/ শিক্ষা / যে সেটে পরীক্ষা হচ্ছে সেই সেটই কিভাবে ফাঁস হওয়া সম্ভব?
যে সেটে পরীক্ষা হচ্ছে সেই সেটই কিভাবে ফাঁস হওয়া সম্ভব?
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রতিটিরই প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। এপর্যন্ত যেসব প্রশ্নের সেট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া গেছে, সেসব সেটের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষার প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। অনেকেরই মনে প্রশ্ন জেগেছে, প্রশ্নপত্রের যে সেটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, সেই সেটই কিভাবে ফাঁস হচ্ছে?
পরীক্ষার প্রথম দিন সকাল ৯টায় বাংলা প্রথম পত্র বহুনির্বাচনি অভিক্ষা ‘খ’ সেট প্রশ্ন, ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে পরীক্ষার প্রায় একঘণ্টা আগে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের বহুনির্বাচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র এবং সর্বশেষ ৫ ফেব্রুয়ারি ইংরেজি প্রথম পত্রের ‘ক’ সেটের প্রশ্ন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ঘেঁটে দেখা গেছে, পরীক্ষা শুরুর আগের দিন থেকে শুরু হয় প্রশ্নপত্র সরবরাহের বিজ্ঞাপনের প্রতিযোগিতা। কেউ ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে, কেউ হোয়াটস অ্যাপ, কিংবা কেউ ইমোতে যুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে ফেসবুকের কয়েকটি গ্রুপে পোস্ট দেয়। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষায় সাজেশনের নাম করে গ্রুপগুলোতে ফাঁস করা হচ্ছে প্রশ্ন। সেই একই প্রশ্নে হচ্ছে পরীক্ষা। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি বড় অংশসহ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানতে পারলেও পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরও তা জানতে পারেন না পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক! ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এটা আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়সহ আমরাও তদারকিতে আছি।’ শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশ থেকে বোর্ডে এসে অভিজ্ঞ শিক্ষকরা চার সেট প্রশ্নপত্র তৈরি করে নিজেরাই সিলগালা করেন। সিলগালা করার পর নিজেরাই লটারির মাধ্যমে পরীক্ষার জন্য দুটি সেট চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করেন। এই লটারি অনুষ্ঠিত হয় পরীক্ষা শুরুর অন্তত দু’মাস আগে। নির্ধারিত ওই দুই সেট বিজি প্রেসে পাঠায় শিক্ষাবোর্ড। বাকি দুই সেট প্রশ্ন বোর্ডেই সংরক্ষিত থাকে। এরপর তালিকা অনুযায়ী সিলগালা করে বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র জেলা ট্রেজারিতে যায়। সেখান থেকে উপজেলা ট্রেজারি হয়ে প্রশ্নপত্র পরীক্ষার দিন কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কৌশল নিলেও তা কাজে আসেনি। পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে,এমন ধারণা থেকে পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে হলে ঢোকানো হয়েছে। তবু প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো যায়নি। এখন পরীক্ষার একঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁস হলেও অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, ফাঁস আগের রাতেই হয়েছে। বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদদের মতে, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় ৪০ থেকে ৬০ ব্যক্তি প্রশ্ন পত্র দেখার সুযোগ পান। সেখান থেকে যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না,তার নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে? প্রাথমিক সমাপনী থেকে পিইসির প্রশ্নপত্র ও অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও দেদারছে ফাঁস হচ্ছে। আর তা ঠেকানোও যাচ্ছে না। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও ছাপার মধ্যেই রয়েছে ফাঁসের আসল রহস্য। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘প্রশ্নপত্র অনেক আগেই ফাঁস হয়। আগে তা ছড়িয়ে দিলে ওই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে না বুঝেই পরীক্ষার দিন বা আগের দিন প্রযুক্তির মাধ্যমে তা ছাড়া হয়।’ এদিকে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার তৃতীয় দিনেও প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস মূল্যায়ন কমিটির প্রধান কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বলেন,‘নতুন গঠন করা কমিটির কাগজপত্র এখনও পাইনি। কাগজ পেলে আমরা কাজ শুরু করবো। ফাঁস হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবো।’ |