/ আইন / আদালত / প্রশ্নফাঁসের ঘটনা তদন্তে দুইটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট
প্রশ্নফাঁসের ঘটনা তদন্তে দুইটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
প্রশ্নফাঁসের ঘটনা তদন্তে দুইটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সমাধান খুঁজতে বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রশাসনিক কমিটি এবং প্রশ্নফাঁসের ঘটনা তদন্তে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিচারিক কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের লিখিত আদেশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে কমিটি গঠন এবং পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ কমিটি করে দিয়েছেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান। পরে ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচারিক কমিটির কাজ হবে কারা জড়িত এবং কি কি ভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে, কার কার মাধ্যমে, কোন মাধ্যমে ফাঁস হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করবে এবং সেটার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকলে সেক্ষেত্রে কি ব্যাবস্থা নেওয়া উচিত সে বিষয়ে পরামর্শ দেবে। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে কমিটিতে থাকবেন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আইন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন করে ডেপুটি সেক্রেটারি। অন্যদিকে প্রশ্নফাঁস কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়, পাবলিক পরীক্ষায় ভবিষ্যতে যেন আর এমন ঘটনা না ঘটে, কি পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটা হবে না, সে বিষয়ে পরামর্শ করবেন প্রশাসনিক কমিটি। বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে এই কমিটিতে থাকবেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সোহেল রহমান, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরেরে ডিজি, কম্পিউটার সোসাইটির একজন আইটি স্পেশালিস্ট এবং সিআইডির ডিআইজি পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা। এর আগে সকালে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং উইংয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য প্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসি’র সচিব-চেয়ারম্যান, বিটিসিএল’র চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক-চেয়ারম্যান, ঢাকা-রাজশাহী, কুমিল্লা-যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল সিলেট, দিনাজপুর উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডর চেয়ারম্যান এবং পুলিশের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি জুবায়ের রহামন চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। এর আগে গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করে এসএসসি পরীক্ষা বাতিল এবং নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, সিকদার মাহমুদুর রাজি, মো. রাজু মিয়া ও নূর মোহাম্মদ আজমী। নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা প্রথম পত্রের বহুনির্বচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেট পরীক্ষার প্রশ্ন ও ফেসবুকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল ছিল। পরীক্ষা শুরুর একঘণ্টা আগেই তা ফেসবুকে পাওয়া যায়। ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে পরীক্ষা শুরুর প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বচনি) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ৫ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শুরুর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৪ মিনিটে ইংরেজি প্রথম পত্রের ‘ক’ সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। ৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৪৮ মিনিট আগে সকাল ৯টা ১২ মিনিটে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ‘খ’ সেটের গাঁদা প্রশ্নপত্রটি হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে পাওয়া গেছে। যা অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বহুনির্বচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেটের চাঁপা প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়। এটিও অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে গণিতের ‘খ-চাঁপা’ সেটের প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়, যা অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৫১ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে আইসিটি বিষয়ের ‘ক সেট’ প্রশ্ন পাওয়া যায়। আর সকাল ৯টা ৩ মিনিটে ‘গ সেট’র প্রশ্নও ফাঁস হয়। এছাড়া গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পদার্থবিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের পরীক্ষা শুরুর আগেই হোয়াটসঅ্যাপে পদার্থবিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিংয়ের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে। |