![]() মামলা না নেওয়ায় ওসিকে চাকরি ছেড়ে দিতে বললেন পিপি
নতুন বার্তা, যশোর:
|
![]() জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আশিকুর রহমান তুলনকে (৩৫) ওই উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম বাদশা মিয়া মারধর করেন। বিষয়টি নিয়ে আশিকুর রহমান তুলন থানায় মামলা করতে গেলে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা মীমাংসা করার কথা বলে থানার ওসিকে মামলা না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এরই প্রেক্ষিতে থানায় মামলা না নেওয়ায় মোবাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জামালপুর জজকোর্টের পিপি আনিসুজ্জামান গামা। এক পর্যায়ে তিনি ওসিকে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে চাকরি থেকে রিজাইন দেওয়ার জন্য বলেন। প্রতিউত্তরে ওসি পিপিকে উদ্দেশে করে আওয়ামী লীগের লোকদের বিএনপির বানিয়ে জামিন দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনার পর গত ২৯ এপ্রিল আশিকুর রহমান তুলন বাদী হয়ে নুরুল ইসলামসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে বকশীগঞ্জ থানায় মামলার আবেদন করলে থানায় সে মামলা গ্রহণ করেন ওসি। ওসির সঙ্গে পিপির ১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের কথোপকথন তুলে ধরা হলো- আনিসুজ্জামান গামা বলেন, ওনারে তো আমি মানবো না। মিল্লাত সাহেব মামলা নেওয়ার না করার কে? উনি না করবে কেন? উনি মার খেয়েছে? ওসি : আপনার এটা দলীয় বিষয়। দুইজনই দলের লোক, আপনি মামলা নেওয়ার জন্য চাপ দিতাছেন। আনিসুজ্জামান গামা : দলীয় কোনো বিষয় না। আর মিল্লাত সাব এখানে কোনো বিষয় না। আপনার কাছে মামলা দিছি মামলা নেবেন। ওসি : আচ্ছা মামলা দিছেন, মামলা নিবো। উনি না করলে আমি কি ওনার কাছে না শুইনা মামলা নেবো। আনিসুজ্জামান গামা : তাইলে আপনি তো স্বৈরাচারের দোসর। একজনে না করবে আর আপনি মামলা নেবেন না। খালেদা জিয়া না করবে আপনি মামলা নেবেন না। ওসি : মামলা নেওয়ার মতো তো ঘটনা না এইডা। ৩২৩-এর ঘটনা, আপনি তো আইন ভালোই জানেন, আপনি পিপি একজন। আনিসুজ্জামান গামা : ৩২৩-এর ঘটনা, ২৩ শেই মামলা নেবেন। ওসি : ২৩ শে আবার মামলা কেমনে নেয়। আনিসুজ্জামান গামা : আপনি নেবেন না আপনি না করবেন। ওসি : আপনার এত ক্ষমতা, আপনি কোর্টে থেকে মামলা করায়ে দেন অসুবিধা কি? আনিসুজ্জামান গামা : কোর্ট থেকে (মামলা) করবে তাহলে আপনি বেতন নেন কেন? আপনি রিজাইন দেন। ওসি : আপনিও রিজাইন দেন, আমিও রিজাইন দেবো, আপনিও রিজাইন দেন। আপনি সরকারি কাজ করতাছেন, আপনি বিএনপির নাম ভাঙাইয়া মিয়া চলতাছেন, হেই মিয়া আপনি আমারে হুমকি দিয়েন না। আমি আপনারে ডরাই না, আপনি কেডা, হেই মিয়া আপনে কে? আপনারে আমি ভয় পাই? আপনি মিয়া বিএনপির নাম ভাঙাইয়া কোর্টে মিয়া ই করতাছেন, আওয়ামী লীগের লোকদের বিএনপি বানায়ে জামিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতাছেন। আনিসুজ্জামান গামা : আমি বিএনপির নাম ভাঙাইয়া না আমি সরকারি পিপি। আমি বিএনপির পিপি না, বিএনপির গোলাম না। আপনি রেকর্ড করে মিল্লাতরে দেন, রাখলাম। জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর আনিসুজ্জামান গামা বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে কটূক্তির প্রতিবাদ করায় তুলন নামের একজনকে মারধর করে বাদশা ও তার লোকজন। ওসি নিজে আমাকে ফোন করে মামলা লিখে দিতে বলেন। মামলা লিখে দেওয়ার পরও মামলা নেননি ওসি। তিনি মামলা নেবেন না তাহলে আমাকে দিয়ে মামলা কেন লিখিয়ে নেবে। এজন্য তাকে চাকরি রিজাইন দিতে বলেছি। মামলা নেওয়া যাবে না বললেন ওসি পরে আবার মামলা কিভাবে নিলেন? আওয়ামী লীগের লোকদের বিএনপি বানিয়ে জামিন দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আসামিকে জামিন দেওয়ার কেউ না। এগুলো ভুয়া কথা। ওসিই এজহার নামীয় আসামিদের না গ্রেপ্তার করে শুধু সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠান। তিনি নিজেই কল রেকর্ড করে ছড়িয়ে দিছেন। বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদকের মধ্যে একটা ঝামেলা হওয়ায় থানায় মামলা করতে আসে। বিষয়টি স্থানীয় বিএনপি নেতারা মীমাংসা করার কথা জানান। এ বিষয়ে জজ কোর্টের পিপি মোবাইলে কল দিয়ে আমাকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলেন ও চাকরি রিজাইন দিতে বলেন। ইতিপূর্বেও পিপি আনিসুজ্জামান গামা বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক মামলা নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন। কে বা কারা কল রেকর্ড করছে তা জানি না। |