/ শিক্ষা / বাকৃবিতে হলে হলে মাদকের আসর: গাঁজা-ইয়াবা সেবন চলছে দেদারছে!
বাকৃবিতে হলে হলে মাদকের আসর: গাঁজা-ইয়াবা সেবন চলছে দেদারছে!
এস.এম. আশিফুল ইসলাম মারুফ, বাকৃবি:
|
দামে কম ও সহজলভ্য হওয়ায় হাতের নাগালেই মিলছে গাঁজা, মদ, হেরোইন আর ইয়াবা। এসব মাদক হাতে পেয়ে নেশায় বুঁদ থাকছে মাদকসেবী শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ছাত্রদের আবাসিক ৯টি হলে প্রায় প্রতি রাতেই বসছে মাদকের আসর। অভিযোগ রয়েছে হলগুলোয় প্রকাশ্যে মাদকের আসর বসলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন। ফলে মাদবসেবনের টাকা জোগাতে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীরা। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে শিক্ষা জীবন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী শেষ মোড়, পাগলার বাজার, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়, কেওয়াটখালী ও ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক প্রবেশ করে। পরে তা ক্যাম্পাসের জব্বারের মোড়, শেষ মোড়, কৃষিতত্ত্ব বিভাগের খামার, ফজলুল হক হলের পিছনের পুকুর পাড় সংলগ্ন রাস্তা, পোল্ট্রি ও ডেয়রি ফার্ম সংলগ্ন রাস্তা, ব্যাচেলর কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন স্থানে লেনদেন হয়ে থাকে। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ৯টি হলে দেদার ঢুকছে মাদকদ্রব্য। জানা যায়, মাদকাসক্তরা প্রতি পোঁটলা গাঁজা কেনে ৪০-৬০ টাকায়। কয়েকজন মিলে একসঙ্গে গাঁজা কিনে কক্ষের ভেতরেই আসর বসায়। আবাসিক হলের ছাদ, ক্যাম্পাস পার্শবর্তী ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়, ব্যাচেলর কোয়ার্টার, খামারসহ বিভিন্ন স্থানে বসে এ আসর। বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল, জামাল হোসেন হল, ফজলুল হক হল, শামসুল হক হল এবং আশরাফুল হক হলে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন কক্ষে গাঁজা ও ইয়াবার আসর বসে। পিছিয়ে নেই ঈশা খা হল ও শহীদ নাজমুল আহসান হল। তবে সপ্তাহের ছুটির দিনে এটি আরো জমে উঠে। অনেক সময় অন্য হলের বন্ধুদের এবং বহিরাগতদের নিয়েও বসে মাদকের আসর। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় এ নিয়ে অভিযোগ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসন। গাঁজা ছাড়াও বিভিন্ন রকমের মদ, হেরোইন ও ইয়াবা সেবন করছে মাদকসেবী ছাত্ররা। তবে গাঁজার আসর প্রতিদিনে বসলেও মদ ও হেরোইনের আসর আবাসিক হলে বসে বিভিন্ন উৎসবে। রাম, হুইস্কি, জিন, অফিসার্স চয়েজ ব্র্যান্ডের মদের দাম বেশি হওয়ায় মাদকসেবীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আসর বসায়। এসব মদ এজেন্টের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে আসে। জানা গেছে, ময়মনসিংহ শহরের গাঙ্গিনার পাড়, রেল স্টেশন এলাকা, ব্রিজ মোড়, কেওয়াটখালী ও ছায়াবাণী সিনেমা হল মোড় এলাকার এজেন্টকে ফোন দিলেই তারা ক্যাম্পাসে মাদক পৌঁছে দেয়। এ ছাড়া বাংলা মদের উৎস ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়। ফোন করলেই হেরোইন দিয়ে যায় ডিলাররা। তবে বর্তমান সময়ে মাদকসেবী ছাত্ররা ইয়াবা সেবনের প্রতি বেশি ঝুঁকেছে। প্রতিটি ট্যাবলেট মিলছে ৩০০-৩৫০ টাকায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সিনিয়রদের সঙ্গে সিগারেট ফুকতে ফুকতে একসময় মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে নবীন শিক্ষার্থীরা। মাদকাসক্ত এসব শিক্ষার্থী রাতভর নেশা করার কারণে ঠিকভাবে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না। ফলে একই লেভেলে বারবার থাকতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইয়াবাসেবী শিক্ষার্থী বলেন, গাঁজা ও হেরোইন থেকে ইয়াবা সেবনে বেশি নেশা হয়। পরীক্ষার আগের রাতে ইয়াবা নিলে সারারাত জেগে থেকে লেখাপড়া করা যায়। তাই পরীক্ষার আগে ইয়াবা বেশি নেই। এদিকে মাদকসেবনের টাকা জোগাতে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাকৃবি প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ শিক্ষক বলেন, মাদকের বিষয়টি আসলে সবারই জানা। সর্ষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে তবে ভূত তাড়ানো যায় না। |