![]() ক্ষতিকর তামাক কারখানা সরিয়ে পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট কর্তৃক আয়োজিত এ আলোচনায় অবিলম্বে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক কারখানাটি সরিয়ে পরিবেশবান্ধব এলাকা গড়ে তোলার বিষয়ে সকলে একমত পোষণ করেন। ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনে বক্তব্য রাখেন উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা’র (উবিনীগ) পরিচালক সীমা দাস সীমু, ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল একশন’র (ইপসা) পরিচালক নাসিম বানু শ্যামলী, ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্ট এর পাবলিক হেলথ এন্ড কমিউনিকেশন স্পেশালিষ্ট প্রফেসর ড. অনুপম হোসেন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র কোষাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম সুজন, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, সোস্যাল এডভান্সমেন্ট ফোরাম’র (সাফ) নির্বাহী পরিচালক মীর আব্দুর রাজ্জাক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ৭১ টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা, ব্যুরো অব ইকোনোমিক রিসার্চ (বিইআর) এর প্রজেক্ট ম্যানেজার (তামাক নিয়ন্ত্রণ) হামিদুল ইসলাম হিল্লোল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর বিভাগীয় প্রধান (স্বাস্থ্য অধিকার) সৈয়দা অনন্যা রহমান। সীমা দাস সীমু বলেন, মহাখালী ডিওএইচএস -এর মতো ঘনবসতিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় বিএটি’র দীর্ঘদিন ধরে সিগারেট উৎপাদন করছে, যা এলাকাবাসীর জন্য তীব্র স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। এ কারখানা হতে নির্গত সিগারেটের হাজার হাজার রাসায়নিক পদার্থ বাতাস দূষিত করছে। এতে করে শিশু, নারীদের ফুসফুস ও শ্বাসনালীর সমস্যাসহ অ্যাজমা/হাঁপানি, ফুসফুস ও শ্বাসনালী রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাসিম বানু শ্যামলী বলেন, সিটি কর্পোরেশন আইনে জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন আইন এবং রাজউকের আইন বাস্তবায়ন করা হলে আবাসিক এলাকায় তামাক কারখানা থাকার কথা নয়। তামাক কোম্পানিগুলো নানাভাবে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিতে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করছে। তারা বিনা বাঁধায় আবাসিক এলাকায় বছরের পর বছর কারখানা চালিয়ে যাচ্ছে। যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। হেলাল আহমেদ বলেন, যখন বিএটির সিগারেট কারখানা মহাখালীতে চালু হয় তখন এটি গ্রামীণ জনপদ ছিলো, বর্তমানে এলাকাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশ্র-আবাসিক এলাকা। কারখানার অল্প দূরেই রয়েছে অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিষ্ঠান। এ এলাকায় বসবাসরত সকলেই চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। মীর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তামাক কোম্পানি ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদন করে। কুষ্টিয়ায় তামাক কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের হার আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রচুর জ্বালানী ব্যবহৃত হচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে এবং গো-খাদ্যের স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। ড. অনুপম হোসেন বলেন, বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুহার ৭৬%-৭৮%। এর অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান, পরোক্ষ ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন। মহাখালী ডিওএইচএস -এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় তামাক কারখানার অবস্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, এ এলাকার খেলার মাঠ ও পার্কগুলোতে যারা হাঁটতে আসেন সিগারেট কারখানার কারণে তাদেরও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হয়। তিনি রাওয়া ক্লাব ও স্থানীয় অধিবাসীদেরকে উক্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার এবং তামাক কারখানা সরিয়ে গ্রীন জোন তৈরির আহবান জানান। হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, তামাক একটি এমন পণ্য যার কোন ইতিবাচক দিক নেই। এটি অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। তামাকজনিত কারনে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসা এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাসের কারণে ২০২৩ সালে ক্ষতির পরিমান দাড়িয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। তামাক নিয়ন্ত্রণে চাহিদার পাশাপাশি যোগানও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, ১৯৯০ সালে যখন সরকার সিটি করপোরেশন গঠন করে এবং শহর ক্রমশ বর্ধিত হয় তখনই ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বিএটি’র এ সিগারেট কারখানাকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ধূর্ত বিএটি নানা টালবাহানা ও প্রভাব বিস্তার করে বছরের বছর এখানে অবস্থান করে। কোম্পানিটি অনৈতিক সুবিধা প্রদান ও প্রভাব খাটিয়ে আইন বিরুদ্ধ পরিবেশ ছাড়পত্র সংগ্রহ করে এবং তামাককে ‘লাল’ থেকে সরিয়ে ‘কমলা’ শ্রেনিভুক্ত করে। তিনি অবিলম্বে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা সংশোধন করে সিগারেট কারখানাকে পুণরায় ’লাল’ শ্রেনিভুক্ত করার দাবি জানান। সুশান্ত সিনহা বলেন, বিৃটিশ আমরেকিান টোব্যাকো কোম্পানির পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সন্তানদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও নানাবিধ সুযোগ সুবিধা প্রদানের তথ্য রয়েছে। মহাখালী ডিওএইচএস এর মতো এমন একটি গুরুত্বর্পূণ স্থানে কারখানাটি রাখা গেলে এসকল র্কাযক্রম আরো সহজে তারা করতে পারবে। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ ও এই সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণার আহবান জানান। |