/ সারাদেশ / রংপুর সিটি নির্বাচন: শেষ হলো প্রচারণা, ভোটের অপেক্ষা
রংপুর সিটি নির্বাচন: শেষ হলো প্রচারণা, ভোটের অপেক্ষা
নতুন বার্তা, রংপুর:
|
শেষ হলো রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) শেষ প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এদিন রাত ১২টায় প্রচার-প্রচারণার পর্ব শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা ভোটের। ইতোমধ্যে সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে বিজিবি ও র্যাবের টহল।
এর আগে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণসংযোগ, পথসভা আর উঠান বৈঠক করে ভোটারদের কাছে দোয়া ও ভোট চেয়েছেন প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে নির্বাচন ঘিরে নগরীতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রার্থীদের পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে নগরী। দুপুরে নির্বাচনি পথসভায় ভোট কারচুপির আশঙ্কা না থাকলেও কোনও অনিয়মের চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এদিকে, গণসংযোগে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কারচুপিতে বিশ্বাস করে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। যারা কারচুপির কথা বলছে তাদের অন্য মতলব থাকতে পারে।’ রবিবার প্রচারণার শেষ দিন সকাল থেকে নগরীর নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়া, ইসলামপুর বাজার, খটখটিয়া, নগরীর মার্কেট, বাজার ও বাসাবাড়িতে গণসংযোগ করেছেন হোসনে আরা লুৎফা। তিনি ভোটারদের কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন। এ সময় দলের বিপুল নেতাকর্মী তার সঙ্গে ছিলেন। পথসভায় ভোটারদের উদ্দেশে হোসনে আরা লুৎফা বলেছেন, ‘এই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আমরা কারচুপির ভোটে বিশ্বাসী নই। জনগণের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হতে চাই। আপনাদের বিপুল সাড়া পাচ্ছি। জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর হাজিরহাট, মুচিপট্টি, জীবন বীমা মোড়, বিভিন্ন এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করেছেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। নগরীর হাজিরহাটে নির্বাচনি পথসভায় তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনার এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার কথা অনুযায়ী অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে আশা রাখছি। তবে নির্বাচনে কোনও ধরনের অনিয়ম ও কারচুপির চেষ্টা করলে কঠোরভাবে প্রতিহত করবো আমরা। নগরীর ২২৯টি ভোটকেন্দ্রে আমাদের নেতাকর্মীরা অতন্দ্র প্রহরীর মতো অবস্থান করবে। কোনও অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।’ জাসদের প্রার্থী শফিয়ার রহমান বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় থেকে ধাপ, কাকলী লেন, মেডিক্যাল পূর্ব গেট, পাশারিপাড়া ও কেরানীপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার পক্ষে বাম জোটভুক্ত কয়েকটি দল কাজ করছে। সবাইকে নিয়ে মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ করেছি। জনগণের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবে—এমন একজন শিক্ষিত ব্যক্তিকে এবার ভোট দিয়ে নির্বাচন করবে ভোটাররা।’ পাশাপাশি মাহিগঞ্জ, খাসবাগ, গুপ্তপাড়া, নুরপুর, আদর্শপাড়াসহ আরও কিছু এলাকায় গণসংযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান। গণসংযোগে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি এলাকায় আমার পক্ষে মানুষের গণজোয়ার দেখেছি। ভোটাররা এবার পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তনের হাওয়া আমার দিকেই রয়েছে। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’ অপরদিকে হাজিরহাট, কেল্লাবন্দ, সিও বাজার এলাকায় শেষ গণসংযোগ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান। খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল মুলাটোল, গণেশপুর এলাকায় শেষ প্রচারণা চালান। জাকের পার্টির খোরশেদ আলম বাবু খাঁ, গুপ্তপাড়া, নিউ ক্রস রোড, জি এল রায় রোড এলাকায় প্রচারণা চালান। বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আবু রায়হান গোমস্তাপাড়া, সেনপাড়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান নগরের কেরানীপাড়া, টেক্সটাইল মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় শেষ গণসংযোগ করেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক—এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এসব মেয়র প্রার্থী। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আবদুল বাতেন বলেন, ‘রবিবার রাত ১২টায় প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। সোমবার থেকে মঙ্গলবার ভোটের দিন পর্যন্ত কোনও প্রার্থী আর প্রচারণা চালাতে পারবেন না। সোমবার সকাল থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় সব প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে। ইজিবাইকও চলতে পারবে না। নগরীর বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হবে। যানবাহন তল্লাশি করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ। ভোট উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিতে সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৬ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় টহলে থাকবেন পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। কোনও ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। ইতোমধ্যে সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে যা যা দরকার, তার সবই করা হবে।’ প্রসঙ্গত, আগামী মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন নারী। মোট ভোটকেন্দ্র ২২৯টি। মেয়র পদে প্রার্থী আছেন ৯ জন। নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে প্রার্থী ৬৮ জন এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৮৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। |