/ সারাদেশ / ঝালকাঠি বিসিক ব্যবস্থাপক জালিস'র বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক
ঝালকাঠি বিসিক ব্যবস্থাপক জালিস'র বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক
আজমীর হোসেন তালুকদার, ঝালকাঠি:
|
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ঝালকাঠি শাখার ব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদের দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারীতার বিষয়ে একাধিক ঋণ গৃহীতার প্রদান করা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত চলছে। তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিসিক খুলনা অঞ্চলের পরিচালক শাহ নেওয়াজ সরেজমিন ঝালকাঠিতে এসে অভিযোগকারী ও স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য এ তদন্ত সম্পন্ন করেছে। এ সময় একাধিক ঋণ গৃহীতা অভিযোগকারী ও স্বাক্ষিদের কাছ থেকে সাক্ষ্য-প্রমান গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিসিক শিল্প নগরী প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক ও দূর্নীতির মামলায় দুদকের চার্জশীটভূক্ত আসামী অসীম কুমার ঘোষের সাথে আতাঁত করে ব্যাপক দূর্নীতি ও লুটপাট চালিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের ৮ জুন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ঝালকাঠি শাখা থেকে প্রিন্টিং ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র দে গ্রাহক হিসাবে নগদ ১ লাখ টাকা ঋণ গ্রহন করেন। ঋণ অনুমোদন ও উত্তোলনের বিনিময়ে শাখার ডেপুটি ব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে বাধ্য করেন। এরপর আগস্ট মাস থেকে মাসিক ৫ হাজার টাকা কিস্তি দেয়ার জন্য ৯ আগস্ট বিসিক ঝালকাঠি শাখায় উপস্থিত হলে ব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ জুলাই মাসে কিস্তি না দেয়ার অভিযোগ তুলে প্রতিদিন ১০০ টাকা হারে ২৭ দিনে ২৭০০ টাকা জরিমানা ধার্য করেন। দূর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তার সাথে অনেক অনুনয়-বিনয়ের পরেও কোন নমনীয়তা না দেখিয়ে জরিমানার টাকা সরাসরি হাতে আর কিস্তির টাকা ক্যাশে দিতে হবে বলে তিনি জানান। নিরুপায় হয়ে ঐ ব্যবসায়ী তার কথা অনুযায়ী জরিমানার টাকা হাতে দিলে কোন রশিদ না দিয়েই সেই অর্থ পকেটে রাখেন। পরের মাসের মাসিক কিস্তি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অফিসে গেলে ৭০০ টাকা, অক্টোবর মাসে একই ভাবে ৩০০ টাকা বিনা রশিদে জরিমানা বাবদ রাখেন। ১৬ নভেম্বর কিস্তির টাকা দিতে বিসিকের অফিসে গেলে অর্থলোভী শাখা ব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ উক্ত ব্যবসায়ীর সাথে র্দূব্যবহার ও অশালীন আচরণ করে তার কক্ষ থেকে বের করে দেন। এসময় দূর্নীতিবাজ জালিস মাহমুদ উল্লেখিত হারে জরিমানার টাকা না দিলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করে জেলের ভাত খাওয়ানোর হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন। থানায় দায়েরকৃত জিডি সূত্রে জানাগেছে, উপরোক্ত বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় কতিপয় ব্যবসায়ীর মধ্যস্থতায় এক বৈঠকে উভয়ের মধ্যে ভূল বোঝাবুঝির মিটিয়ে সমঝোতা করে দেন। তবে বিসিক ব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ এতে খ্যান্ত না দিয়ে ঝালকাঠিতে বৈবাহিক সুত্রে কিছু নিজেস্ব আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র দে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধূমকি দিতে শুরু করলে তিনি ঝালকাঠি থানায় একটি জিডি দায়ের করেন। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ঝালকাঠির একটি মেয়ে বিয়ে করার সুবাদে ‘গুনধর জামাই’ জালিস মাহমুদ তার শ্বশুর পক্ষের ৪/৫ জন লোককে পাঠালে তারা নিজেদের জালিস মাহমুদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে গোপাল চন্দ্র দে কে সাবধান হয়ে যওয়ার হুমকি দেন। ‘সে (জালিস মাহমুদ) দুর্নীতি করলে সরকার দেখবে, আপনার দেখার কোন দরকার নেই জানিয়ে ‘বেশী বাড়াবাড়ি করলে গুম করে দেয়া হবে বলে’ হুমকি দিয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চলে যান। এ ঘটনার পর থেকে ভূক্তভুগী ব্যবসায়ী পোস্ট অফিস রোডস্থ পৃথিবী ডট কম এর মালিক গোপাল চন্দ্র দে তার নিজের ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হয়ে পরেন। বিসিকের ঋণ গৃহীতা গোপাল চন্দ্র দে সহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ডেপুটি ম্যানেজার জালিস মাহমুদের বিরুদ্ধে তারা গত ডিসেম্বর মাসে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ প্রদান ও এর কয়েকদিন পর সদর থানায় সাধারন ডায়েরী (নং- ৪৮৭) দায়ের করেন। এ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ঝালকাঠি শহর জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বেশ কয়েকদিন নমনিয় ভাবে থাকার পর বর্তমানে সে পূনরায় গ্রাহকদের পাশাপাশি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারীতা ও র্দূব্যবহার করতে শুরু করেছে বলে জানাগেছে। এ ব্যাপারে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিসিক খুলনা অঞ্চলের পরিচালক শাহ নেওয়াজ জানান, ঝালকাঠি বিসিক ব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ এর দুর্নীতির বিষয়ে একাধিক ঋন গৃহীতা লিখিত অভিযোগ করেছে। তাই সরেজমিন তদন্তের জন্য স্বাক্ষ-প্রমান গ্রহন করা হয়েছে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আলোকে বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রদান করা হবে। |