/ সারাদেশ / মোহনা বিভাগীয় শ্রেষ্ট: এবার জাতীয় পর্যায়ে সংঙ্গীত প্রতিযোগী, আনন্দিত কলেজ কর্তৃপক্ষ
মোহনা বিভাগীয় শ্রেষ্ট: এবার জাতীয় পর্যায়ে সংঙ্গীত প্রতিযোগী, আনন্দিত কলেজ কর্তৃপক্ষ
নিরঞ্জন দে, ডিমলা (নীলফামারী):
|
সুরেলা কন্ঠে সুরের মোহনায় মাতিয়ে রবীন্দ্র, নজরুল ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্টত্ব অর্জন করে এবার জাতীয় পর্যায়ে সঙ্গীত প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনের সুযোগ পেয়েছে মেধাবী ময়ুরকণ্ঠি মোহনা। গ্রামের একেবারেই গ্রামীণ জনপদের অজপাড়া গাঁয়ে বেড়ে ওঠা শিল্পি মহনার। দরিদ্র পরিবারে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে বেড়ে ওঠা শিশুকন্যা মহনা। মনের অজান্তেই হৃদয়ের গহীনে মাঝে মাঝেই গেয়ে উঠতো নামি-দামি শিল্পীদের গান। শিশু বেলা কেটেছে মহনার ঢাকাইয়া পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সুযোগ পেলেই মহনার গান শুনতে চায় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, সহপাঠি ও ছাত্র-ছাত্রীরা। সেই ছোট বেলা থেকেই মহনার সুরের মূর্ছনায় অনেকেই অভিভুত হয়ে যেত। স্থানীয় সকলেই তাগিত দিতো মহনাকে কোন সঙ্গীত একাডেমীতে ভর্তি করবার। বাবা হতদরিদ্র তাই স্বাদ থাকলেও সাধ্য নেই সঙ্গীত একাডেমীতে ভর্তি করার। ছোট বোনের কণ্ঠে গান শুনে বড় বোন খুশি হয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়–য়া ছাত্রী মহনাকে ভর্তি করেন ডিমলা সঙ্গীত একাডেমিতে। সেখানেই দেখা মেলে ওস্তাদ শিল্পী সাইফুল ইসলামের। ওস্তাদ সাইফুল ইসলাম হাতে খড়ি দিয়ে সঙ্গীত তামিল দিতে থাকে মহনাকে। এরপর মধুর কন্ঠে যাদুর ছোয়ায় গান গেয়ে যায় মহনা। সে সময়ে তার কন্ঠে একটি এ্যালবাম বের করার উদ্যোগও নেন ওস্তাস সাইফুল ও তবলা বাদক রকি। সে সময়ে জমি ও একটি গরু বিক্রি করে বেশ কিছু টাকা দিতে হয় বাবা মোহাম্মদ আলী। কিন্তু বিভিন্ন কারনে আর একক এ্যালবাম করতে পারেনি তারা। এতে প্রায় সর্বশান্ত হয়ে পড়ে দরিদ্র কৃষক পিতা মোহাম্মদ আলী। কোন কিছুতেই গানের পিছু ছাড়েনি মহনা। হতাশ হয়ে পড়েনি সে। কখনও বাড়ীতে কখনওবা সঙ্গীত একাডেমীতে গানের সাধনা করেই চলেছে সে। ইতোমধ্যেই মহনা শিশু শিল্পী হিসেবে নাম কুড়িয়েছে অনকেটা। মহনার সুরেলা কণ্ঠে গান কানে ভাঁসলেই পথচারিরাও থেমে যায় পথেই। এভাবেই ধীরে ধীরে প্রাথমিক গন্ডি পেড়িয়ে ভার্ত হয়ে যায় নাউতারা আবিউন্নেছা দ্বি মূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানেই মহনা পড়াশুনা ও লেখাপড়ার পাশাপাশি চালিয়ে যায় গান। প্রতিটি ক্লাসেই ভালো ফলাফলের মধ্যে দিয়ে কৃতকার্য হতে থাকে শিল্পী মহনা। মেধাবী ছাত্রী মনি আক্তার মহনা উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের ভাটিয়াপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক মোহাম্মদ আলী ও মোমিনা বেগমের কন্যা। আবিউন্নেছা দ্বি মূখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকেই ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হয়ে নীলফামারীর ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রী মহা-বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে। উক্ত মহা-বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হরেনন্দ্র নাথ শীল ও রসায়ন বিভাগের প্রভাষক সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, মহনা প্রচন্ড মেধাবী ও বুদ্ধিমতিও বটে। সে সঙ্গীতে অনেক ভালো। মহনা এবারে উপজেলা পর্যায়ে তিনটি ইভেন্ট রবীন্দ্র , নজরুল ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। একই ভাবে সে জেলা পর্যায়ে প্রতিটি ইভেন্টে প্রথম স্থান দখল করে শ্রেষ্টত্ব অর্জন করে আমাদের সকলকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। পরবর্তীতে মহনা বিভাগীয় পর্যায়ে একই ফলাফল অর্জন করায় কলেজ কর্তৃপক্ষ আনন্দিত।
মহনার উত্তর উত্তর সাফল্যে কামনায় সার্বিক সহযোগীতা অব্যাহত রেখেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ জানান, প্রত্যাশা করছি মহনা উত্তরবঙ্গের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট হয়ে ফিরে আসবে। উজ্জল করবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বাবা-মা ও দেশবাসীর মুখ। তিনি আরো বলেন, এবারে ডিমলা ইসলামীয়া ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়টি শ্রেষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠিান হিসেবে সীকৃতি পেয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ট শ্রেণী শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন অত্র প্রতিষ্ঠানের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক আকতারুজ্জামান। অত্র প্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ট রোভার গ্রুপ লিডার ও শ্রেষ্ট রোভার শিক্ষক মোঃ দুলাল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন। কন্ঠ শিল্পী মহনা জানান, আমি বাড়ীতে নিয়োমিত কণ্ঠ সাধন করছি। হতদরিদ্র পিতার পক্ষে আমার জন্য সঙ্গীত শিক্ষক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। মহনা আরো বলে, আমি যখন উপজেলা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করি তখন বিভিন্ন সময়ে বিচারকগণ আমাকে বলেছিলো তোমার কন্ঠ অনেক ভালো তুমি চেষ্টা চালিয়ে যাও অনেক ভালো করতে পারবে। এবং ছোট খাটো ভূলগুলো আমাকে ধরিয়ে দিয়ে সঙ্গীতে আরো যতœশীল হওয়ার পরাপর্শ প্রদান করেন বিচারকগণ। আমার এই ক্ষুদ্র সাফল্যের জন্য আমার ওস্তাদ শিল্পী সাইফুল ইসলাম, তবলাবাদক রকি, আমার বড় বোন ময়না আক্তার ও আমার বাবা-মায়ের কাছে আমি চির ঋনি ও কৃতজ্ঞ। মহনা ভবিষতে একজন নামি ও গুনী শিল্পী হতে চায়। এ জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে সে। |