/ জাতীয় / মহান বিজয় দিবসঃ চাওয়া, পাওয়া, হতাশা এবং নতুন স্বপ্ন
মহান বিজয় দিবসঃ চাওয়া, পাওয়া, হতাশা এবং নতুন স্বপ্ন
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
১৯৭১ সালের এই দিনে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভূমিষ্ট হয়। বিজয় দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্তির দিন। এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে সৃষ্টি হয় নতুন একটি সার্বভৌম দেশ, যেটার নাম বাংলাদেশ। যা বাঙ্গালি জাতিকে পরিচয় করিয়ে দেয় সমগ্র বিশ্বপরিমন্ডলের সাথে। যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এ বিজয়ের মধ্যদিয়ে ছিনিয়ে এনেছেন বাংলার পতাকা, সেসব শহীদকে বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করবে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। বাংলা মায়ের দামাল ছেলের দল মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিপাগল মানুষের প্রবল প্রতিরোধ এবং লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ থেকে পরাজিত হয়ে এ দিনে আত্মসমর্পণ করেছিলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। দীর্ঘ নয় মাস পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তাক্ত যুদ্ধ করেছে এ দেশের দামাল ছেলেরা। এ যুদ্ধ ছিলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ, পরাধীনতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য যুদ্ধ। বিজয় দিবসে পূর্ব আকাশে উদয় হয়েছিলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সূর্য। সেদিনের সেই সূর্যের আলোয় ছিলো নতুন দিনের স্বপ্ন আর মাতৃভুমির কপালে বিজয়ের লাল টিপ পড়ানোর শপথ। আর এ স্বপ্নের জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলেন ৩০ লাখ দেশ প্রেমিক এবং দুই লক্ষ মা বোন হারিয়েছেন তাদের সম্ভ্রম, তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ বিজয়, এ স্বাধীনতা। আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেসকল বীর মুক্তিযোদ্ধা, মা-বোনদের। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছিলো এ দেশ। বিজয়ের এ দিনে সবার অঙ্গীকার সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিনটি ছিলো বৃহস্পতিবার। পৌষের সেই পড়ন্ত বিকেলে তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দান বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল সাড়ে ৪টায় পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক জোন-বি এবং ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীর নেতৃত্বে ৯১ হাজার ৫৪৯ পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। মেজর জেনারেল জ্যাকবের তৈরি করা আত্মসমর্পণের দলিলে বিকালে স্বাক্ষর করেন জেনারেল নিয়াজী ও লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। মুজিবনগর সরকারের পক্ষে এ সময় উপস্থিত ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। আর এ আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটে। জন্ম নেয় একটি নতুন স্বাধীন দেশ- বাংলাদেশ। স্বাধীনতার এতো বছর পার হলেও এখনো আমরা স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ গ্রহন করতে পারি নি। পরাধীনতা এখনো আমাদের ঘ্রাস করে। এখনো অত্যাচারিত হয় সোনার বাংলার মানুষ। সংখ্যালুঘুদের নেই কোন নিরাপত্তা। যে কোন সময়, যে কোন বড় ইস্যুতে তাদের প্রতি চালানো হয় নির্বিচারে অত্যাচার। শুধু কি তাই এখনো পর্যন্ত বাংলাকে মেনে নিতে পারেনি তৎকালীন দেশদ্রোহিরা। এখনো তারা প্রাণের বাংলাকে মন প্রাণ দিয়ে গ্রহণ করতে পারে নি। এখনো তারা যে কোন ইস্যুতে তান্ডব চালায়। যেটা করা হয়েছিল একাত্তরে। সেটার বর্বরতা এখনো বিদ্যমান। যা আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। তার মানে পরাজয় তারা এখনো মেনে নিতে পারে নি। ১৯৭১ সালে তারা সংখ্যালুঘুদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়ার ইতিহাস গড়েছিল, বর্তমানেও স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করা দায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরাশক্তি এখনো বাংলাদেশ এবং বাংলার মানুষকে ভালবাসতে পারে নি। তাই তো কতটা নির্দয় হলে এ কেমন পাশবিকতা। এখনও ঘুম-খুন-বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডের স্বীকার হয় এই দেশের জনতা। দেশ আজ এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সূচকে পার্শ্ববর্তী সকল দেশ থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে শুধু অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হলেই হবে না এ কথাটিও মনে রাখতে হবে। আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবেও অগ্রসর হতে হবে। তাহলেই আমরা স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে পারব। সুতরাং বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। এই বিষয়ে কুষ্টিয়ার বিউটি বলেন, বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্ণ হলেও দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মতামতে ভুল নেই। ৪৬ বছরে আমাদের অর্জন সত্যি অবাক করার মতো। আমেরিকা, জাপান ও অন্যান্য দেশ আমাদের দেশের তুলনায় অনেক পুরানো। আমরা স্বল্প সময়ে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছি। যে কোনো দেশে যোগ্য শাসক থাকলেই দেশ উন্নতি লাভ করবে এটাই সত্য। আমরা তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে এ অবস্থায় পৌঁছেছি। অধিক জনসংখ্যা থেকে রোধ, জনশক্তি রপ্তানি, চিকিত্সা ব্যবস্থায় উন্নতি, গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষকের উন্নতি, কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারসহ অন্যান্য অর্জন রয়েছে। সুতরাং আমাদের বিজয়ের এ ৪৬ বছরে অর্জন অনেক রয়েছে। এগিয়ে যাক উন্নয়নের ধারায় এ প্রত্যাশা আমাদেরও। ৪৬তম মহান বিজয় দিবসে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সেইসব বীর শহীদদের যাদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। ঝিনাইদহ এর মো. খায়রুল ইসলাম (ফুল) বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর একটি অবিস্মরণীয় দিন বা অধ্যায়। যে অধ্যায় আমাদের কখনোই ভুলবার নয়। যেন জীবন্ত ইতিহাস সেটা। এই অধ্যায় বিশ্বমানচিত্র রচনা করেছিল একটি স্বাধীন সার্বভৌম, শোষণ ও নিপীড়ন মুক্ত দেশ ও লাল সবুজের ইতিহাস। আমরা কখনোই ভুলতে পারি না। ৪৬ বছরে আমাদের অনেক উন্নতি আছে। তার মধ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি, পুলিশের কর্মবৃদ্ধি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ইত্যাদিসহ অনেক। শুধু প্রয়োজন সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিকতা। বগুড়া এর মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ডিসেম্বর মাস হলো বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ও নির্দেশে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে এই ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। ৪৬ বছরে অনেক অর্জন রয়েছে। তবে সব মিলে অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি দিতে হবে অন্য বিষয়গুলোর দিকে। চট্টগ্রাম এর আইরিন সুলতানা বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশের সকল মানুষের শান্তি চেয়েছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা দেশ রতœ জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন আজ দেশের মানুষ। সুযোগ্য শাসকের উপস্থিতিতে দেশ অনেক উন্নয়নের দিকে চলছে। দেশ এগিয়ে যাক এ প্রত্যাশা। মহান ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে দেশের সকল মানুষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই রক্তিম শুভেচ্ছা। আমরা কী হারিয়ে কী পেয়েছি-সেই প্রশ্নটি এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। স্বাধীনতার কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি রয়েছে। যেমন জাতীয়তাবোধ, দেশাত্মবোধ, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সামর্থ্য। কোনো জনগোষ্ঠী নিজেকে স্বাধীন জাতি হিসেবে তখনই ভাবতে পারে যখন তার মধ্যে জাতীয় চেতনাবোধ, ঐক্য ও সংহতি, আত্মনির্ভশীলতা, আত্মবিশ্বাস এসব মৌল উপাদান মোটাদাগে থাকে। দেশের নাগরিক হিসেবে প্রতিটি সদস্যের ওপর স্বাধীনতা সুরক্ষার পবিত্র দায়িত্ব বর্তায়। রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য যেমন একজন নাগরিকের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকবে, তেমনি রাষ্ট্রের ইমেজ যেন কোনোভাবেই ক্ষুন্ন না হয় সেদিকেও থাকবে তার সতর্ক দৃষ্টি। দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ থাকলেই কেবল একজন নাগরিক প্রকৃত অর্থে নাগরিকের মর্যাদা লাভ করতে পারে। আমাদের সফলতা নিয়ে যেমন রয়েছে গর্ব, ঠিক তেমনই রয়েছে ব্যর্থতার সমালোচনাও। সমালোচকদেও মতে, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি ৪৬ বছর হয়ে গেল। আমাদের দেশটি ৪৭ বছরে পা রাখছে। জাতীয়ভাবে যৌবনের ধাপ পেরিয়ে পৌঢ়ত্বের দ্বারপ্রান্তে আমরা। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের প্রত্যাশার দিগন্ত যতদূর বিস্তৃত ছিল সে তুলনায় প্রাপ্তির খতিয়ান কি সন্তোষজনক! একসাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের স্বপ্ন ছিল বিশাল, প্রত্যাশা ছিল দিগন্তপ্রসারী। স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে মনের মতো করে সবকিছু গড়বো, দেশকে সাজাবো অপরূপ সাজে, আমার মাতৃভূমি সবুজ শ্যামল এই বাংলা হয়ে উঠবে একটি স্বপ্নপুরী, জাতি হিসেবে আমরা আসীন হবো শ্রেষ্ঠত্বের আসনে-এসব নানা সুখ-ভাবনায় আমরা ছিলাম বিভোর। স্বপ্নের ঘোরে হারানো বেদনাকে আমরা ভুলে গিয়েছিলাম অল্প দিনেই। সম্ভাবনার হাতছানি আমাদেরকে অতীতের দিকে ফিরে তাকানোর সুযোগই দেয়নি। কিন্তু আমাদের এই স্বপ্নের ঘোর কেটে যেতে বেশিদিন লাগেনি। সব স্বপ্ন হয়ে যায় ধূসর। যে প্রত্যাশা নিয়ে জাতি ত্যাগের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছিল সে প্রত্যাশার কিছুই পূরণ হয়নি। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম তার কিঞ্চিৎও বাস্তবে পাইনি। স্বাধীনতার লাভের কিছুদিনের মধ্যেই এক চরম অরাজকতা সৃষ্টি হয়। চারটি বিজয় দিবস পালন করতে না করতেই দুর্ভাগ্যজনক ট্রাজেডি, ষড়যন্ত্র, ক্যু-পাল্টা ক্যু পরিস্থিতিকে বিষিয়ে তোলে। অস্থিরতা ও হতাশায় ছেয়ে যায় পুরো জাতি। আমাদের এই স্বপ্নভঙ্গের কারণ ছিল অনেক। তবে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল নেতৃত্বের ব্যর্থতা। যারা সামনে থেকে, নেতৃত্বের আসনে বসে আমাদেরকে বিজয়ের মুখ দেখিয়েছিল তারাই আমাদের স্বপ্নভঙ্গের প্রধান কারণ। তাদের বিজয়ের পূর্বের ও পরের আচরণের মধ্যে তফাৎ ছিল বিস্তর। বিজয়ের পূর্বে যারা জনগণের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন, বিজয়ের পর তারাই জনধিকৃত হলেন। ক্ষমতার মোহ তাদেরকে উম্মাদ করে তুলল। ‘এসো ভাই লুটেপুটে খাই’ এই নীতিই তাদের কাছে প্রাধান্য পেল। তাদের চারপাশে জড়ো হয়ে থাকা চাটুকারেরা দেশের সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারায় মেতে উঠল। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটাকে পুনর্গঠনের পরিবর্তে নিয়ে গেল চরম বিপর্যয়ের মুখে। ফলে লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এদেশ বিশ্বের দরবারে খেতাব পেল ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে। সে সময় ক্ষমতা ও লুটেপুটে খাওয়ার যে রাজনীতির সূচনা হয়েছিল তা দিন দিন বেড়েই চলছে। ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে অনেকবার। শাসননীতিরও পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি জনগণের ভাগ্যের। পূরণ হয়নি তাদের প্রত্যাশা। বাস্তবে রূপ লাভ করেনি তাদের স্বপ্ন। ইতোমধ্যে আমরা পেরিয়ে এসেছি বিজয়ের ৪৬টি বছর। এখনও এদেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। সীমান্তে লাশ পড়ে পাইকারি হারে। জঙ্গীবাদ হানা দেয় ভয়ঙ্কর রূপে। আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় বিশ্ব মোড়লেরা। সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর লোলুপ দৃষ্টি এদেশের ওপর নিবদ্ধ। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত। দারিদ্রের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ। না খেয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। ন্যূনতম চিকিৎসার অভাবে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে অসংখ্য লোক। পুষ্টিহীনতায় ভুগছে এদেশের সিংহভাগ শিশু। শুধু রাজধানীতেই ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৮ লাখ। মানুষের মৌলিক অধিকার খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদি আজও নিশ্চিত হয়নি। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আমাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। ক্ষমতায় থাকা আর যাওয়ার নোংরা ও হিংস্র প্রতিযোগিতায় এ জাতির জীবন আজ ওষ্ঠাগত। সন্ত্রাসের কাছে আমরা সবাই জিম্মি। মানুষের মৌলিক অধিকারই এখনও এদেশে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যারা রক্ষক তারাই ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে। তথাকথিত রাজনীতিবিদরা নিজেদেরকে দেশপ্রেমিক দাবি করলেও তাদের অনেকের কা-কারখানা জাতিকে লজ্জায় নুইয়ে দেয়। ৪৬ বছর সময় কম নয়, স্বপ্নীল দেশ গড়ে তোলার জন্য এতটুকু সময়ই যথেষ্ট ছিল। আমাদের পরে বিজয় অর্জন করে অনেক দেশ চলে গেছে আমাদের চেয়ে বহুদূরে। এই সুদীর্ঘ সময়েও না পারা আমাদের চরম ব্যর্থতা। জাতি হিসেবে এটা আমাদের দীনতার প্রমাণ বহন করে। আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এগিয়েছি। কিন্তু আমাদের এগিয়ে যাওয়ার গতিটা আশানুরূপ নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগুলেও অনেক ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। একটি জাতির টিকে থাকার যে নৈতিক ভিত্তি আদর্শ ও নৈতিকতা তাতে চরম ধস নেমেছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনে স্খলনের মাত্রা যেভাবে দিন দিন বেড়ে চলেছে তাতে কোনো রকম দাঁড়িয়ে থাকা নৈতিকতার স্তম্ভটিও ধসে পড়বে। ৪৬ বছর আগে আমরা জাতীয়ভাবে যতটা নৈতিকতার বলে বলীয়ান ছিলাম তা কিন্তু এখন নেই। সেই সময়ের মানুষদের মধ্যে অন্যায় ও পশুপ্রবৃত্তির এতটুকু উপস্থিতি ছিল না যা এখন আছে। আত্মপ্রতিষ্ঠা ও লোভের লাগামহীন ঘোড়া আমাদের কোন পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা কেউ বলতে পারবে না। বাহ্যিক সূচকগুলোতে আমরা যতই এগিয়ে যাই নৈতিকতার ভিতটি নড়বড়ে হয়ে গেলে এ জাতির পতন অনিবার্য। এজন্য বাহ্যিক উন্নতির পাশাপাশি নৈতিক উন্নতির বিষয়েও ভাবতে হবে সবাইকে। এই সব সমালোচনা ও হতাশার মাঝেও প্রাপ্তিও কিন্তু কম নয়। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতার থেকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপ নিয়েছে বর্তমান সরকারের আমলেই। আমরা গর্ব করে বলতে পারি, দেশকে ডিজিটাল রূপ দেওয়ার অঙ্গিকার আমরাই প্রথম করেছি। যা দেখে অনেক দেশ অনুপ্রানীত হয়ে তারাও একই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ফ্রিলেন্সিং এর মাধ্যমে বেকার যুবকরা আজ প্রতিষ্ঠিত। পাশের দেশ মায়ানমারের রাষ্টীয় সন্ত্রাসের স্বীকার রোহিঙ্গাদের নিজেদের সীমিত সামর্থের মাঝেও আশ্রয় দিয়েছি। বিশ্বের বুকে গর্ব করার মতো রয়েছে বাংলাদেশের অনেক কিছুই। এগিয়ে চলছি অনেক ক্ষেত্রেই। যদিও প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মাঝে এখনও রয়েছে অনেক অনেক ব্যবধান। তারপরও সবাই মিলেই করতে হবে প্রত্যাশা-প্রাপ্তির মিলন। শুধু সরকার বা অন্যের দোষ না দিয়ে নিজেদেরই উদ্যোগী হয়ে উঠতে হবে। তবেই একদিন আমরাও দাবী করতে পারব পৃথিবীর শ্রেষ্ট জাতিগুলো একটি হিসেবে। |