/ অপরাধ / দূর্ণিতির অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পিও গ্রেফতার: দুর্নীতিবাজ কিনা জানেন না শিক্ষামন্ত্রী!
দূর্ণিতির অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পিও গ্রেফতার: দুর্নীতিবাজ কিনা জানেন না শিক্ষামন্ত্রী!
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব হোসেন, মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসিরউদ্দিন এবং জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কিছুদিন বন্ধ থাকা লেকহেড গ্রামার স্কুলের পরিচালক খালেক হোসেন মতিনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর গুলশান ও বছিলা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত শনিবার হাজারীবাগ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন। এ ঘটনায় তার ভাই সাহাবুদ্দিন বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এছাড়া, গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় তার শ্বশুর আব্দুল মান্নান ওইদিনই বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। অন্যদিকে, শনিবার বিকালে গুলশানে নিজ প্রতিষ্ঠান লেকহেড গ্রামার স্কুলের সামনে থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তুলে নিয়ে যায় স্কুলটির পরিচালক খালেক হোসেন মতিনকে। ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রথমে গুলশান এলাকা থেকে উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনক এক লাখ ৩০ হাজার টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। এ টাকা ঘুষের বলে ধারণা করছে ডিবি। পরে নাসিরের সঙ্গে যোগসূত্র থাকায় মোতালেবকেও বছিলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যদিকে, লেকহেড স্কুলের পরিচালক মতিনের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে নিখোঁজের পর গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো. মোতালেব হোসেন দুর্নীতিবাজ কিনা তা জানেন না শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। দুর্নীতির অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মোতালেব হোসেনকে গ্রেফতারের পর এ নিয়ে জানতে চাইলে রবিবার (২১ জানুয়ারি) রাতে এ কথা জানান তিনি। এরপর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি কারও দুর্নীতি ও অন্যায় থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা। পুলিশ যা করার তাই করবে। আমি এখনও জানি না, তারা দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হয়েছে কিনা।’ এ বিষয়ে এর বেশি মন্তব্য করবেন না বলেও জানান মন্ত্রী। ওইদিন দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু আলম শিক্ষামন্ত্রীকে জানান, তার মিরপুরের পাইকপাড়ার বাসায় খোঁজখবর নিয়েছে কয়েকজন। মোতালেব হোসেন ও নাসিরউদ্দিনকে ‘অপহরণে’র পর শনিবার (২০ জানুয়ারি) বিকালে তার বাসায় সাত-আট জন লোক গিয়ে তাকে খুঁজেছে। তিনি বাইরে যেতেও ভয় পাচ্ছেন বলে জানান। জবাবে শিক্ষামন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করেন। ওইসময় শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ‘নিখোঁজ’ দুই কর্মকর্তাকে উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক ও বাংলাদেশ সচিবালয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘যারা মন্ত্রণালয়ের পিকনিকের টাকা তুলেছেন, তাদের অপহরণ করা হচ্ছে। এরপর আমাকে অপহরণের শিকার হতে হবে। সহকর্মীরা আমাকে সাবধানে থাকতে বলেছেন।’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা ‘নিখোঁজের’ পর রবিবার (২১ জানুয়ারি) বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাজিয়া আফরিন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের কাছে। ওই চিঠিতে দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর ‘নিখোঁজের’ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। ওই চিঠিতে জানানো হয়, মো. মোতালেব হোসেন ২০ জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৪টায় বাসা থেকে বের হওয়ার পর ‘নিখোঁজ’ হন। তার দুটি মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ। বাসার আশেপাশে ও সম্ভাব্য স্থানে খোঁজ করে তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার ভাই হাজারীবাগ থানায় বিষয়টি সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের উচ্চমান সহকারী মো. নাসিরউদ্দিন গত ১৮ জানুয়ারি সচিবালয়ে আসার পথে আনুমানিক বেলা আড়াইটায় ‘নিখোঁজ’ হন। এরপর থেকে তার দুটি মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে তার শাশুড়ি বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। দুই কর্মকর্তা ‘নিখোঁজের’ ঘটনায় রবিবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তার মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। |