/ সারাদেশ / অস্তিত্ব বিলিনের পথে কালাইয়ে প্রত্নতাত্বিক গুরুত্ব সমৃদ্ধ ৮টি মন্দির
অস্তিত্ব বিলিনের পথে কালাইয়ে প্রত্নতাত্বিক গুরুত্ব সমৃদ্ধ ৮টি মন্দির
আব্দুন নুর নাহিদ,জয়পুরহাট:
|
প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব সমৃদ্ধ জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার উল্লেখযোগ্য তালোরা-বাইগুনী শিবমন্দিরসহ হিন্দু ধর্মীয় ৮টি নিদর্শন নিশ্চিহ্নের পথে।
কালাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন তালোড়া-বাইগুনী শিবমন্দিররটির বর্তমানে অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। ফাটল ধরা এবং হেলে যাওয়া দেয়াল পড়ে গেলেই এটি নিশ্চহ্ন হয়ে যাবে। সেই সাথে বিশ্বখ্যাত পর্যটক ও প্রত্মতত্ত্ববিদগণের পরিদর্শনকৃত এই মন্দিরের আর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবেনা। জনপ্রবাদ মতে, কালাই উপজেলার উদয়পুর ই্উনিয়নের তালোড়া-বাইগুনী গ্রামে অবস্থিত এই শিব মন্দিরটি উনিশ শতকে নির্মিত বলে মনে করা হয়। ”বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস’নামক গ্রন্থের প্রাবন্ধিক ড. নাজিমুদ্দীন আহম্মদ এর বরেন্দ্র অঞ্চলের মন্দির স্থাপত্য শীর্ষক প্রবন্ধের আলোকে জানা যায়, ১১ ফুট দীর্ঘ বাহু বিশিষ্ট বর্গাকার ভিত্তিভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত একচুড়া বিশিষ্ট এই মন্দিরটির উচ্চতা ১৪ ফুট। এর একটি মাত্র খিলানযুক্ত দক্ষিণমুখী প্রবেশ পথ রয়েছে। খিলানের উপর স্প্যা-েলটি একটি বাঁকানো মোল্ডিং যুক্ত কাঠামোর আবেষ্টনীর মধ্যে আবব্ধ। টেরাকোটা সমৃদ্ধ নিচের অংশের বক্রাকার কার্ণিশের উপর সূচালো পিরামিড আকৃতির চুড়াটি সাধারণ চুন সুরকি দিয়ে তৈরি। মন্দিরটি ইতোপূর্বে সুন্দর সুন্দর পোড়ামাটির ফলক, লতাপাতা, জ্যামিতিক নকশা দ্বারা সুশোভিত ছিল। বর্তমানে সেগুলো নিশ্চিহ্ন। তাঁর মতে, পরিদর্শনকালীন সময়ে দরজার পশ্চিমে একজন ইউরোপীয় সৈনিককে একটি বন্দুক হাতে দন্ডায়মান থাকার একটি কারুকার্য দেখার বর্ণনা পাওয়া গেলেও বর্তমানে এর কোন অস্তিত্ব নেই। ভারতীয় উমহাদেদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় স্থান পাওয়া এই প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শনটির দেয়াল ফেটে গিয়ে হেলে পড়েছে যা এটির অস্তিত্ব নিশ্চিহ্নের পাশাপাশি পথচাদিরদের মত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িযেছে। এছাড়া, একই উপজেলার দেওগ্রাম ১টি, জগডুম্বর ১টি, বলিগ্রাম ১টি, কাশিপুর (শিমরাইল) ১টি, জামুরা-বাসুরা ২টির মধ্যে একটি মন্দিরের অস্তিত্ব বিলিন হয়ে গেছে। ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে অস্তিত্বের কথা জানান দিয়ে বিলুপ্তির প্রহর গুনছে কালাই পৌর সদরে বাজার এলাকার একটি, তালোড়া বাইগুনীর একটি এবং জামুরা-বাসুরা গ্রামের একটি মন্দির। স্থানীয় জনগণের অভিযোগ করেন, ইতোমধ্যেই এসব ধর্মীয় স্থাপনার মূল্যবান মূতি, টেরাকোটা সমৃদ্ধ ইট, কষ্টিপাথর সহ উপাসানার নানান উপকরণ খোয়া গেছে। কালাই উপজেলার লোক গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল মজিদ বলেন,তালোড়া-বাইগুনীর এই মন্দিরসহ কালাই উপজেলার অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা সমূহ সরকারিভাবে চিহ্নিতকরণ সহ সেগুলো সংরক্ষণ ও উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেয় প্রয়োজন। কালাই উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা মুনীশ চৌধুরী আক্ষেপ করে বলেন, কালাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত মন্দির-মঠ গুলোর বেহাত হওয়া সম্পত্তি উদ্ধার এবং এগুলো সংরক্ষণ, সংস্কার করা দরকার। পাশাপাশি প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক এসব স্থাপনা গুলোকে চিহ্নিত করা আবশ্যক। |