![]() ব্যতিক্রমী ‘এপ্রিল’ : বছরের উষ্ণতম মাসে মিলেছে ঠান্ডা স্বস্তি
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একাধিক প্রাকৃতিক কারণ, বিশেষ করে বৃষ্টি, বজ্রঝড়, বঙ্গোপসাগরীয় বাষ্প এবং বাতাসের প্রবাহপথের পরিবর্তনের কারণে এবার গরমের প্রকোপ কম অনুভূত হয়েছে। ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের এপ্রিল অনেকাংশে ব্যতিক্রমী আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এপ্রিল ও মে মিলিয়ে বাংলাদেশে একটানা ৩৫ দিন তাপপ্রবাহ ছিল—যা বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘকালীন। ওই সময় এপ্রিলজুড়ে মাত্র একবার বড় ধরনের কালবৈশাখী ঝড় হয়েছিল এবং সারাদেশে বৃষ্টিপাত হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ২৭৮ মিলিমিটার। এমন খরা পরিস্থিতিতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা উঠেছিল ৮ দিন, তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল ১২ দিন এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে রেকর্ড হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর বিপরীতে চলতি ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে চিত্র একেবারেই আলাদা। মাসের শুরুতেই ৩ ও ৪ তারিখ বাদ দিলে দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে কোথাও না কোথাও বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে ৪ হাজার ৮২৬ মিলিমিটার বৃষ্টি, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি। আর এবার এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে গত ২৩ এপ্রিল যশোরে। যার পরিমাণ ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর পুরো মাসে তাপপ্রবাহ ছিল ১৮ দিন, তবে কোথাও তীব্র বা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা যায়নি। গরম কমাতে ভূমিকা রেখেছে বৃষ্টি ও বজ্রঝড় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, চলতি মাসে ১০ দিনের বেশি সময় ধরে দেশে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রসহ বৃষ্টি হয়েছে। ৬ এপ্রিল প্রথম কালবৈশাখী ঝড় দেখা দেয়, এরপর ১০ থেকে ১৪ এপ্রিল এবং ১৬ থেকে ২০ এপ্রিল—প্রায় প্রতিদিনই বজ্রসহ বৃষ্টি হয়েছে। এমন ঝড়বৃষ্টির ধারা তাপমাত্রা কমিয়ে রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, এ বছর মার্চ ও এপ্রিল মাসে নিয়মিত বজ্রঝড় হয়েছে। এসব ঝড় বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ প্রশমিত করেছে, ফলে সূর্যের সরাসরি প্রভাব পড়েনি এবং গরম অনুভবও কম হয়েছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগর থেকে আসা বাষ্পীয় বাতাস বাংলাদেশে প্রবেশ করে ঠান্ডা হয়ে মেঘ তৈরি করেছে। এই মেঘ ভারী হয়ে বৃষ্টিতে রূপ নেয়, যার ফলে নিয়মিত বৃষ্টি হয়েছে। জলবায়ুর বাস্তবতায় বদলেছে প্রকৃতির আচরণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে এপ্রিল মানেই ছিল খরাপ্রবণ, গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। তবে চলতি বছর পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। প্রাকৃতিক ভারসাম্যের পরিবর্তন, লা নিনা ও এল নিনোর ভারসাম্যহীনতা এবং বঙ্গোপসাগরীয় প্রভাব মিলে এক নতুন ধরনের এপ্রিল উপহার দিয়েছে বাংলাদেশকে। তবে প্রশ্ন উঠছে, এমন আবহাওয়া এ বছরের ব্যতিক্রম, নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের নতুন সংকেত। বিষয়টি নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, এবছর এপ্রিল মাসে বেশকিছু কারণে আগের মতো গরম জমা হতে পারেনি। যখন কোনো জায়গায় তাপ তৈরি হয়েছে সেটি স্থায়ীভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। আবার মে মাসের প্রথম সপ্তাহজুড়ে তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা কম। স্বাভাবিক গরম থাকবে এবং স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতও হতে পারে। বিচ্ছিন্নভাবে তাপপ্রবাহ দেখা গেলেও, গত বছরের মতো দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে এমন আবহাওয়া পরিস্থিতিকে বড় কোনো জলবায়ুগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত নয়, বরং ব্যতিক্রম হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় চেয়ারপার্সন ড. ফাতেমা আক্তার। তিনি বলেন, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল ও মে — এই তিন মাসকে দেশের উষ্ণতম সময় হিসেবে ধরা হয়। প্রতি বছর এ সময়ে উচ্চ তাপমাত্রা এবং কখনো কখনো তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা দেয়। কিন্তু এবার এপ্রিলজুড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়মিতভাবে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিপাত হয়েছে। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর থেকে আসা অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া সূর্যের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করেছে। ফলে এবার তাপপ্রবাহ তেমন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, যা এক ধরনের স্বাভাবিক আবহাওয়া চক্রের মধ্যেই পড়ে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। মে মাসেও থাকবে তাপপ্রবাহ, সম্ভাবনা ১-২টি ঘূর্ণিঝড়ের বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। বঙ্গোপসাগরে ১-৩টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে ১-২টি নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগে সর্বোচ্চ ৮৬২-৯২০ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগেও বৃষ্টিপাত হবে স্বাভাবিক পর্যায়ে। মে মাসে বৃষ্টিপাতের দিন সংখ্যা ১৫ থেকে ৩৯ দিন পর্যন্ত হতে পারে এবং মাটির আর্দ্রতা থাকবে ২০-৩০ শতাংশ। এর সঙ্গে এ মাসে ২-৩ দিন মাঝারি ও ৩-৫ দিন হালকা কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যেতে পারে। তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা জানিয়ে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১-৩ দিন মৃদু, ১-২ দিন মাঝারি ও ১-২ দিন তীব্র তাপপ্রবাহ হতে পারে। দিনে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও রাতে তা কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। তবে কৃষিকাজের জন্য মে মাসে পরিবেশ মোটামুটি অনুকূল থাকবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এই মাসে গড় বাষ্পীভবন থাকবে ৩.০০-৫.০০ মিমি এবং সূর্য কিরণকাল থাকবে ৫.৫-৬ ঘণ্টা। |