/ সারাদেশ / সীমান্তে ঘাস কাটতে গিয়ে যেভাবে গুলিবিদ্ধ হলো বাংলাদেশি কিশোর
সীমান্তে ঘাস কাটতে গিয়ে যেভাবে গুলিবিদ্ধ হলো বাংলাদেশি কিশোর
নতুন বার্তা, রাজশাহী:
|
রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তে ঘাস কাটতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে আহত হয়েছে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হলেও বিএসএফের পক্ষ থেকে গুলি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে।
সোমবার সকালে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর আষাঢ়িয়াদহ গ্রামে এই ঘটনা ঘটলেও গুলিবিদ্ধ কিশোরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়। চৌদ্দ বছরের কিশোর আবু ওবায়েদ এখন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলিটি তার উরুর মাংস ভেদ করে বেরিয়ে গেছে। গুলির ঘটনা নিয়ে যা জানা যাচ্ছে কিশোর আবু ওবায়েদের পিতা গোলাম রসুল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে টেলিফোনে বলেন, ‘’সীমান্তের কাছে আমার সাড়ে তিন কানি জমি আছে। সেখানে বোরো ধানের চাষ করেছি। সেদিন আমি গেছিলাম ভুট্টা খেতে, ছেলেকে বলেছিলাম ধান ক্ষেতে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে কিছু ঘাস কেটে নিয়ে আসতে।‘’ ‘’ঘাস কাটতে কাটতে বুঝতে না পেরে ওবায়েদ (সীমান্ত) পিলারের কয়েক ফুট ভেতরে চলে যায়। সেই সময় বিএসএফের এক জওয়ান এসে তাকে ফিরে যেতে বলে। ওবায়েদ ঘাসগুলো বস্তায় ভরে মাথায় তুলে যখন ফিরে আসছিল, সেই সময় হঠাৎ তার পায়ে গুলি করে,’’ ছেলের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনে বলছেন গোলাম রসুল। স্থানীয় লোকজন পরে আবু ওবায়েদকে নিয়ে এসে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে, পরে রাজশাহীতে নিয়ে যায়। সেদিন রাতেই তার পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। আষাঢ়িয়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সীমান্ত পিলারের দুই পাশে দেড়শ গজ করে খালি জায়গা থাকে। ভারত তাদের জায়গায় দেড়শ গজ পরে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের অংশে সীমান্ত পিলার পর্যন্ত চাষাবাদ হয়। এরপরে ভারতীয় অংশ পড়ে থাকায় সেখানে বড় বড় ঘাস গড়িয়েছে। ‘’ছেলেটি ঘাস কাটতে কাটতে ভারতীয় অংশের কয়েক ফুট ভেতরে চলে গেলে তাকে বিএসএফ গুলি করেছে,’’তিনি বলছেন। এর আগে এই সীমান্তে রাতের বেলায় পাচারকারীদের ওপর গুলির ঘটনা ঘটলেও প্রকাশ্যে দিনের বেলায় শুধুমাত্র ঘাস কাটার জন্য কারো গায়ে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানাচ্ছেন। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী যা বলছে সোমবার এই ঘটনা ঘটলে আবু ওবায়েদের পরিবার পুলিশ বা বিজিবিকে কোন তথ্য জানাননি। কারণ হিসাবে তিনি বলছেন, ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে এটা যে অন্যদের জানানো উচিত, তা তিনি বুঝতে পারেননি। রাজশাহীতে বিজিবি-১ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউল ইসলাম মণ্ডল জানিয়েছেন, ঘটনাটি জানার পরেই তারা খোঁজখবর শুরু করেছেন এবং বিএসএফের কাছে প্রতিবাদ পাঠিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘’এভাবে অকারণে একটা কিশোরের গায়ে গুলি করা অমানবিক একটা ব্যাপার। হয়তো সে না বুঝে সীমান্ত অতিক্রম করে ফেলেছিল, কিন্তু ফিরেই তো আসছিল। আমরা বিএসএফের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। সেই সঙ্গে পতাকা বৈঠকের জন্যও আমরা তাদের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের কাছ থেকে সাড়া পেলে ব্যাটেলিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হবে এবং আমরা তাদের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাইবো।‘’ তিনি জানাচ্ছেন, এই এলাকায় এভাবে গুলির ঘটনা খুব একটা ঘটেনা। বিএসএফ যা বলছে বাংলাদেশের রাজশাহী সীমান্তের অন্যপাশেই ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলা। দক্ষিণ বঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, সোমবার মুর্শিদাবাদ জেলায় এই ধরনের গুলি চালানোর কোন ঘটনা ঘটেনি। তারা যাচাই করে এই তথ্য পেয়েছেন। বিএসএফের কর্মকর্তাদের দাবি, তাদের প্রতিটা গুলির হিসাব বাহিনীর কাছে থাকে। তাই কোথাও গুলি চললে বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা নিশ্চিতভাবেই সেটি জানতে পারতেন। বিএসএফ কর্মকর্তাদের সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, অন্য কোন জায়গায় হয়তো দুষ্কৃতকারী বা পাচারকারীদের গুলি খেয়ে থাকতে পারে ওই কিশোর। এখন হয়তো সে এই গল্প বলে থাকতে পারে বলে তারা সন্দেহ করছে। কারণ এই ধরনের ঘটনা আগেও সামনে এসেছে বলে তারা দাবি করেছে। তবে বাংলাদেশে বিজিবি বলছে, সোমবার সকালে ওই সীমান্তে এক কিশোরের ওপর বিএসএফের পক্ষ থেকে গুলি চালানোর বিষয়ে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলি চালানো বন্ধে দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে বহুবার আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু গোলাগুলি বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব বলছে, এই বছরের প্রথম চারমাসে বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে পাঁচ জন নিহত আর ছয় জন আহত হয়েছে। ২০২২ সালের বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে ২৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১৫ জন। আর ১১ জন বাংলাদেশিকে অপহরণ করা হয়েছে। |