/ রাজনীতি / রায়ের সার্টিফাইড কপি নিয়েও ‘চক্রান্ত’ চলছে বলে বিএনপির দাবী
রায়ের সার্টিফাইড কপি নিয়েও ‘চক্রান্ত’ চলছে বলে বিএনপির দাবী
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
এক সপ্তাহ হলো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় হয়েছে। ৫ বছরের সাজা নিয়ে কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রায়ের দিনই (৮ ফেব্রুয়ারি) আপিল করার কথা জানিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা।কিন্তু, উচ্চ আদালতে আপিলের অন্যতম শর্ত রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়া, যা বিগত সাত দিনেও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা নিতে পারেননি। ফলে আপিল দায়ের নিয়ে কিছুটা সংকটে পড়েছেন আইনজীবীরা।
বিএনপির নেতারাও মনে করছেন, সহসা রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়া যাবে। আর এটি পেতে দেরি হওয়ার পেছনে সরকারি চক্রান্ত দেখছেন তারা। বিএনপি নেতাদের দাবি, খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখার পরিকল্পনাতেই সরকার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করতে সময় নিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, তারিখ ঘোষণার মাত্র ১৩ দিনেই ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় লেখা সম্ভব হয়েছে। অথচ এক সপ্তাহ পার হলেও তা প্রিন্ট দিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে না। খালেদা জিয়ার এক আইনজীবী বলেন, ‘রায় ঘোষণার দিনই আমরা বলেছি- দ্রুত রায়ের সার্টিফাইড কপিটা যেন সরবরাহ করা হয়। আদালত তখন যত দ্রুত সম্ভব সরবরাহ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘রায় যদি লেখা না থাকে, তাহলে কীভাবে ঘোষণা করা হলো? আদালত রায়ের দিনই তো বলেছেন- ৬৩২ পৃষ্ঠা রায়ের সব পড়া সম্ভব নয়। কার্যকরি অংশটুকু পড়ে শুনাচ্ছি।’ এই আইনজীবীর ভাষ্যে, প্রথা রয়েছে- সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত (মৃত্যুদণ্ড) আসামিসহ যত বড় মামলার রায়ই হোক না কেন যে কোনো মুহূর্তে সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করতে পারেন আদালত। আর সার্টিফাইড কপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আপিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি- এই রায় ঘিরে সরকারের গভীর নীলনকশা রয়েছে। এখন দেখছি সার্টিফাইড কপি দিতে বিলম্ভ করা হচ্ছে। এসবের একটিই উদ্দেশ্য দেশনেত্রীকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা।’ অবশ্য বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনেও মির্জা ফখরুল রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়া নিয়ে আশংকা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘শঙ্কাটা আমরা প্রথম থেকেই করে আসছি। মামলা এবং এর বিচারকাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হয়েছে। অথচ এক সপ্তাহ পার হলেও বিচারক নাকি রায়ের কপিতে সই করতে পারেননি। আজ বলা হচ্ছে, আগামী রোববার সার্টিফাইড কপি দেয়া হবে। আল্লাহই ভালো জানেন, ওইদিন আবার কী বলা হয়! শুধু এই রায় নয়, আরও কত কী যে করা হবে, সেই শঙ্কাতেই আছি আমরা।’ এ বিষয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করতেই রায়ের সার্টিফাইড কপি দিতে দেরি করা হচ্ছে। বিএনপি এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে গভীর একটি চক্রান্ত কাজ করছে।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘৬৩২ পৃষ্ঠার রায় কোথা থেকে এসেছে আমরা জানি। এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। এজন্যই তো মাত্র ১৩ দিনের মাথায় সাজা দিয়ে দেয়া হলো। এখন তাকে ( খালেদা জিয়া) দীর্ঘদিন কারাগারে রাখতে চক্রান্ত চলছে।’ এ বিষয়ে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেমূলক মামলার ক্ষেত্রে কোনো টাইম ফ্রেম থাকে না। সার্টিফাইড কপি সরবরাহের ক্ষেত্রে ইচ্ছেকৃত কালক্ষেপণ করা হচ্ছে, এটা এখন স্পষ্ট।’ খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লা মিয়া বলেছেন, ‘কোর্টের পেশকার জানিয়েছেন- মামলার রায়ের অর্ধেক কম্পেয়ার হয়েছে। বাকি অর্ধেক রোববার কিংবা সোমবারের মধ্যে হলে দেয়া হবে। দেখি সেদিন কী হয়!’ উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি পুরনো ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই মামলায় বিএনপি প্রধানের ছেলে তারেক রহমানসহ বাকি আসামিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায়ের পরপরই খালেদা জিয়াকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। নির্জন এই কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। |