/ অপরাধ / গজারিয়ায় মহাসড়কের যানজট এখন ছিনতাই আতঙ্ক
গজারিয়ায় মহাসড়কের যানজট এখন ছিনতাই আতঙ্ক
গাজী মাহমুদ পারভেজ:
|
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকা থেকে মেঘনা সেতুর পশ্চিম অংশ সোনারগাঁ উপজেলা পর্যন্ত অংশ জুড়ে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হয়। এই যানজট চালক-যাত্রীদের জন্য এখন যতটা না ভোগান্তির ভয়, তার চেয়ে বেশি ছিনতাই আতঙ্ক।
মহাসড়কের এই অংশের যানজট ঘিরে গড়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। গত তিন মাসে এখানে এই চক্রের হাতে নিহত হয়েছে দুজন এবং প্রায় ৩০ যাত্রী আহত হওয়ার খবর জানা গেছে। যানজটে আটক পড়া মাইক্রোবাস, হাইয়েস ও প্রাইভেটকারের যাত্রীরা এবং অনেক সময় অটোরিকশার আরোহী নারী যাত্রী ও পথচারী কর্মজীবীরা ছিনতাইকারী চক্রের শিকার হচ্ছেন বেশি। পুলিশ, স্থানীয় ও আক্রান্ত পরিবার সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। গত মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) ফেনী সদর থানার কাঠা মোবারক বোনা গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহের প্রবাসফেরত তার জামাতাকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মহাসড়কের গজারিয়া অংশে যানজটে আটকা পড়েন। রাত সাড়ে তিনটার দিকে সাত-আটজনের ছিনতাইকারী দল মাইক্রোবাসের গ্লাস ভেঙে সাথে থাকা ছয় ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ পাঁচ লাখ টাকা, চারটি দামি মোবাইল ফোন সেটসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে। এ সময় ছিনতাইকারীদের অস্ত্রের আঘাতে আবু তাহের, তার ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন, মেয়ের জামাই মিজানুর রহমান ও গাড়িচালক আহত হন। গত ১১ জানুয়ারি ভোররাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার পিরোজপুর এলাকায় যানজটে আটকে থাকা দুটি মাইক্রোতে ছিনতাইকালে তাদের বাধা দিলে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে শাহীন মিয়া (২৫) নামের একজন নিহত হন। এ ঘটনায় শাহীনের ভাই সোনারগাঁ থানায় অজ্ঞাত ছিনতাইকারীদের নামে মামলা করেন। নিহত শাহীনের চাচা বিল্লাল মিয়া ও চালক আবদুর রহিম জানান, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থেকে সেনাবাহিনীতে রিক্রুট করা সাত যুবক ও তাদের কয়েকজন আত্মীয়কে নিয়ে রাঙামাটি যাওয়ার পথে ওই স্থানে তাদের বহনকারী গাড়িটি যানজটে পড়ে। এ সময় সাত-আটজন ছিনতাইকারী হামলা করে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন লুট করে। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে শাহীন আহত হলে পার্শ^বর্তী গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চালক ও অপর দুজন আহত হন। একই সময়ে অদূরে আটকা পড়া আরো একটি মাইক্রোবাসে ছিনতাইকারী চক্রটি আক্রমণ করে পাঁচ যাত্রীকে আহত করে। তাদের মধ্যে আবদুল আজিজ, নিয়ামুল কবির, আরিফ হোসেন ও সবুজ মিয়া নামের চার আরোহী গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। তারা বিয়ের তারিখ নির্ধারণের জন্য রাজবাড়ী থেকে কুমিল্লায় যাচ্ছিলেন। গত বছরের ২৭ অক্টোবর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের বালুয়াকান্দি এলাকায় যানজটে আটকে থাকা ট্রাকের চালকের সহকারী খোকন মিয়া (৪৫) ছিনতাই কাজে বাধা দিলে চক্রের হাতে খুন হন। এ বিষয়ে ওই বছর ৪ নভেম্বর গজারিয়া থানায় হত্যা মামলার পর ২৭ ডিসেম্বর পুলিশ উপজেলার বালুয়াকান্দি গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে শামীমকে গ্রেপ্তার করলে আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে চক্রের সাত-আট সদস্যের নাম প্রকাশ করেছে। গজারিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রাণবন্ধু বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, চক্রের অপর সদস্যদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে পুলিশ। গত ১২ ডিসেম্বর ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় স্থানীয় গৃহবধূ তাসলিমা বেগম ও অপর এক গৃহবধূ ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। সাদা প্রাইভেট আরোহী ছিনতাইকারী চক্র পথচারী তাসলিমা বেগম ও রিকশারোহী অপর গৃহবধূর হাতে থাকা ভ্যানেটি ব্যাগ হেঁচকা টানে লুটে নেয়। গজারিয়া থানার ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট মহিউদ্দিন কাদির রানা জানান, যানজটে আটকে থাকা প্রাইভেট কার, মাইক্রো ও হাইয়েস শ্রেণির গাড়ি ছিনতাইকারী চক্রের টার্গেট। যানজটে আটকা পড়লে ওই সব গাড়িতে থাকা যাত্রীদের আহত করে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। মহাসড়ক এলাকার সিএনজি পাম্পের কিছু অসাধু কর্মচারী ছিনতাই চক্রকে পুলিশ আসার খবর দিয়ে সহযোগিতা করে বলে জানতে পেরেছে থানার পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ুম জানান, মহাসড়কের উল্লিখিত অংশে বেশ কয়েকটি ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। থানা পুলিশের সহযোগিতায় হাইওয়ে পুলিশ চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে। গত শনিবার রাতে চরবাউশিয়া এলাকায় স্থানীয়রা ধাওয়া করলে ছিনতাই করা ব্যাগ রেখে পালিয়ে যায় ছিনতাই চক্রের কয়েক সদস্য। পরে গজারিয়া থানা পুলিশ ফেলে যাওয়া সরঞ্জাম উদ্ধার করে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, গজারিয়া অংশে মহাসড়কের প্রায় ১৫ কিলোমিটার নিরাপত্তার দায়িত্বে ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ফোর্সসহ ৪৫ সদস্যের জনবলের সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় থানার সহযোগিতা। তারপরও মহাসড়কে ছিনতাই চক্রের সক্রিয়তা শঙ্কিত করে তুলেছে এই পথে চলাচলকারীরা। |