/ অপরাধ / রাজধানীর ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশ-র্যাবের বিশেষ অভিযান
রাজধানীর ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশ-র্যাবের বিশেষ অভিযান
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
রাজধানীতে সম্প্রতি ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। ছিনতাইয়ের ঘটনা সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসা ও নগরবাসীর মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এ অভিযান শুরু করা হয়েছে। অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ভীষণভাবে আলোচিত হওয়ায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, থানা পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোও ইতোমধ্যে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে আটক হয়েছে এরইমধ্যে অন্তত শতাধিক ছিনতাইকারী। জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় গত এক সপ্তাহে অন্তত ৩৫ জন ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া গত ১৯ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে র্যাবের হাতে ৭ ছিনতাইকারী আটক হয়। আর ২৬ ডিসেম্বর নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৬ জন ছিনতাইকারীকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে মোট কতজন ছিনতাইকারীকে আটক করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে নগরবাসীর মনে। নাগরিকদের মনে স্বস্তি ফেরাতে ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে নির্দেশনা দেন কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। তার নির্দেশনার পর থেকে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে স্পেশাল ড্রাইভে নামে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় ৫৬ জন ছিনতাইকারীকে। এ বিশেষ অভিযান সম্পর্কে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় উঠে এসেছে ঢাকা শহরে ছিনতাইয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বিষয় বেশ কিছু নিউজ হয়েছে। যা আমরা পজেটিভলি দেখছি। মিডিয়া বিষয়টি তুলে ধরার পর আমাদের প্রচেষ্টা আরও বেশি বেগবান হয়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডিবি, ক্রাইম ডিভিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসেছেন কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। আমাদেরকে গাইড লাইন দিয়েছেন। ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ট্রাস্টি ও ইফেক্টিভ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলেছেন। এরপর আমরা আরও বেশি তৎপর হই। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেছি, অনেক বিষয় পত্র পত্রিকায় এসেছে। আবার অনেক বিষয় আসেনি। ছিনতাইকারীদের ধরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, দুই ধরনের ছিনতাইকারী রয়েছে। এদের মধ্যে একট হলো যারা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আগ্রাসীভাবে অনেকটা ডাকাতির মতো জোর করে ছিনতাই করে। আবার আরেকটা আছে যেটা আমরা টানা পার্টি বলি। এই টানা পার্টি বাস, লঞ্চ, ট্রেন, রিক্সা থেকে ব্যাগ মোবাইল বা মূল্যবান জিনিস হঠাৎ টান দিয়ে নিয়ে যায়। ছিনতাইয়ের সব ঘটনায় মামলা রেকর্ড করা হয় না স্বীকার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, সব ছিনতাইয়ের ঘটনা থানায় রেকর্ড হয় না তা আমরা জানি। তারপরও কিছু বিষয়ে থানায় অভিযোগ আসে বা মামলা হয়। আমাদের এ অভিযান শুধুমাত্র অতীতে অভিযোগ রয়েছে এমনদের বিরুদ্ধে নয়। সব ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে আমাদের এ অভিযান চলছে। টানা পার্টি বা ছিনতাইকারী আটকে ক্রাইম ডিভিশন বা থানা পুলিশ কাজ করলেও এবার বিশেষ অভিযানে ডিবি পুলিশ নেমেছে বলে জানান সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ(দক্ষিণ) উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, আমরা মূলত স্পেশাল ড্রাইভ শুরু করেছি। বর্তমানে ছিনতাইয়ের ঘটনা সহনশীলতার বাইরে চলে যাচ্ছিল। সহনশীল অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। আমাদের প্রতি বরাবরই নির্দেশনা রয়েছে, কোনও ক্রাইম যেন সহনশীলতার বাইরে না যায়। অভিযান সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা স্পটগুলো চিহ্নিত করেছি। সেসব স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি থানা পুলিশও অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারীদের আটক করছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে থানা পুলিশ অন্তত ৩৫ জন ছিনতাইকারীকে ছিনতাইকালে এবং অভিযান চালিয়ে আটক করেছে। যার মধ্যে রয়েছে দয়াগঞ্জে ছিনতাইয়ের সময় মায়ের কোল থেকে পড়ে গিয়ে শিশু নিহতের একমাত্র হোতা মো. রাজিব। তাকে ২৩ ডিসেম্বর রাতে গ্রেফতার করে যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশ। এছাড়াও ২৪ ডিসেম্বর রাত এগারোটার দিকে ধানমন্ডির ১৫ নং সড়কে ছিনতাইকালে দুইজনকে আটক করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়। থানা পুলিশ ও ডিবির পাশাপাশি র্যাবও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গাড়িতে থাকা যাত্রীদের ব্যাগ ছিনতাইকারী দলের সাত সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-২। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। র্যাব জানায়, তারা সংঘবদ্ধভাবে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে চলন্ত গাড়িতে থাকা যাত্রীদের ব্যবহৃত মোবাইলসেট এবং হাতে থাকা ল্যাপটপসহ প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ ছোট ছোট জিনিসপত্র হঠাৎ করে টান দিয়ে নিয়ে চলে যায় এসব ছিনতাইকারী। তারা মূলত একটি সংঘবদ্ধ দল হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন বাস/ট্রাক কাউন্টার/সড়কে এ গ্রুপের এজেন্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। |