/ জাতীয় / ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রথম প্রহরে হাজারও মানুষের ঢল
ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রথম প্রহরে হাজারও মানুষের ঢল
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে হাজারও মানুষের ঢল নেমেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে হাজির হয়েছেন নারী, শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষ।
একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় আকাশে-বাতাসে কেবলই একটি সুরই ধ্বনিত হয়, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কী ভুলিতে পারি।’ ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপরই শহীদ মিনারে ঢল নামে সর্বস্তরের হাজারো মানুষের। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহীদ বেদিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সাংসদ, তিন বাহিনীর প্রধানেরা, কূটনীতিক, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে নেতৃত্বদানকারীদের সংগঠন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামও ফুল দেয় প্রথম প্রহরে। শহীদদের শ্রদ্ধা জানান হুইলচেয়ারে করে আসা একদল যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। একুশের প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তায় ঘেরা আছে। পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে আবারও ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। এরপর শহীদ মিনারে একে একে শ্রদ্ধা জানান সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী, ডেপুটি স্পিকার, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, তিন বাহিনীর প্রধান, আইজিপি, অ্যাটর্নি জেনারেল ও ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত। এরপরই মূলত শহীদ মিনারের বেদী উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। এসময় শুরুতেই শ্রদ্ধা জানান ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য, ঢাবি শিক্ষক সমিতি ও ঢাবি সাংবাদিক সমিতি। এরপর রাজনৈতিক দলগুলো একে একে ফুল নিয়ে হাজির হয় শহীদ মিনারের বেদীতে। শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সারি ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর আগে, মঙ্গলবার রাত ১১টা ৫৩ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৌঁছান শহীদ মিনার এলাকয়। তাদের স্বাগত জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরসহ আয়োজক কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর পলাশীর মোড় হয়ে জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রবেশের পথ রাখা হয়েছে। এই পথে প্রবেশ করে শ্রদ্ধা জানিয়ে সবাই বের হয়ে যাচ্ছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে দিয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে। শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হওয়া সংগঠনগুলোর সঙ্গে রয়েছে ব্যানার, ফুলের তোড়া। আর সাধারণ মানুষের হাতে হাতেও ফুল ও ফুলের তোড়া। হাজার হাজার মানুষ এখন দাঁড়িয়ে রয়েছেন শ্রদ্ধা জানানোর এই সারিতে। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিক থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো জড়ো হতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায়। সাধারণ মানুষরাও রয়েছেন এই লাইনে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রবেশ পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের পলাশী গেটের সামনে একটি ও জগন্নাথ হলের মোড়ে আরেকটি ব্যারিকেড দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই দুটি ব্যারিকেড পার হয়েই সবাইকে পৌঁছাতে হচ্ছে শহীদ মিনারে। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর এই আয়োজন চলছে সুশৃঙ্খলভাবে। পুলিশ, র্যা বসহ সব ধরনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে গোটা এলাকায়। এর বাইরেও শহীদ মিনারের বেদীর আশপাশে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করছেন বিএনসিসি সদস্যরা। |