/ আন্তর্জাতিক / বিদ্রোহী বিচারপতিদের বৈঠকের পরও ভারতের বিচার বিভাগের দ্বন্দ্ব থামছেনা
বিদ্রোহী বিচারপতিদের বৈঠকের পরও ভারতের বিচার বিভাগের দ্বন্দ্ব থামছেনা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
|
চলমান সংকট নিরসনে গতকাল মঙ্গলবার সেই চার বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। মাত্র ১৫ মিনিটের ওই বৈঠকে কি ফলাফল হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে বৈঠক সূত্রে বলা হয়েছে, সংকট নিরসনের উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
দ্রুত সমস্যা মেটাতে ‘বিদ্রোহী’ ৪ প্রবীণ বিচারপতির সঙ্গে মঙ্গলবার এ বৈঠকে বসেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। গত শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর কাজকর্মের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণার পর এই প্রথম ওই ৪ প্রবীণ বিচারপতির সঙ্গে মুখোমুখি কথা হল দেশের প্রধান বিচারপতির। মিনিট পনেরোর সেই বৈঠকে ছিলেন শীর্ষ আদালতের প্রবীণ বিচারপতি এ কে সিক্রি ও আরও দুই প্রবীণ বিচারপতি। এ দিনের বৈঠকে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে শীর্ষ আদালত সূত্রে দাবি করা হলেও, প্রবীণ বিচারপতিদের সুরে কিন্তু তাল কাটার আভাসও মিলেছে। সব ক’টি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মামলা শোনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে প্রবীণ ৫ বিচারপতিকে নিয়ে এ দিনই একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ গড়ে দিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র থাকলেও, সিনিয়রিটির দিক থেকে এগিয়ে থাকা ‘বিদ্রোহী’ ৪ বিচারপতির ঠাঁই হয়নি সেই সদ্যগঠিত সাংবিধানিক বেঞ্চে। ফলে, দ্রুত সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কতটা আন্তরিক, তা নিয়ে সংশয় উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করেছে শীর্ষ আদালতের অন্দরেই। প্রধান বিচারপতির পরপরই জ্যেষ্ঠ ওই চারজন বিচারপতিকে বাদ দিয়ে গঠিত সাংবিধানিক বেঞ্চের সদস্যরা হলেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি এ কে সিক্রি, এ এম খানউইলকার, ডি ওয়াই চন্দ্রচুড ও অশোক ভূষণ। দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালও বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় সমস্যা এখনও মেটেনি। তবে আশা, তা দু’-তিন দিনের মধ্যেই মিটে যাবে।’’ সরকারের অস্বস্তি কাটাতে আলাদা ভাবে ‘বিদ্রোহী’ ৪ প্রবীণ বিচারপতির সঙ্গে কোনও বৈঠক বা টেলিফোনে তাঁর ‘কোনও কথা হয়নি’ বলেও জানিয়েছেন বেণুগোপাল। সোমবার ঘোষিত সূচি অনুযায়ী, ১৭ জানুয়ারি অর্থাৎ আজ থেকে নতুন সাংবিধানিক বেঞ্চ সিদ্ধান্ত নেবে আধারের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে, সমকামিতায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে কি না, সাবারিমালা মন্দিরে নারী প্রবেশে বাধানিষেধ থাকবে কি না এবং আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হলে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই পদে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে কি না, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর। গত শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে প্রবীণ ৪ বিচারপতির ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণার পরেই সমস্যার সূত্রপাত। ৪ প্রবীণ বিচারপতি জাস্তি চেলামেশ্বর, ক্যুরিয়ান জোসেফ, রঞ্জন গগৈ ও মদন লোকুরের অভিযোগ ছিল, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মামলাগুলি বেছে বেছে তাঁর পছন্দের জুনিয়র বিচারপতিদেরই দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। এ ব্যাপারে প্রবীণ বিচারপতিদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তাঁরা প্রধান বিচারপতি মিশ্রের কাজকর্মের ‘স্বচ্ছতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শীর্ষ আদালতের ৪ প্রবীণ বিচারপতি প্রকাশ্যে তোপ দাগায় তোলপাড় হয় গোটা দেশে। সমস্যা দ্রুত মেটাতে কী কী করণীয়, তা চূড়ান্ত করতে আলাদা আলাদা ভাবে শনিবার জরুরি বৈঠকে বসে ‘বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ ও ‘সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন’। বার কাউন্সিলের বৈঠকে সাত বিচারপতিকে নিয়ে একটি প্রতিনিধিদল গড়া হয়। ঠিক হয়, সোমবার থেকেই ওই প্রতিনিধিদল আলাদা আলাদা ভাবে সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারপতির সঙ্গে কথা বলবে। তাঁদের মতামত নেবে। কথা বলবে দেশের প্রধান বিচারপতি ও তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তোপ দাগা সুপ্রিম কোর্টের ৪ প্রবীণ বিচারপতির সঙ্গেও। তার পর গতকালই সেই প্রতিনিধিদল প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে। ‘বিদ্রোহী’দের অন্যতম বিচারপতি চেলামেশ্বরের বাড়িতে গিয়ে রবিবার কথা বলে ওই প্রতিনিধিদল। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিকাশ সিংহ এ দিন বলছেন, ‘‘চলতি সপ্তাহের শেষাশেষি সমস্যা মিটে যাবে বলে আশা করছি।’’ |