/ স্বাস্থ্য / ৩ ডাক্তার সিন্ডিকেটে জিন্মি হোমিও ও দেশজ চিকিৎসা খাত
৩ ডাক্তার সিন্ডিকেটে জিন্মি হোমিও ও দেশজ চিকিৎসা খাত
নিজস্ব প্রতিবেদক:
|
নিয়োগ, বদলি ও কেনাকাটায় অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে হোমিও ও দেশজ চিকিৎসা খাত । পরিচালককে হাত করে ৩ ডাক্তার সিন্ডিকেট করে পুরো খাতকে কুক্ষিগত করে রেখেছে । তাদের বেপরোয়া আচরণে একদিকে যেমন ক্ষুব্ধ ইউনানী আওয়ুর্বেদিক ও হোমিও চিকিৎসকরা তেমনি শিক্ষার্থীরাও। তাদের নিকট জিম্মি এ সেক্টরের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২ হাজার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও চিকিৎসক। তারা সুষ্ট তদন্ত করে দূর্নীবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি করেছেন। জানা যায়, সারাদেশে সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ২ টা। এর মধ্যে একটি রাজধানীর মিরপুরে অন্যটি সিলেটে। এছাড়াও সরকারী হোমিও মেডিকেল কলেজ রয়েছে একটি। এটিও রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর হোমিও ও দেশজ চিকিৎসা ও লাইন ডিরেক্টর অল্টারনেটিভ মেডিকেল (এ এম সি) দ্বারা । এর একজন পরিচালক রয়েছেন। যিনি পুরোটাই নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিচালক, হোমিও ও দেশজ চিকিৎসা এবং লাইন ডিরেক্টর ডা. মনোয়ারা সুলতানা সিন্ডিকেটের প্রধান। তার আরও তিন সহযোগী রয়েছে এরা হলো ডা. আবু বকর সিদ্দিক, ডা. কামরুজ্জামান সুমন এবং ডা. কামরুল কায়েস । এরা মেডিকেল অফিসার হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত। অভিযোগ উঠেছে, আবু বকর সিদ্দিক, কামরুজ্জামান সুমন এবং ডা. কামরুল কায়েস লাইন ডিরেক্টর মনোয়ারা সুলতানাকে হাত করে সকল ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছেন। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এ খাতে নিয়োগ বন্ধ থাকলে ২০১৪ সালের আগষ্টে ১২২ জন এবং পরবর্তীতে আরো ১৮ জন ডাক্তার মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। এটাই এখন পর্যন্ত এ সেক্টরের ডাক্তারদের বড় নিয়োগ। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে ২২৫ জন ডাক্তার নিয়োগ হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নিয়োগ থেকে শুরু করে বদলি সবকিছু নিয়ন্ত্রন করেছেন আবু বকর সিদ্দিক, কামরুজ্জামান সুমন ও কামরুল কায়েস । নিয়োগ পাওয়া কোন ডাক্তার এক কর্মস্থলে কমপক্ষে ৩ বছর পর বদলির বিধান রয়েছে কিন্তু ওই সময়ে সদ্য নিয়োগ পাওয়া ডাক্তারদের বদলি বাণিজ্য শুরু করেন তারা। নিয়োগ পাওয়া ডাক্তারদের ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে পছন্দের জায়গায় বদলি করেন। এমনকি কেউ বদলি হতে না চাইলেও তাকে টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। সেই হিসেবে ১৪০ জন সদ্য নিয়োগ পাওয়া ডাক্তারদের নিকট থেকে প্রায় দুই কোটি হাতিয়ে নিয়েছেন। বর্তমান সময়েও একই ধারা অব্যাহত রয়েছে। আবেদন না করেও চাকরিতে : খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ সিন্ডিকেটের সদস্য ডা. আবু বকর সিদ্দিক ২০১৪ সালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদন যাচাই বাছাইয়ে তিনি বাদ পড়ে যান। বাদ পড়ার পরেও তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য অধিপ্তরের ভাইভা কার্ড দিয়ে চাকুরি দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি যে পদে চাকুরি করছেন তার সেখানে ওই সময় কেউ আবেদন করেননি। এ বিষয়ে আবু বকর সিদ্দিককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। বলেন , যারা অভিযোগ করেছে তাদের এটি অপপ্রচার। বদলি বাণিজ্য : ২০১৪ সালের মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান আব্দুর রাজ্জাক। তার পোষ্টিং হয় কুমিল্লায়। তিনি ৬ মাসের মধ্যেই তিনি বদলি হন সাতক্ষিরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সে। ডা. ইসরাত জাহান। তার পোষ্টিং হয় গাজিপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগের ৬ মাসের মধ্যে তিনি বদলি নিয়ে চলে আসেন ঢাকার ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। একই সমেয় নিয়োগ পান ডা খোদেজা আক্তার। তিনি পোষ্টিং পান নারায়নগঞ্জের বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এক বছরের মাথায় তিনিও চলে আসেন ঢাকায়। এছাড়াও ডা. মোনালিসা মুশতারি। তার পোষ্টিং ছিল বাগেরহাটে। তিনিও ৬ মাসের মাথায় বদলি নিয়ে আসেন ঢাকায়। ডা. শারমিন সুলতানা তার পোষ্টিং ছিল সিলেটে। তিনিও ঢাকায় বদলি আসেন। এ রকমভাবে প্রায় ১৪০ জন ডাক্তারকে পোষ্টিংয়ের কখনো ৩ মাস কখনো ৬ মাস পরে পছন্দের জায়গায় বদলি করা হয়েছে। বদলির ক্ষেত্রে নেয়া হয়েছে ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। নাম প্রকাশ না করা শর্তে বদলিকৃত ডাক্তাররা বলেন, বদলি হতে কিছু না কিছু তো লেগেছে। কাকে দিয়েছেন এমন প্রশ্নে তারা বলেন, যারা নিয়ে বদলি করতে পারেন তাদের-ই দেয়া হয়েছে। কেনাকাটায় দূর্নীতি : ইউনানী আয়ুর্বেদিক ও হোমিও মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের কেনাকাটায়ও এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করে থাকে । কোটি টাকার যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে কোন ধরনের নিয়ম মানা হয় না। চলতি বছরের ৬ আগষ্ট সরকারী ইউনানী আয়ুর্বেদিক কলেজ ও হাসপাতালের জন্য একটি করে মোট ৩টি আলট্রাসানোগ্রাম মেশিন, একটি ইসিজি মেশিন, প্রিন্টার, ইউপিএস এবং ট্রলি বরাদ্দ দেয়া হয়। এ যন্ত্রপাতিগুলোর মোট মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। এসব যন্ত্রপাতি কেনায় কোন টেন্ডার আহবান করা হয়নি। লোক দেখানো কোটেশন করে মেশিনগুলো কিনে এগুলো সরবরাহ করা হয়েছে। এখাতেও বড় ধরনের দূর্নীতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে একইভাবে ৩টি কলেজে হিটাচি প্রজেক্টর সরবরাহ করা হয়েছে। সেখানে দূর্ণীতি করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারী হাসপাতালগুলোতে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক এবং হোমিও ওষুধ সরবরাহের ক্ষেত্রেও রয়েছে বড় ধরনের দূর্নীতি। পছন্দের বাইরে কোম্পানির বাইরে থেকে কোন ওষুধ নেয়া হয় না। চলতি বছরের জুনে রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার ১৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ লাখ করে মোট ৪৮ লাখ টাকারও ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এখানে বড় ধরনের দূর্নীতি করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন চিকিৎসক জানান, মূলত লাইন ডিরেক্টর ডা. মনোয়ারা এবং ৩জন চিকিৎিসকের নিকট জিম্মি এ খাত। তাদের অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় নিকট অসহায়। ঘুষ ছাড়া কোন ধরনের কাজ হয়না । তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠ তদন্ত করলে প্রত্যেকটি অনিয়মের প্রমান মিলবে। আরো কয়েকজন চিকিৎসক জানান, তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না। যদি কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তবে তাদের কে নানাভাবে নাজেহাল করা হয়। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, যদি কেউ এ ধরনের অভিযোগ করে থাকে তবে তা মিথ্যা। আর আমরা যেহেতু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাকরি করি সুতরাং লাইন ডিরেক্টরের কথা মেনেই আমাদের কাজ করতে হয়। এখানে সিন্ডিকেট বলতে কিছু নাই। অন্যদিকে পরিচালক হোমিও দেশজ চিকিৎসা এবং লাইন ডিরেক্টর ডা. মনোয়ারা সুলতানা মিটিং এ রয়েছেন বলে ফোন কেটে দেন।পরে একাধিকবার তাকে ফোন করে আর পাওয়া যায়নি এছাড়াও ডা. কামরুজ্জামান সুমন ও ডা. কামরুল কায়েস এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। |