![]() বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ভারতে কমেছে, যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() ক্রেডিট কার্ডে দেশে-বিদেশে লেনদেন সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬১টি তফসিলি ব্যাংক ও ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর মধ্যে ৪৬টি তফসিলি ব্যাংক ও মাত্র একটি এনবিএফআই গ্রাহকদের জন্য ক্রেডিট কার্ড সেবা দিয়ে থাকে, যাদের তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ দেশের ক্রেডিট কার্ডের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের এবং দেশের ভেতরে বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশিরা বিদেশে ভ্রমণ ও কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে কিছুটা সংযমী হয়ে উঠছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা ৩৬১ কোটি টাকা খরচ করেছেন। এই পরিমাণ আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৬.২৫ শতাংশ কম। ফেব্রুয়ারিতে খরচ ছিল ৩৮৫ কোটি টাকা। শুধু মাসিক ভিত্তিতেই নয়, গত বছরের একই মাসের তুলনায় এই খরচের পরিমাণে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা গেছে। ২০২৪ সালের মার্চে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে খরচ হয়েছিল ৫০৩ কোটি টাকা, যা এবছরের চেয়ে ১৪২ কোটি টাকা বেশি। চলতি বছরের মার্চে ভারতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড লেনদেন নেমে এসেছে মাত্র ২৭ কোটি ৬০ লাখ টাকায়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭২.২৬ শতাংশ কম। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে এই খাতে ব্যয় ছিল ১০৬ কোটি টাকা। বিশ্লেষকদের মতে, ভিসা জটিলতা, সীমান্ত পারাপারে কড়াকড়ি এবং অন্যান্য দেশে আগ্রহ বেড়ে যাওয়াই প্রতিবেশী দেশে কার্ডে খরচের প্রধান কারণ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডধারীদের লেনদেন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এসব দেশে উচ্চশিক্ষা, চিকিৎসা, প্রবাসী সংযোগ এবং হজ-ভ্রমণের চাহিদা বাড়ার ফলে ক্রেডিট কার্ডে খরচও ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্চ মাসে দেশটিতে বাংলাদেশিদের খরচ হয়েছে ৫৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৫২ কোটি ৩০ লাখ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্যে খরচ হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৩০ কোটি টাকা। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব। মার্চে দেশটিতে ৩৫ কোটি টাকা খরচ করেছেন বাংলাদেশিরা। কিন্তু এক মাস আগে ২৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে। তথ্য বলছে শুধু ভারত নয়, থাইল্যান্ডেও ক্রেডিট কার্ডভিত্তিক লেনদেন কমেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটিতে ৪৬ কোটি টাকা খরচ হলেও মার্চে তা ২২ কোটিতে নেমে এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ব্যবসা, ব্যক্তিগত প্রয়োজন, সন্তানের পড়াশোনা কিংবা চিকিৎসা—যেকোনো কারণেই হোক, এতদিন বাংলাদেশিদের একটি নির্দিষ্ট দেশের ওপর নির্ভরতা বেশি ছিল। কিন্তু এখন সেই নির্ভরতা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য দেশে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন ওইসব দেশে বেড়েছে। এটা খুবই স্বাভাবিক একটি পরিবর্তন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তনের পেছনে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপড়েন একটি বড় কারণ। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশিদের জন্য ভারত পর্যটক ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। কবে নাগাদ এই ভিসা চালু হবে সে বিষয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। শুধু ভিসা নয়, ভারত কিছু পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি বন্ধ করেছে, এমনকি ভারত হয়ে অন্য দেশে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহনেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে বাংলাদেশের বহু নাগরিক, যারা প্রতিবছর কলকাতা, দিল্লি, দার্জিলিং, সিকিম বা মেঘালয়ে ভ্রমণে যেতেন, এখন আর সে সুযোগ পাচ্ছেন না। সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘এখন যাদের জরুরি প্রয়োজন, তাদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে। কারণ আমাদের দূতাবাসে লোকবল সংকট রয়েছে। যখন কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে, তখন পর্যটক ভিসাও চালু করা সম্ভব হবে। তবে এখন যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন, তাদের মেডিকেল ভিসা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভারতে গিয়ে তৃতীয় কোনো দেশের ভিসার জন্য আবেদন করা হলে, সেসব আবেদনেও আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’ এই পরিস্থিতির কারণে ভারতের প্রতি নির্ভরতা কমে গিয়ে বাংলাদেশিরা এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে ভ্রমণ ও ব্যয় বাড়াচ্ছেন। বিদেশে কমলেও দেশে ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার কমলেও, দেশের মধ্যে ব্যবহার বেড়েছে। ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে ২৬.৫২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে যেখানে লেনদেন ছিল ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা, মার্চে তা বেড়ে ৩ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ভেতরে ১১টি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, পরিষেবার বিল পরিশোধ, খুচরা কেনাকাটা, নগদ উত্তোলন, পোশাক কেনাকাটা, ওষুধ ও ফার্মেসি, অর্থ স্থানান্তর, পরিবহন খাতে ব্যয়, ব্যবসায়িক ও পেশাদারি সেবা এবং সরকারি সেবার বিল প্রদান। এই সব খাতের মধ্যে নগদ উত্তোলন ছাড়া অন্য সব খাতে নভেম্বর মাসে কম খরচ হয়েছে। এছাড়া, ৭৩ শতাংশ লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে ভিসা কার্ড ব্যবহার করে, ১৮ শতাংশ মাস্টারকার্ড এবং ৯ শতাংশ এমেক্স কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। |