![]() জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলা, নেপথ্যে কারা
নতুন বার্তা, রংপুর:
|
![]() অভিযোগ উঠেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন। তাদের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের নেতাকর্মীরাও জড়িত ছিলেন বলে দাবি জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের। এ ঘটনার পর থেকে জাতীয় পার্টি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার শুরু যেভাবে : গত বুধবার রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পুনর্বহালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাত দিনের আলটিমেটাম দেন সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। দাবি না মানলে ঈদের পর লাগাতার আন্দোলনে রংপুর অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, দেশ পরিচালনায় সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের বর্তমান প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারসহ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তোলেন তিনি। মোস্তফার দেওয়া আলটিমেটামের প্রতিবাদ জানিয়ে ওইদিন রাতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় তারা মোস্তফাসহ সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধিদের পুনর্বহাল দাবিতে মিছিলকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার পাল্টা আলটিমেটাম দেন। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টিকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যায়িত করে তাদের রংপুর থেকে বিতাড়িত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। পরদিন বিকেলে চার দিনের সফরে রংপুরে আসেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটি। পরে এই মিছিল থেকেই জিএম কাদেরের বাসায় হামলা চালানো হয়। যেভাবে হামলা : জিএম কাদেরের রংপুরে আসার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটি বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর প্রেস ক্লাব চত্বরের সামনে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরে ৮টার দিকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে গেলে বৃষ্টি শুরু হয়। পরে তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে জাতীয় পার্টি ও জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে বিক্ষোভকারীরা সেনপাড়ায় জিএম কাদেরের বাড়ির দিকে গিয়ে সেখানে হামলা ভাঙচুর করেন। হামলায় জড়িত কারা : হামলার ঘটনায় এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ইয়াসির। তিনি বলেন, ‘সুবিধা নিতে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর আগে সারজিস আলমকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণার সময় টাউন হলে ছাত্রদল ও যুবদলের সশস্ত্র অবস্থান আমরা দেখেছি।’ জাপার ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ আলী জানান, ‘এ হামলার নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি, চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত হয়ে বহিষ্কৃত সাবেক মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার, জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক ও শিবির নেতা সাজ্জাদ হোসেন ও রুশো ভূঁইয়াসহ অনেকে ছিল। আমরা ঘটনার সময়ের ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলায় জড়িত সবার পরিচয় জানাব।’ হামলার সময়ের কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, মিছিল নিয়ে গ্র্যান্ড হোটেল মোড় থেকে জিএম কাদেরের বাসা ‘দ্য স্কাই ভিউ’-এর দিকে যাওয়ার সময় স্টিলের পাইপ হাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব ইসলাম সুমন। এ সময় তার সঙ্গে বেশ কিছু অনুসারী ছিলেন। ওই মিছিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি, চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত হয়ে বহিষ্কৃত সাবেক মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার, মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন, যুগ্ম সদস্য সচিব রাজিমুজ্জামান হৃদয়, রুশো ভূঁইয়াসহ অনেক নেতাকর্মীকে দেখা যায়। পরে তারা মিছিল নিয়ে টাউন হলের সামনে গিয়ে জড়ো হন। সেখান থেকে ফেসবুক লাইভে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব ইসলাম সুমন বলেন, স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টির জায়গা রংপুরে হবে না। রংপুরের সবচেয়ে অভিশপ্ত বাড়ি স্বৈরাচারের প্রতীক এরশাদের বাড়িটি বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভাঙচুর করেছে। পরে তিনি লাইভটি ফেসবুক থেকে ডিলিট করে দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহাবুব ইসলাম সুমন বলেন, মহানগর যুবদলের সভা ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর জাতীয় পার্টির আক্রমণের খবর পুলিশ তাকে জানালে তিনি সেখানে যান। হামলার অভিযোগ অস্বীকার বৈষম্যবিরোধীদের : জাপা চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। উল্টো তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা প্রথমে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের রংপুরে আসার প্রতিবাদে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিরা মিলে মিছিল নিয়ে চৌরাস্তা মোড়ে না যেতেই ককটেল জাতীয় কিছুর বিস্ফোরণ হয় এবং সেখানে থাকা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় তাদের চার নেতাকর্মী আহত হন। তবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির বলেন, ‘হামলার সময় আমাদের নেতাকর্মীরা সেখানে ছিল না। তারা সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয়ে ছিলেন। এ সুযোগে তারা আকস্মিক হামলা চালিয়েছে।’ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না জাপা : দলের চেয়ারম্যানের বাসভবনে হামলায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন নেতাকর্মীরা। তবে জাপা নেতারা তাদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। এ ঘটনায় আপাতত কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাচ্ছে না জাতীয় পার্টি। এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের, কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ অন্য নেতারা। তবে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, জিএম কাদের চার দিনের সফরে রংপুরে এলেও সফর সংক্ষিপ্ত করে তিনি দ্রুত ঢাকায় ফিরবেন। এরপরই দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত অভিযোগ বা মামলা করেনি জাতীয় পার্টি। শুক্রবার (৩০ মে) মহানগর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি। সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। হামলার ঘটনায় অন্য দলের নেতারা কী বলছেন : এ হামলার বিষয়ে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক নাজমুল আলম নাজু বলেন, কেউ ব্যক্তিগত কারণে বা পরিচয়ে ওইরকম মবের মধ্যে গেলে যেতে পারে। তবে রাজনৈতিকভাবে ওখানে যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেই। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন সুজন বলেন, ‘এনসিপি আলাদা একটি দল। তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই।’ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রংপুরের সংগঠক আলমগীর নয়ন বলেন, ‘আমার জানা মতে, ওখানে আমাদের নেতাকর্মীরা ছিল না। ভিডিও ফুটেজ দেখলে বোঝা যাবে। যারা এই হামলায় আমাদের দোষ দিচ্ছে তারা মিথ্যাচার করছে।’ |