/ খেলাধুলা / দিন শেষে একটু আক্ষেপ ছাড়া আলো ঝলমলে দিন পার করল বাংলাদেশ
দিন শেষে একটু আক্ষেপ ছাড়া আলো ঝলমলে দিন পার করল বাংলাদেশ
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্বের অভিষেকটা কি এর চেয়ে ভালো হয়তো হতে পারত পারতনা। একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে অধিনায়কত্বের শুরুতে একটি সেঞ্চুরি করতে পারলেই সবচেয়ে ভালো বলা যেত। কিন্তু নিজের প্রথম ম্যাচেই এমন উইকেটে টসে জিতেছেন, আবার প্রথম দিনের খেলা শেষের ১৫ মিনিটের আগে তাঁকে মাঠে নামতে হয়নি—অধিনায়ক তো এতেই তৃপ্তি বেশি পাবেন। শুধু মাহমুদউল্লাহই নন, পুরো বাংলাদেশকে ঢেকুর তোলার মতো তৃপ্তি দিয়েছেন মুমিনুল হক। শেষ দিকে দুই উইকেট হারিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৭৪ রান তুলেছে বাংলাদেশ।
প্রথমেই মুমিনুলের উদ্দেশে স্তুতিবাক্য ব্যয় করা যাক। কোচ হাথুরুসিংহের সময়ে ওয়ানডে দলে ব্রাত্য হয়ে গিয়েছিলেন। হাথুরু-উত্তর যুগেও ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি। শ্রীলঙ্কান কোচের আমলেই ‘টেস্ট খেলোয়াড়’ ট্যাগ পেয়েছেন, আবার সেই টেস্ট দল থেকেই বাদ পড়েছেন! হাথুরুসিংহে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তাঁর গড় ছিল ৭৫ এর ওপর। সেই মুমিনুলের গড় তিন বছরে নেমে এসেছিল ৪৩.৮০-এ। সবচেয়ে ভয়ংকর, ক্যারিয়ারের প্রথম বছরে ৩ সেঞ্চুরি করা মুমিনুল পরের তিন বছরে পেয়েছেন মাত্র এক সেঞ্চুরি! সেটাও তিন বছর আগে! সে জন্যই হয়তো হাথুরু-উত্তর যুগের প্রথম ইনিংসটাই উদ্যাপন করলেন সেঞ্চুরি দিয়ে। সেটাও ক্যারিয়ারের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে! ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা করেছিলেন ৯৮ বলে। পঞ্চমটা করলেন ৯৬ বলে। তাঁর তোপের মুখেই রঙ্গনা হেরাথকে মনে হচ্ছিল কোনো এক গলির বোলার। শ্রীলঙ্কার অন্য বোলাররা? গলির মানের না হলেও ঠিক পাতে তোলার মতো নয়! সৌরভ ছড়ানো এক ইনিংসে ১৬ চার ও ১ ছক্কায় ১৭৫ রান করেছেন মুমিনুল। কী ছিল না এ ইনিংসে? টাইমিংয়ের নিপুণ প্রদর্শনীতে স্লাইস করছেন, ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে কাট। কখনো পুল কখনো বা লফটেড শট! বাংলাদেশের দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই হাজার রানের মাইলফলক ছুঁলেন কীভাবে? হেরাথের বলে এগিয়ে এসে লং অফ দিয়ে এক ছক্কা। ১৫৭ থেকে এক লাফে ১৬৩। চতুর্থ বাংলাদেশি হিসেবে দুটি দেড় শ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ডও হয়ে গেল সে সঙ্গে। এমন ইনিংসেই তো তৃতীয় উইকেটে ২৩৬ রানের জুটিটা হলো। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জুটি। আজ মুমিনুলের সঙ্গী মুশফিকের নামটা আছে রেকর্ড জুটিতেও (আশরাফুল-মুশফিক, ২৬৭)। এবার একটু মুশফিক প্রসঙ্গে আসা যাক। মুমিনুল অন্য প্রান্তে ছিলেন বলেই হয়তো আজ তাঁর নামটা পরে এল। দিনের শেষভাগে এসে নার্ভাস নাইনটিজের শিকার হয়েছেন বলেও। সুরঙ্গা লাকমলের বলে ৯২ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগ পর্যন্ত একবারও মনে হয়নি তিনি আউট হতে পারেন। মাত্র ১০টি চার মেরেছেন কিন্তু শ্রীলঙ্কান বোলারদের কখনো থিতু হতে দেননি। কিন্তু দ্বিতীয় নতুন বলের হালকা একটু সুইং ক্যারিয়ারের ১৯তম ফিফটিকে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি হতে দিল না। লাকমলের পরের বলটাই বাংলাদেশের দিনটায় আক্ষেপের সুর এনে দিল। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা একটি বল কী বুঝে ছেড়ে দিয়েছিলেন লিটন দাস, সেটা তিনিই বলতে পারবেন। তবে ফল যে তাতে ভালো কিছু হয়নি, সেটা ‘গোল্ডেন ডাক’ হয়েই টের পেয়েছেন। এরপর আর কোনো বিপদ ঘটতে দেননি মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহ। প্রথম দিন সকালের শুরুটাও ছিল আশাজাগানিয়া। ওপেনিং জুটিতে ৭২ রান এনে দিয়েছেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ফিফটির (২৫টি) রেকর্ড গড়েই অবশ্য দিলরুয়ানের বলে আউট হয়ে গেছেন তামিম। দলীয় ১২০ রানে ফিরেছেন ইমরুলও। তবে সান্দাকানের বলে এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তটা ইমরুল রিভিউর আশ্রয় নিলেই বদলে যেত। দিন শেষে অবশ্য সে আক্ষেপ আর থাকেনি। সৌরভ ডাকনামের মুমিনুল যে সে সুযোগ রাখেননি! |