/ সারাদেশ / সুনামগঞ্জে জলমহালে মাছ লুট করতে এসে ৪১ দুর্বৃক্ত গ্রেফতার
অবশেষে ডিআইজির হস্তক্ষেপে মামলা নিলেন ওসি
সুনামগঞ্জে জলমহালে মাছ লুট করতে এসে ৪১ দুর্বৃক্ত গ্রেফতার
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
|
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় উপজেলায় জলমহালের মাছ লুটের ঘটনায় নানা লুকোচুরি ও নাটকিয়তার পর বৃহস্পতিবার রাতে থানায় ৪১ দুর্বৃক্তের নামে অবেশেষে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজির হস্তক্ষেপে থানায় মামলা নেয়া হয়েছে।’ দেশীয় অস্ত্র, মাছ ধরার জাল ও পিকআপ ভ্যনসহ ৪১ দুর্বৃত্তকে এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার দুপুরে আটকের পর থানা পুলিশে সোপর্দ করলেও থানার ওসি মামলা না নিতে রাতভর গড়িমসি করেন।’
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার ডুবাইল গ্রুপ জলমহালেরপ্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকার মাছ লুটের ঘটনায় আটক দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে জলমহালের ইজারাপ্রাপ্ত সুবংশপুর রুপালী মৎসজীবী সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে মামলা দিতে গেলে মামলা না নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা পর্যন্ত বিষয়টি ধামাচাঁপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন থানার ওসি ও জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল দুই পুলিশ কর্মকর্তা।’ স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সহস্রারাধিক লোক নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলা থেকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রণসাজে সজ্জিত হয়ে মাছ ধরার কারেন্ট জাল-পল নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে সাড়ে ১১ টার মধ্যে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার ডুবাইল গ্রুপ জলমহালের প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকার মাছ দেড় ঘন্টা ব্যবধানে লুটে নিয়ে যায়।’ এদিকে দুবৃওদের সাথে মাছ লুটে শামিল হতে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ হয়ে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সড়ক পথে দুটি পিকআপ বোঝাই করে আরো ৬০ থেকে ৭০ জন দুবৃক্ত ডুবাইল গ্রুপ জলমহালের নিকট পৌছার চেষ্টা করলে এলাকার লোকজন সংঘটিত হয়ে ধাওয়া করে ৪১ দুবৃক্তকে আটক করে রাখে।’ খবর পেয়ে ধর্মপাশা থানা পুলিশ সুখাইড় রাজাপুর বাজারে আটক থাকা ওই দুবৃক্তদের গ্রেফতার করে দুপুরে থানায় নিয়ে আসে।’ এ সময় দুবৃক্তদের হেফাজত থেকে দু’টি পিকআপ, বেশ কিছু রামদা, বল্লম, ছুলফি, লাঠি -সোটা, মাছ ধরার কারেন্ট জাল, বের জাল ও পল পুলিশ উদ্ধার করে। ’ পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসির বাড়ি নেত্রকোনা জেলায় হওয়ায় সুবাদে আটককৃতদের বাড়িও নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হওয়ায় মামলার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তারা। ধর্মপাশার ডুবাইল গ্রুপ জলমহালের ইজারাপ্রাপ্ত সুবংশপুর রুপারী মৎসজীবী সমবায় সমিতি লি.’র সভাপতি বিষ্ণু বর্মণ বললেন, মাছ লুটে নেয়া দুর্বৃত্তদের অধিকাংশই সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পুলিশ সুপার ও থানার ওসির নিজ জেলা নেত্রেকোনার লোকজন হওয়ায় অভিযোগ নিয়ে গেলেও থানার ওসি শুরু থেকেই মামলা নেয়নি।’ ওসি সাহেব পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দোহাই দিয়ে বিষয়টি আপোসে নিষ্পক্তি করে নেয়ার জন্য আমাকে নানামুখী চাপ দিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, অবশেষে মৎসজীবী সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে রাতেই বিষয়টি সিলেট রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি কামরুল আহসান পিপিএমকে জানানোর পর মধ্যরাতের পর থানার ওসি মামলা নিতে বাধ্য হন।’ মাছ লুটের ঘটনায় ডুবাইল জলমহাল গ্রুপের সুবংপুর রুপালী মৎসজীবী সমবায় সমিতি লি.’র ব্যবস্থাপনার দায়েত্বে থাকা বিপ্লব মিয়া বাদী হয়ে ৪১ দুবৃক্তের নামোল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন।, মামলার আসামীরা হল, নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার বেরাইল গ্রামের আজিজুল হক, দ্বীন নগর বৈরাহাটির শিহাব,একই জেলার পূর্বধলা উপজেলার যুগির কুপা গ্রামের মজনু খাঁ, বাইনজা গ্রামের সোহেল মিয়া. একই গ্রামের আবদুল আলী, সোহরাব, মোখুলেছুর রহমান, জিয়াউর রহমান, আল আমিন, স্বপন মিয়া, রিপন মিয়া, সুজন মিয়া, খোকন মিয়া, আহমদ উল্লাহ, আলমপুরের এমদাদুল হক, খোকন আহমেদ, বিল কাউছি গ্রামের শরিফ মিয়া, ব্রাম্মণ করেহা গ্রামের ইসলাম উদ্দিন, কামাল হোসেন, শহিদ, ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মুকুরিয়া গ্রামের আবদুস সোবহান, রফিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, রইছ উদ্দিন, বোরহান ,কালা মিয়া, ইদ্রিস মিয়া, ফরহাদ, শাকিল, উজ্জল, জামাল, আবদুস সাক্তার খাঁ, গিয়াস উদ্দিন, আইয়ুব খাঁ, অভিলাস দেব নাথ, রমজান মিয়া, রাসেল মিয়া, রামচন্দ্র নগর গ্রামের আবদুল জব্বার, রিপন মিয়া। এছাড়াও মামলায় ১ হাজার থেকে ১২’শ জন দুবৃক্তকে অজ্ঞাত নামা আসামী করা হয়েছে। ধর্মপাশা থানার ওসি সুরঞ্জিত তালুকদার বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, বিষয়টি আপোস মিমাংসার জন্য মুচলেখা রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার জন্য উপর মহলের নির্দেশ থাকায় আমি আপাতত মামলা নিতে পারছিনা। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাবীবুল্লাহ জুয়েল বৃহস্পতিবার রাতে বলেন , আসলে যারা মাছ ধরার জন্য এসেছিলেন তারা তো মাছ ধরে চলে গেছে। এখন যারা আটক রয়েছেন তারা মাছ ধরতে এসেছিলেন ঠিকই কিন্তু মাছ ধরেননি। তারা তো নিরীহ, তাই মামলা না নিয়ে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নিষ্পক্তির চেষ্টা করা হচ্ছে।’ সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খাঁনকে বৃহস্পতিবার রাতে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।’ মামলার প্রসঙ্গে জানতে শুক্রবার বিকেলে ফের ধর্মপাশা থানার ওসির সরকারি মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় নতুন করে উনার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।’ সুনামগঞ্জের জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা ধর্মপাশায় জলমহালের মাছ লুটের ঘটনায় ডিআইজির হস্তক্ষেপে অবশেষে থানায় বৃহস্পতিবার রাতেই মামলা নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। |