![]() সাড়ে তিন বছরেও সন্ধান মেলেনি জ্যেষ্ঠ ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুলের
নতুন বার্তা, বরগুনা:
|
![]() নজরুল ইসলাম সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি (লজিস্টিকস অ্যান্ড অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন) মো. মাজহারুল ইসলামের ভগ্নিপতি। নিখোঁজের পর তার স্ত্রী রুবিনা প্রথমে ৯ জানুয়ারি ঢাকার উত্তরখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি এবং পরে ২৬ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগের ডেমরা জোনাল টিম। পুলিশ বলছে, নজরুল ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দেশের প্রতিটি থানায় ছবি পাঠানো, বোনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ এবং অজ্ঞাত মরদেহের সঙ্গে ছবি মিলিয়ে দেখা হলেও এখনো কোনো হদিস মেলেনি। নজরুল-রুবিনা দম্পতির দুই ছেলে। বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও ছোট ছেলে ইন্টার্ন চিকিৎসক। তাদের গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলা বেতাগী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। নজরুল অগ্রণী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় চাকরি করতেন। পরিবারসহ থাকতেন রাজধানীর শনিরআখড়ায়। তার খোঁজ না মেলায় পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। ২০২৩ সালে তৎকালীন বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে দুই বোন মঞ্জু আক্তার ও কামরুন নাহার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। কিন্তু এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান মেলেনি। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নজরুল ইসলাম ওই বছরের ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টার দিকে উত্তরখানের বাড়ির ভাড়া তোলার কথা বলে শনিরআখড়ার বাসা থেকে বের হন। তিনি ওই দিন রাতে না ফেরায় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর সব আত্মীয়-স্বজনকে বিষয়টি জানানো হয়। তারা কেউ খোঁজ দিতে পারছিলেন না। এরপর উত্তরখান থানায় একটি জিডি করা হয়। কিন্তু তারপরও খোঁজ মেলেনি। পরিবারের ধারণা, ওইদিন তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার পর অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে। নজরুলের ভাই কৃষিবিদ সাইদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব-পুলিশসহ সব বাহিনীর দপ্তরে গিয়েছি। সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজেছি, কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারেনি।’ বোন মঞ্জু আক্তার বলেন, ‘গোয়েন্দা পুলিশকে সব তথ্য দিয়েছি, এমনকি বোন হিসেবে ডিএনএ পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আজও ভাইয়ের কোনো খোঁজ পেলাম না। ভাই বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন, সেটাও জানি না। আমাদের পরিবার এখন চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। মা-বাবা না থাকায় আমাদের একমাত্র অভিভাবককে হারিয়ে এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছি।’ আরেক বোন কামরুন নাহার বলেন, ‘জানি না ভাই এখন কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছেন এবং কোনো অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে কি তিনি এখনো নিখোঁজ? আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মাধ্যমে তার সন্ধান চাই।’ বেতাগী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মো. জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘নজরুল ইসলাম আমাদের সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। তাকে গুম করার পেছনে ফ্যাসিস্ট সরকারের উচ্চপদস্থ এক পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। আমি তার খোঁজ বের করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জোড় দাবি জানাচ্ছি।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মো. বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘নজরুল ইসলাম নিখোঁজ হওয়ার রহস্য এখনো উদঘাটন হয়নি। তবে আমাদের প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। আমরা নতুনভাবে জোরালো তদন্ত শুরু করেছি। আশা করি খুব দ্রুতই একটি ফলাফল পাওয়া যাবে।’ |