থেমে যাওয়ার নারী ছিলেন না তিনি। প্রতিশোধের আগুনে ফুঁসতে থাকেন। ক্যাম্প থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পরিচয় হয় মুক্তিযোদ্ধা রহমতের সঙ্গে। কাঁকন বিবিকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় সেক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলীর সঙ্গে। মূলত তাঁর নির্দেশেই বেছে নেন গুপ্তচর বৃত্তির পথ। কাঁকন বিবির সরবরাহকৃত তথ্য মোতাবেক অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কয়েকটি অপারেশন সফল হয়। তবে আবারও ধরা পড়েন তিনি, এবার বাংলাবাজারে। শুরু হয় তাঁর ওপর নির্যাতনের স্ট্রিমরোলার। দীর্ঘ এক সপ্তাহ চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যা কলমের ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব! স্পর্শকাতর স্থান ছাড়াও শরীরের কোমল স্থানে চলে পাশবিক নির্যাতন! অজ্ঞান অবস্থায় মৃত ভেবে নরপিশাচরা তাঁকে ফেলে রেখে যায় সড়কের পাশে। সহ যোদ্ধাদের সেবায় ৭ দিন পর জ্ঞান ফিরে এলে ভারতের মেঘালয়ের বলাট সাব সেক্টরে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করানো হয়। সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে এসে আবারও দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় প্রশিক্ষণ নেন অস্ত্র চালানোর। শুরু করেন পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম। বিজয় আসে আসে স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা। সুনামগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক, লেখক অ্যাডডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ৯৬ সালে কাঁকন বিবিকে বীর প্রতীক উপাধি দেয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। পত্র-পত্রিকায় তাকে বীর প্রতীক হিসেবে বলা হলেও গেজেট এখনও তা প্রকাশিত হয়নি। ১৯৭১ সালে তিন মাস বয়সী মেয়ে সখিনাকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন কাঁকন বিবি। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গুপ্তচরের কাজ করলেও পরবর্তী সময়ে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। পাক বাহিনীর হাতে আটক হয়ে নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন এ বীর নারী যোদ্ধা। কাঁকন বিবির মেয়ে সখিনা বিবি বৃহস্পতিবার দুপুরে বললেন, ‘সরকার বীর প্রতীক খেতাব দিলেও তা গেজেটভুক্ত না হওয়ায় আমার মায়ের মনে কষ্ট ছিল।’ মায়ের বীর প্রতীক উপাধী দ্রত গেজেটভুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’ |